সুৃমব হোসেন, (যশোর) ঃ
“দক্ষ পুলিশ সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ” এই স্লোগানে যশোরের শার্শা ও বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের যৌথ আয়োজনে বেনাপোল পোর্ট থানা প্রাঙ্গণে সর্বস্তরের জনগণের বিপুল উপস্থিতিতে ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোর জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বিপিএম (বার), পিপিএম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত, পবিত্র গীতা ও পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়।
অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার উপস্থিত সর্বসাধারণের সাথে উক্ত দুই থানা এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মুক্ত-আলোচনা করেন।
এ সময় তিনি উক্ত থানা এলাকায় সর্বসাধারণকে কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় কিনা, আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে কারো কোন অভিযোগ আছে কিনা, কাউকে অযথা পুলিশ হয়রানির শিকার হতে হয় কিনা, মাদক, চাঁদাবাজ, দুষ্কৃতকারীদের উৎপাত আছে কিনা, কিশোর গ্যাং, বাল্য বিবাহ ও কোন প্রকার সামজিক বিশৃঙ্খলা আছে কিনা? তা নিয়েও মুক্ত আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনসাধারণ তাদের মুক্ত মতামত ব্যক্ত করেন এবং তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরলে পুলিশ সুপার অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শোনেন ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। পুলিশ সুপার বলেন, এখন আর থানা জনগণের হয়রানির স্থল নয়, এখন থানা হয়েছে ভুক্তভোগির প্রথম ভরসা স্থল। আগের পুলিশ আর বর্তমান পুলিশ অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
পুলিশি সেবার মান অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক গুন ভালো। পুলিশ জনতা এখন একত্রে কাজ করে। পুলিশ কে এখন কেউ ভয়ের চোখে দেখেনা, পুলিশ এখন সত্যিকার অর্থেই জনগণের পুলিশে রুপান্তরিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন কোন ভাবেই থানায় আগত ব্যক্তির সাথে অসৎ বা খারাপ আচরণ করার সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, এই শার্শা ও বেনাপোল হবে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত। এখানে থাকবে না কোন প্রকার হয়রানি, মানুষ শান্তিতে, নিরাপদের সাথে পারস্পারিক সম্প্রীতি রেখে বসবাস করবে। জেলা পুলিশ যশোর এখানকার তথা জেলার সার্বিক আইন-শঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বদা তৎপর রয়েছে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমাদের পোষাকধারী পুলিশের পাশা-পাশি বিপুল পরিমান সাদা পোষাকের পুলিশও নিয়োজিত রয়েছে, আমরা সম্পূর্ণ জেলাকে তিন স্তরের নিরাপত্তায় সাজিয়েছি সুতরাং কোন প্রকার নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে, এব্যাপারে কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বরাবরের মত বলেন, এখানে গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে কোন অবস্থাতেই চাঁদাবাজি করা যাবে না, একই সাথে মাদক কিংবা চাঁদাবাজির সাথে কোন আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত কোন সদস্য জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রদান করেন।
তিনি বলেন, যশোর জেলায় কোন সন্ত্রাস, মাদক, অস্ত্রের গডফাদার থাকবে না, এরা আইনের চোখে অপরাধী সুতরাং এদের সাথে আমাদের কোন সখ্যতা থাকতে পারে না।
যশোর পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আইনের সুশাসন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই ওপেন হাউস ডে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম আর তার লক্ষ্যেই আজকের এই অনুষ্ঠান।
এখানে সকল স্তরের মানুষ নির্ভয়ে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন, এই মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠান আমাদের প্রতিটা থানার সার্বিক আয়োজনেই ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।এছাড়াও কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে পুলিশি সেবাটা একেবারে প্রত্যন্ত এলাকার জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
মাদকের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ তথা বাংলাদেশ পুলিশ একেবারে শূণ্য সহিষ্ণু নীতিতে কাজ করছে। আমরা মাদকের সাথে জড়িত কাউকেই বিন্দু মাত্র ছাড় দেব না। সে যত বড় ক্ষমতাশীল ব্যক্তি হোক না কেন। মাদকের সাথে তিন স্তরের ব্যক্তি জড়িত, প্রথম হলো মাদকের গডফাদার, দ্বিতীয় হলো মাদক কারবারি এবং শেষটা হলো মাদক সেবী। আইনের চোখে এরা সবাই অপরাধী সুতরাং কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রদান করেন।
তিনি বলেন, কিশোর অপরাধের নামে কোন প্রকার অন্যায় সহ্য করা হবেনা, জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে যতটা কঠোর হতে হয় তার সম্পূর্ণটাই প্রয়োগ করবে জেলা পুলিশ সুতরাং ভালো হওয়ার কোন বিকল্প নেই। এই যশোরের কোন স্কুল প্রতিষ্ঠান কিংবা সমগ্র জেলার কোথাও ইভটিজিং হবেনা এর কোন ব্যক্তই হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশ সুপার উপস্থিত সকলকে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের সময় জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ ইতোমধ্যেই সমগ্র জেলাকে নিরাপত্তার চাদরে সাজানো হয়েছে বলে জানান।
পূজায় কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে প্রায় প্রতিটি মন্ডপকেই সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। এখানেও আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংক্ষক জনবল নিয়োজিত থাকবে।
বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করতে পোষাকের পাশা-পাশি থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি, সেক্ষেত্রে কাজ করবে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা টিমের সদস্য।সুতরাং এখানে কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার বিন্দুমাত্র অপচেষ্টা করবেন না। পরিশেষে তিনি জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও জনতা হাতে-হাত রেখে একত্রে কাজ করে যাওয়ার আহ্ববান করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জুয়েল ইমরান, সহকারী পুলিশ সুপার, “নাভারণ” সার্কেল, যশোর। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কামাল হোসেন ভূঁইয়া, অফিসার ইনচার্জ, বেনাপোল পোর্ট থানা, যশোর। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মোঃ মামুন খান, অফিসার ইনচার্জ, শার্শা থানা, যশোর।
এসময় উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিচালক, বেনাপোল স্থলবন্দর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা আওয়ামী-লীগের সভাপতি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, উপজেলা চেয়ারম্যান, সভাপতি বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট, কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের নেতৃবন্দ, উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে আগত বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ।
