নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বিলাপ করতে করতে জাহাংগীরের মা গোলেনুর বেগম বলছিলেন, ‘মোর যাদু চাকরি করি আর বাড়িত আসবে না। রোজার ঈদে বাড়িত আসিবার কথা ছিল। তার আগেই লাশ হইলো। এলা কষ্ট মুই কেমন করি সইমু। বিয়া হবার কয়খান মাস হইলো, তাতে মোর বাবাটাক আল্লাহ কাড়ি নিলো। মোর বাবাটাকে আইনা দাও।’
জাহাংগীরের বাকরুদ্ধ বাবা বিছানায় কাতর হয়ে পড়ে আছেন। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছিল তার। মৃত্যুর খবর পাওয়ার অনেক সময় কেটে গেলেও কারও সঙ্গে কোনও কথা বলেননি লতিফুর রহমান।
স্ত্রী শিমু আক্তার স্বামীর ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছেন। মাঝেমধ্যে চিৎকার দিয়ে কাঁদছেন। কেঁদে কেঁদে বারবার বলছিলেন, ‘বলেছিল এবার ঈদে বাড়ি আসবে, আর আইলো না। লাশ হয়ে ফিরলো।’
জাহাংগীর আলমের বড় ভাই সেনাসদস্য আবুজার রহমান বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় জাহাঙ্গীর। গত বছর জাহাঙ্গীর বাড়িতে এসে বিয়ে করেছিল। এর দুমাস পর মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে যাওয়ার আদেশ আসে তার। ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের পশ্চিম সেক্টরের বোয়ার এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নের (ব্যানব্যাট-৮) সঙ্গে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল জাহাংগীর। জাহাঙ্গীরের আরেক ভাইয়ের দাবি তার লাশ যেন দ্রুত দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়। শেষবার ভায়ের মুখটি দেখতে চান পরিবার।
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপবালিকের স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাত দেড়টা) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি বহর টহল থেকে ফেরার সময় পথে সন্ত্রাসীদের পেতে রাখা ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (IED) বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে বহরের প্রথম গাড়িটি আক্রান্ত হয়, সেটি ছিটকে ১৫ ফুট দূরে গিয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জন মারান্তকভাবে আহত হন।
দূর্গম এলাকা থেকে হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে ধীরে ধীরে ৩ জন সেনা সদস্যই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে মৃত্যুর সংবাদ এক এক করে তিন জনের পরিবারের কাছে জানিয়ে দেয়া হয়।