বৈধ বারে ডিএনসি কর্মকর্তাকে জিম্মি করে ডিবির ‘অবৈধ’ অভিযান পরিচালনার অভিযোগ

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বৈধ বারে ডিএনসি কর্মকর্তাকে জিম্মি করে ডিবির ‘অবৈধ’ অভিযান পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে, অবশ্য ডিবি প্রধানের দাবি ডিবি চাইলে যে কোন যায়গায় অভিযান পরিচালনা করতে পারে ডিবি। এই অভিযান পরিচালনা করা কে কেন্দ্র করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর মধ্যে চলছে স্নায়ু যুদ্ধ। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সব্রাস্ট্র মন্ত্রণালয়ধীন দুটি প্রতিষ্ঠান পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলে বিতর্ক সৃষ্টি করছে। এবিষয়ে সব্রাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জরুরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিষয়টির একটা সুরাহা হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।

জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরার গরীবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউয়ের একটি বারে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক ইন্সপেক্টরকে জিম্মি করে অভিযান পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।

ডিএনসি বলছে, ওই বারের বৈধ লাইসেন্স রয়েছে। ডিবি পুলিশ যেসব মদ-বিয়ার উদ্ধার করেছে, লাইসেন্স অনুযায়ী তারা সেসব সংরক্ষণ করতে পারে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরার লেকভিউ রেস্টুরেন্ট নামের ওই বারে অভিযান চালায় ডিবি।

প্রথমে তারা ডিএনসি ইন্সপেক্টরকে একটি কক্ষে জিম্মি করে রেখে। তার মোবাইল ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়। ‘ওই বারে ডিবি পুলিশের অভিযান চালানো শুধু আইনবহির্ভূত নয়, অপেশাদার আচরণও’— মনে করছেন ডিএনসির কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, রাজধানীর উত্তরার গরীবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউয়ের যে বারে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল সেটির নাম ‘লেকভিউ রেস্টুরেন্ট’। যদিও ডিবি অভিযানের পর জানিয়েছিল ‘কিংফিশার’। ডিএনসি বলছে, সেখানে কিংফিশার নামে রেস্তোরাঁ আছে তবে, সেটি বার নয়।

ডিবির অভিযান পরিচালনা কালে জিম্মি এবং মোবাইল কেড়ে নিয়ে হেনেস্তার শিকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) উত্তরা জোনের ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান আজকের দেশ ডটকম কে বলেন, ‘ওই বারের (লেকভিউ রেস্তোরাঁ) লাইসেন্স আছে। গত মাসেও টিম পরিদর্শন করেছে। তাদের কাগজপত্র ঠিক আছে। ডিবির অভিযানের সময় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি বার ভবনে গেলে ডিবির সদস্যরা আমার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। আমাকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।’
‘সরকারি গাড়ি নিয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ডিবি পুলিশের দ্বারা হেনস্তার বিষয়টি সিনিয়র কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা ঘটনার বিবরণ শুনে লিখিতভাবে দিতে বলেছেন। আমি আজ লিখিত আকারে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জানিয়েছি।’

ওই ঘটনায় ডিএনসি উত্তরের কর্মকর্তারা আজকের দেশ ডটকম কে জানিয়েছেন, বৈধ বারে অভিযান চালাতে হলে ডিএনসির অনুমতি নিতে হয়। ডিবি পুলিশ সেটি করেনি। উল্টো ডিএনসি ইন্সপেক্টরকে জিম্মি করে ডিবি পুলিশ সেখানে অভিযান পরিচালনা করেছে। এটা শুধু অবৈধ নয়, অপেশাদার আচরণও।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর ২৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ পুলিশ, কাস্টমস, বিজিবি, কোস্টগার্ড লাইসেন্স করা প্রতিষ্ঠান ছাড়া যেকোনো মাদকের বিষয়ে অভিযান চালাতে পারে। তবে, আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স নেওয়া প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালাতে পারবে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিএনসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের দেশ ডটকম কে বলেন, উত্তরার গরীবে নেওয়াজের ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় কিংফিশার রেস্তোরাঁ অবস্থিত। লাইসেন্স অনুযায়ী ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় লেকভিউ রেস্তোরাঁ ও বার।

অভিযানের পর ডিবি পুলিশ যে মামলা করেছে সেখানে জব্দ তালিকায় ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলা। সপ্তম তলা নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বার হিসেবে বৈধ লাইসেন্সধারী লেকভিউ রেস্তরাঁর পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় অভিযান চালাতে হলে অবশ্যই ডিএনসির কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সেটি করেনি ডিবি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান আজকের দেশ ডটকম কে বলেন, ‘বৈধ বারে অভিযান চালাতে হলে আমাদের জানানোর নিয়ম। রাতে আমাকে ফোন করা হয়। আমি বলেছি ডিজি কে অবহিত করার জন্য। কিন্তু তারা সেটা করেননি। সেখানে তারা অনুমতি না নিয়েই অভিযান চালিয়েছেন। যা পুরোপুরি আইনের ব্যত্যয়।’
ডিএনসি-উত্তরার ইন্সপেক্টরকে জিম্মি করে মোবাইল কেড়ে নেওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। ইন্সপেক্টরকে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে বলেছি। তার অভিযোগ পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার একটি বারের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার আজকের দেশ ডটকম কে বলেন, ডিবি পুলিশ, থানা পুলিশ, কাস্টমস বা র‌্যাব, বিজিবি যে কেউ অভিযানে যেতে পারেন মাদক উদ্ধারে। তবে, লাইসেন্সধারী বারে যেতে হলে ডিএনসির অনুমতি নিতে হবে। এটাই নিয়ম। সেখানে ডিবি পুলিশ যদি ডিএনসিকে না জানিয়ে অভিযান, জব্দ কিংবা কাউকে আটক করে থাকে তবে তা অবশ্যই আইনের ব্যত্যয়।

এদিকে, শুধু বার নয়, যেকোনো জায়গায় ডিবি পুলিশ অভিযান চালাতে পারে বলে দাবি করেছেন ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

রোববার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, কারা তল্লাশি করবেন বা করবেন না। অবৈধ কোনো জায়গায় অসামাজিক কার্যকলাপ, অবৈধভাবে মদ বিক্রি এবং যেকোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশ যেকোনো জায়গায় অভিযান বা তল্লাশি চালাতে পারে। আমরা সবসময় এটা করে আসছি, আমরা বড় বড় চালান ধরেছি। এছাড়া অবৈধ বারগুলোতে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের গরীবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউ রোডের লেকভিউ রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ।
অভিযানে প্রায় ৫০০ দামি বিদেশি মদ এবং প্রায় ছয় হাজার ক্যান বিয়ার জব্দ করা হয়। ৩৫ জনকে গ্রেপ্তারের পর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করে ডিবি পুলিশ।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *