রাজধানীর টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার, বিপুল পরিমান চোরাই মোবাইল সেট উদ্ধার

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ রাজধানীর উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর ও গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই চক্রের তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা হতে অন্যান্য জেলা অভিমুখে যাতায়াতকারীদের এক বিশাল অংশ আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা দিয়ে ভ্রমন করার সুযোগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র নিরীহ পথচারীদের সর্বস্ব ছিনতাই করছে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে অস্ত্রাঘাত করে, প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল, গাড়ী, টাকা পয়সা, মোবাইল, স্বর্ণালংকার ইত্যাদি ছিনতাই করে জন জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে।

বিষয়টি র‌্যাবের দৃষ্টিগোচর হলে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং বর্ণিত এলাকায় ছিনতাই এর সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

এক পর্যায়ে গত ৫ অক্টোবর, র‌্যাব-১ কর্তৃক গাজীপুর টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন ঢাকা ময়মনসিংহ রোড এলাকা হতে ছিনতাইকারী চক্রের ৭ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গি স্টেশন রোড পর্যন্ত ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মাষ্টারমাইন্ড শরীফ হোসেন (২২) ও তার সহযোগীদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং ছিনতাইকারী চক্রকে গ্রেফতারে আরো তৎপর হয়।

এরই ধারাবাহিকতায়, গতকাল ২০ অক্টোবর, আনুমানিক রাত ১০ টায় র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী এলাকায় ছিনতাই বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মূলহোতা মোঃ শরীফ হোসেন (২২), পিতা- মোঃ বাবুল মিয়া, থানা- বাইলাকান্দি, জেলা- রাজবাড়ি এবং তার সহযোগী আব্দুল্লাহ বাবু (২৩), পিতা- মৃত সামাদ আলী, থানা- গোপালপুর, জেলা-টাঙ্গাইল, মোঃ শ্যামল হোসেন @রাব্বি (২৩), পিতা-মোঃ ফিরোজ হোসেন, থানা-নবাবগঞ্জ, জেলাঃ ঢাকা’কে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ছিনতাইকৃত ১ টি মোটর সাইকেল, ১০ টি মোবাইল ফোন, ১ টি হাত ঘড়ি এবং নগদ ২৫,৬৩৫ টাকা উদ্ধার করা হয়।

পরবর্তীতে গ্রেফতার কৃত দেয়া তথ্যমতে শনিবার ২১ অক্টোবর, আনুমানিক ৫ টা ৪৫ মিনিটের সময় র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাই চক্রের অপর সক্রিয় সদস্য নাছির রাজ (৩০), পিতা- মোঃ বাবুল মৃধা, থানা- টঙ্গী পূর্ব, জেলা- গাজীপুর,ও সাজেদুল আলম @শাওন (২১), পিতা- মৃত আনোয়ার হোসেন, থানা- সোনাইমুড়ি, জেলা- নোয়াখালীদের’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এসময় আসামীদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ৪৯ টি মোবাইল,২ টি সিপিউ,২ টি মনিটর,২ টি মাউস,২ টি কি-বোর্ড, ২ টি ক্যাবল, ১ টি সিসি ক্যামেরা, ১ টি ডিভিআর, ১ টি চার্জার, ১ টি হাত ঘড়ি,২ টি ভিসা কার্ড এবং নগদ ৩,৭৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

শরীফ হোসেন (২২) এ চক্রের অন্যতম মূলহোতা ও মাষ্টারমাইন্ড।
সে উত্তরা আজমপুর হতে আব্দুল্লাপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে টঙ্গি স্টেশন রোড পর্যন্ত সড়কের ছিনতাইকারী চক্রের দলনেতা। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছিচকে চোর ও ছিনতাইকারী চক্র চলন্ত গাড়ি হতে থাবা দিয়ে কিংবা অন্ধকারে নিরীহ পথচারীদের জিম্মি করে যে সকল মোবাইল ফোন ছিনতাই করতো সে সেই মোবাইলগুলো তার কাছে জমা করত।

সে স্বল্পমূল্যে এ সকল মোবাইল কিনে ধৃত অপর দুই আসামী আব্দুল্লাহ বাবু ও শ্যামলের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করত। সে গত ০৫ বছর ধরে এ কাজের সাথে জড়িত। একদিনে শরীফ সর্বোচ্চ ৫০ টি পর্যন্ত মোবাইল ফোন সংগ্রহ করার রেকর্ড করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা য়ায়।

গ্রেফতার কৃত আব্দুল্লাহ বাবু (২৩) ও শ্যামল (২৩) ছিনতাইকৃত মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল বিক্রয়ের কাজে জড়িত। তারা গ্রেফতার কৃত শরীফ এবং গত ৫ অক্টোবর, র‌্যাব-১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত আরেকটি ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম হোতা জয় (২২) এর কাছ থেকে চোরাইকৃত মোবাইল সংগ্রহ করে বিক্রয়ের কাজ করত। তারা বিভিন্ন দোকান, অনলাইন প্লাটফর্ম ও বিভিন্ন জনের কাছে খুচরা হিসেবে ও এসব মোবাইল বিক্রি করত। তারা ছিনতাইকৃত মোবাইল বাজারমূল্যের চাইতে প্রায় অর্ধেকেরও কম মূল্যে বিক্রি করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করত।

আসামী নাছির (৩০) ও শাওন (২৪) মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার। টঙ্গি বাজারে নাছিরের একটি মোবাইল মেরামতের দোকান রয়েছে। সে উক্ত দোকানে বৈধ ব্যবসার আড়ালে চোরাই মোবাইল এর লক খোলা ও ওগঊও পরিবর্তনের কাজ করে থাকে। সে ৩ বছর যাবৎ নিজস্ব দোকানে ব্যবসা করে আসছে।
নিজের দোকানে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে নাছির অন্য একটি দোকানের কর্মচারী ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। শাওন (২১) একটি মোবাইল মেরামত দোকানের কর্মচারী।

সে ৫০০/১০০০ টাকার বিনিময়ে ছিনতাইকৃত মোবাইলের লক খোলা এবং IMEI পরিবর্তনের কাজ করত। সে বিগত ৩ বছর যাবৎ এ কাজ করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের অন্যতম মূলহোতা মোঃ শরীফ হোসেন (২২), তার সহযোগী ধৃত ০৪ জনসহ চক্রের প্রতিটি সদস্য বর্ণিত এলাকায় তার নির্দেশে ছিনতাইয়ের মালামাল বিক্রির কাজ করে থাকে। তারা প্রত্যেকে বৈধ পেশার আড়ালে ছিনতাইকারী চক্রের মদদাতা ও আশ্রয়দা। গ্রেফতার কৃত ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *