বাণিজ্য-বিনিয়োগ দুটোই চাই

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয়

আজকের দেশ ডেস্ক : কানেকটিভির সুযোগ নিয়ে চার বিলিয়ন মানুষের বিশাল বাজার ধরতে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা করতে ভারতীয় বড় বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের, বিশেষ করে ভারতীয় বড় বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা একই সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চাই। ইন্ডিয়ার বড় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে কলকারখানা স্থাপন করতে পারে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার (কানেকটিভিটি) সুবিধা নিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে পারে।


বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে নয়াদিল্লির আইসিটি মৌর্য হোটেলে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্বোধনী সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৌশলগত অবস্থানের কারণে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমে ভারত, উত্তরে চীন ও পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাঝখানে বাংলাদেশ চার বিলিয়ন মানুষের বিশাল একটা বাজার।

বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বিনিয়োগ নীতি সবচেয়ে উদার। বৈদেশিক বিনিয়োগ সুরক্ষায় আইন, উদার ট্যাক্স হলিডে, যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড়, প্রস্থান করার সময় লভ্যাংশ এবং মূলধনের সম্পূর্ণ প্রত্যাবাসন সুযোগসহ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বহু সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের লাগাতার প্রবৃদ্ধি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আস্থা বৃদ্ধির প্রতিফলন।

নয়াদিল্লীর হোটেল তাজ প্যালেসে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনোমিক সামিটে বাংলাদেশের উপর কৌশলগত আলোচনাকালে বক্তব্য দেন তিনি।

এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারী বিশেষ করে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা, হাল্কা প্রকৌশল শিল্প, ইলেক্ট্রনিক্স শিল্প, অটোমোটিভ শিল্প, কৃত্তিম বৃদ্ধিমত্তা শিল্পের মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ করার সময়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি স্বাধীন ও উদার বিনিয়োগের পরিবেশ বিরাজ করছে। বিনিয়াগ বান্ধব বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরদের জন্য আইনী সুরক্ষা, উদার রাজস্ব ব্যবস্থা, মেশিনপত্র আমদানীর ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়, আনরেস্ট্রিকটেড এক্সিট পলিসি, সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ও পুঁজি নিয়ে চলে যাবার সুবিধাসহ নানাবিধ সুবিধা রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নিরবিচ্ছিন্ন সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছি। এদের মধ্যে ১২টি অঞ্চল ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। দুটি অঞ্চলকে ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবণী প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্ক প্রস্তুত করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশর এই ব্যাপক উন্নয়নের জন্য সামাজিক মূল্যবোধ ও বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রশংসা করে বলেন, ‘অনেকেই বাংলাদেশকে ৩ কোটি মধ্য ও উচ্চবিত্ত মানুষের একটি বাজার’ ও ‘অলৌকিক উন্নয়নের’ হিসেব দেখে থাকেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের প্রধান শক্তি হচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধ ও বাংলাদেশের প্রতি মানুষের আস্থা। সাম্যতা, সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলার আকাঙ্খার পাশাপাশি আমাদের নেতৃত্বের প্রতি তাদের আস্থা।’

৪০টি দেশের ৮শ’ প্রতিনিধি দুই দিনের এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। আগামীকাল সম্মেলনটি শেষ হবে। সমাপনী অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা দিবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক এবং ভারতীয় ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্থান হিসাবে নজর কাড়ার মত যোগ্যতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, আমরা এই উপ-অঞ্চলের জন্য একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র হতে পারি। আমাদের নিজস্ব ১৬২ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাইরেও বাংলাদেশ প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষের একটি ভূখন্ডের সম্মিলিত বাজারের সাথে সংযুক্ত হতে পারে।

