নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ভেজাল ঔষধ তৈরির দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত অনির্বান মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার কথিত ডা. সেলিম মো: শাহজাহান শিল্প সমিতির সভাপতির নির্বাচন করছেন,বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, অনির্বান মেডিসিনাল ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার সেলিম মো: শাহজাহান ২২ অক্টোবর-২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ আয়ূর্বেদ ঔষধ শিল্প সমিতির নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। তার মত ভেজাল ঔষধের কারবারি সমিতির নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় শিল্প সংশ্লিষ্টগণ বিস্মিত হয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের দাবি তার মত ভেজাল ঔষধ ব্যবসায়ী শিল্প সমিতির নেতৃত্ব দিলে ভেজাল কারবার আরো বৃদ্ধি পাবে।তাকে প্রত্যাখ্যান ও প্রত্যাহার এখন সময়ের দাবি বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন।
জানাগেছে, ভেজাল, নিম্নমানের, মেয়াদউত্তীর্ন, ফর্মূলারী বহির্ভূত কেমিকেল উপাদানে ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরনের দায়ে আয়ূর্বেদিক ঔষধ কোম্পানী অনির্বান মেডিসিনাল ইন্ডাষ্ট্রিজ এর কারখানা সিলগালা করে দিয়েছিল র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। গত ১৭ জুন ২০১৯ তারিখে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত জুরাইনে কোম্পানীর কারখানা, ৯টি গোডাউন সিলগালা করে দিয়েছিল। উক্ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন র্যাব ফোর্সেস ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দপ্তরের নির্বাহী মাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম। পাশাপাশি ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানা ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ৬ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডও প্রদান করা হয়। র্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা কালে কারখানা ও গোডাউনে পোকা মাকড়ের বাসা বাধাঁ নাম মাত্র হার্বসের স্তুপ, নিষিদ্ধ কেমিকেলের সন্ধান পায়।কারখানার পরিবেশও অত্যন্ত নোংরা। ভেজাল নিম্নমানের ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত করনের অভিযোগে এর পূর্বেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনির্বানের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল।
কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে চালু করেছে।এবারও অসদোপায় অবলম্বনে কারখানা চালু করেছে বলে জানা গেছে। সিলগালাকৃত কোম্পানীর ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ থাকা কালেও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গোপনে ঔষধ বাজারজাত করেছিল। ১০ জুলাই-২০১৯ তারিখ থেকে টানা কয়েক দিন যাত্রাবাড়িতে চাইনিজ হোটেলে নিয়মিত বিপণন প্রতিনিধি সম্মেলন করেছিলেন।
সূত্রমতে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ফর্মূলা বহির্ভূত কালার, ফ্লেভার ও কেমিকেল ব্যবহার করে ঔষধ উৎপাদনের অভিযোগ অনির্বান এর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই।কিন্তু অসৎ উপায়ে উপার্জিত অর্থের দাপটে সব কিছু ম্যানেজ করে অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।এই কোম্পানী প্রায় ১০৩ টি ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। অনির্বানের যৌনশক্তি বর্ধক ঔষধ সিলগোল্ড , উইনার, এসটানল ও টার্গেট বিক্রি করেই মূলত প্রচুর অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছে। উক্ত ক্যাপসুল তিনটি তে ফর্মূলা বহির্ভূত কেমিকেল সিলডেনাফিল সাইট্রেড ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় তা প্রমানিত। সিলগোল্ড সহ অনির্বানের সকল ঔষধ বিক্রয় করা হয় গ্রাম ও চরাঞ্চলে। অশিক্ষিত অসচেতন মানুষ তাদের ভেজাল ঔষধ বিক্রির টার্গেট। অনির্বানের মালিক সেলিম মো: শাহজাহান এই ভেজাল ঔষধের কারবার করে শুন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন।
এখন তিনি অনির্বান ছাড়াও পরোক্ষ মালিকানায় তার এক ভাই শাখাওয়াত হোসেনের পরিচালনায় এস এস ল্যাবরেটরী (ইউনানী) ও অপর ভাই শাহ মোয়াজ্জেমের পরিচালনায় প্যারিলা ল্যাবরেটরিজ (আয়ুর্বেদিক) এর কার্য়ক্রম চালাচ্ছেন। উক্ত কোম্পানী দু’টির বিরুদ্ধেও ভেজাল ঔষধ উৎপাদনের অভিযোগ আছে।যে কারনে এ দুটি কোম্পানীরও লাইসেন্স বাতিল করার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ভেজাল ঔষধ বিক্রয় করে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে ঢাকার জুরাইনে একাধিক বাড়ির মালিক।কেরানীগঞ্জ বিসিক শিল্প এলাকায় প্লট ক্রয় করে অনির্বানের কারখানা গড়ে তুলেছেন। নামের সাথে ডা. টাইটেল যোগ করেন। তিনি পাস করা কোন এমবিবিএস ডাক্তার, হাকিম বা কবিরাজ নয়। তার পাসপোর্টে নামের সাথে ডা. কি ভাবে যুক্ত হলো , সনদ কে দিল এটা সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন। আবার ইদানীং নামের সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগ করেন। মুক্তিযুদ্ধ কালে তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জনস্বার্থে কেবল অনির্বান নয় তার পরোক্ষ মালিকানাধীন প্যারিলা ও এস এস ল্যাারবেটরীজের লাইসেন্স বাতিল ও জনস্বাস্থ ক্ষতি করে উপার্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জনকল্যানে ব্যয় করা উচিত বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।