তিনি গত বছরের এইসএসবিসি’র পূর্বাভাসের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে ২৬ তম সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হবে। দু’টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, এর একটি হচ্ছে আমাদের উন্মুক্ত সমাজ, ধর্মীয় সম্প্রীতি, উদার মূল্যবোধ, ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি। অপরটি হলো আমাদের মোট জনগোষ্ঠির দুই তৃতীয়াংশ তরুণ। এদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ বছরের নিচে। তারা দক্ষতা অজর্ন করছে, তারা প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন, তারা প্রতিযোগিতামূলক কাজে যুক্ত হতে প্রস্তুত।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আত্মবিশ্বাসী জনগণ, সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং শাসনপ্রক্রিয়ায় উন্নয়ন যাত্রায় আমরা অব্যাহত ভাবে শিখছি। তিনি বলেন, একটি স্থিতিশিল ও মানবিক রাষ্ট্র বাংলাদেশের নেতৃত্ব খুবই সংবেদনশীল এবং দায়িত্বশীল, সেই সঙ্গে দেশটির রয়েছে দৃঢ় সামষ্টিক অর্থনৈতিক বুনিয়াদ, সম্ভানাময় ও মুক্ত অর্থনীতি যা একটি শান্তিপূর্ণ ও অগ্রসর জাতি উদাহরণ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধা দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশ এখন জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি উন্নয়নশীল দেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু’র অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। তিনি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির উল্লেখ করে বলেন, অন্যান্য অনেক দেশের মতই আমরাও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি, তবে আমাদের জানা আছে কিভাবে এই চ্যালেঞ্জ সুবিধায় রূপান্তরিত করতে হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছরে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবোর্চ্চ ৮ দশমিক ১ শতাংশের রেকর্ড করেছে। আমরা দুই ডিজিট প্রবৃদ্ধি অজর্নের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০০৯ সালের পর থেকে ১৮৮ শতাংশ বেড়েছে। আমাদের মাথাপিচু আয় হয়েছে প্রায় ২০০০ মাকির্ন ডলার।

বাংলাদেশকে একটি দ্রুতবর্ধনশীল উচ্চ মূল্য, জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ, তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ, হিসাবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গত বছরে কোরিয়ায় ১২টি শিল্প রোবট রফতানি করেছি। বাংলাদেশে তৈরি চারটি জাহাজ ভারতে আসছে।

তিনি বলেন, ভারতের রিলায়েন্স কোম্পানি সম্প্রতি বাংলাদেশে তৈরি বিপুল সংখ্যক রেফ্রিজারেটর আমদানি করেছে। বাংলাদেশে ৬ লাখ আইটি ফ্রিলান্সার রয়েছে। সর্বাধিক সংখ্যক লোক ফ্রিলান্সিং করছে।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের কৃষি সম্পর্কে বলেন, আমাদের কৃষি এখন আর অন্যের ওপর নির্ভরশীল নয়, আমাদের কৃষি এখন পুরোপুরি স্বাবলম্বি। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন ৪র্থ বৃহৎ দেশ, পাটে দ্বিতীয়, আমে ৪র্থ, শাকসবজি উৎপাদনে ৫ম, এবং অভ্যন্তরিণ মাছ চাষে ৪র্থ। আমরা প্রধান শস্য ও ফলের জিন কোড করছি এবং এ ব্যাপারে অগ্রসর হচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের পর থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করার উল্লেখ করে আমরা ২০০৯ সালের পর দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছি। তৃণমূল পযার্য়ে শত ভাগ লোক আইসিটি সুবিধা পাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ৫ম সর্ববৃহত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেশ। আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা ক্যাশলেস সোসাইটির দেশের দিতে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে। আমাদের মোট জনগোষ্টির ৪০ শতাংশ শহরে বাস করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট সুবিধা ৪০ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। ডব্লিউইএফ’র প্রেসিডেন্ট বোর্জ ব্রান্ডসহ সংস্থার নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছসিত প্রশংসা করেন। তারা দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে নেতৃত্বের রোল মডেল হিসাবে বর্ণনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সেমিনারে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে একটি পরিবেশ বান্ধব সরকার রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *