মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ময়মनসিংহ জেলা কার্যলয়ে মাদক বিরোধী বিশেষ এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

Uncategorized জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গত বৃহস্পতিবার ২৭ অক্টোবর মাদকের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা (কম্প্রেসিভ একশান প্ল্যান) প্রণয়নে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার স্মৃতি মিলনায়তন, জেলা পরিষদ, ময়মনসিংহে এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ময়মনসিংহ এই সমন্বিত কর্মশালার আয়োজন করে।

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ক এ কর্মশালায় ময়মনসিংহ জেলার ১৩ (তের) টি উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার চেয়ারম্যান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, থানা অফিসার ইনচার্জ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ জেলা পর্যায়ের ৩০ জন অফিস প্রধান অংশগ্রহণ করেন।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস, বিভাগীয় কমিশনার, ময়মনসিংহ বিভাগ ময়মনসিংহ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে দেবদাস ভট্টাচার্য্য বিপিএম, ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ, ময়মনসিংহ রেঞ্জ, মামা কৃষ্ণ পিপিএ পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ পুলিশ, ময়মনসিংহ, ডাঃ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সিভিল সার্জন, ময়মনসিংহ এবং এ. কে. এম শওকত ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়, ময়মনসিংহ উপস্থিত ছিলেন।

কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক পাওয়ার পয়েন্ট (মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়, ময়মনসিংহ এর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম।
কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( ভূমি) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব স্থাপনা)।

কর্মশালার প্রধান অতিথি ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস তাঁর বক্তৃতায় বলেন, মানক নির্মূলে সচেতনতা যেমন বাড়াতে হবে তেমনি মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালাতে হবে। বর্তমানে যুব সমাজের মধ্যে মানকের দুর্বিসহ ছোবল চলছে। যুব সমাজ সম্পদে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে মাননী প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং যারা ব্যক্তিস্বার্থে মাদক নামক এই বিষ সমাজের হাতে তুলে দিচ্ছেন তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সাথে মাদকের বিরুদ্ধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ উপহার দিতে চাই, তাহলে মাদক পরিহার করার কোন বিকল্প নেই।

বিশেষ অতিথি দেবদাস ভট্টাচার্য বিপিএম, ডিআইজি, বাংলাদেশ পুলিশ, ময়মনসিংহ রেঞ্জ বলেন, মাদক দ্বারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ। আমাদের যে জনসংখ্যা তার অর্ধেকই হচ্ছে ১৫-৪০ বছর এর মধ্যে যারা একটি দেশের চালিকা শক্তি। ২০০১ সালের মধ্যে আমরা যে উন্নত রাষ্ট্র তৈরি করতে চাই তার জন্য আমাদের দরকার দক্ষ জনশক্তি যার একটি বড় অংশ মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নিয়ে কাজ করছি। এই জন্য, মাদক নির্মূলে সচেতনতা যেমন বাড়াতে হবে তেমনি মানক কারবারীদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালাতে হবে। যে সকল জায়গায় মাদকের ঝুঁকি বেশি সেসব আর মানকল্পক নিয়রি পুলিশসহ অন্যান্য সংখ্য কাজ করছে।
এত কিছুর পরও মাদকের প্রতি আসকি কমছে না বরং তা বেড়েই চলেছে। মাদক নির্মূলে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বিশেষ অতিথি এ. কে. এম শওকত ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক, বিভাগীয় কার্যাল ময়মনসিংহ তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আপনারা জানেন যে বাংলাদেশে কোন মাদকদব্য প্রস্তুত হয় না। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার থেকে ইয়াবা ও ভারত থেকে ফেনসিডিল আসে। বর্তমানে তরুণ সমাজকে নষ্ট করছে সর্বগ্রাসী নেশা ইয়াবা। ২০৪১ সালে যে উতে বাংলাদেশ পড়ার স্বপ্ন দেখছি তার সবচেয়ে বড় বাধা মাদক। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পদ্ধতিতে মাদক পাচার করছে। রূপকল্প ৪১ বাস্তবায়নের জন্য দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে প্রয়োজন উন্নত, শিক্ষিত ও দক্ষ জাতি। কিন্তু সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ আমাদের যুব সমাজের হাতে তুলে দিচ্ছে মাদক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করছেন।

সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে মাদকের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। মাদক নির্মূলে আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তার উপর ভিত্তি করেই সমর্থিত কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৬৪ টি জেলায় কর্মশালা হচ্ছে।

সমর্থিত কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে চাহিদা হ্রাস, সরবরাহ হ্রাস এবং ক্ষতি হ্রাস। আজকে কর্মশালা থেকে যেসব সুপারিশ বা সিদ্ধান্ত আসবে তার উপর ভিত্তি করে Need Based মতামতের ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনাটি প্রণয়ন করা হবে। এই জন্য একটি সফটওয়ার তৈরি করা হচ্ছে যার মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনাটিকে বাস্তবে ফলপ্রসূ করার পাশাপাশি মনিটরিং করা সম্ভব হবে।

সভাপতি ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক তাঁর বক্তৃতায় বলেন, সরকার একটি বড় উদ্দেশ্য নিয়ে কর্মপরিকল্পনাটি তৈরি করছে। মাদকদ্রব্য নিক্ষণ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানাই, সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা টি তৈরি করার জন্য। উপজেলা নির্বাহি অফিসার দের কে বলেন নভেম্বর ১৫ তারিখের মধ্যে কর্মশালা করে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা পাঠাবেন। আপনারা উপজেলা তা উপস্থিতি নিশ্চিত করে এই কর্মপরিকল্পনাটি ১৫ তারিখের মধ্যেই করবেন। যে কর্মপরিকল্পনা আপনি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না তেমন পরিকল্পনা আপনি নিবেন না। এরপর আপনাদের কর্মপরিকল্পনা টি মনিটরিং করা হবে। প্রত্যেক উপজেলার UNO রা আছেন আপনারা আপনাদের নেতৃত্বে কর্মশালা করে তার সুপারিশ আমাদের প্রেরণ করবেন।মাদকদ্রব্য নিজেদের জন্য আম নিয়মিত কাজ করছি কিছু কাজগুলোকে একটি প্লাটফর্মে আনার জন্য এই সমর্থিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। আমরা সবাই জানি আমাদের অগ্রযাত্রার অন্যতম প্রতিবন্ধক হল মাদক।সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে উতে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন তার জন্য দরকার । তি তৈরি করতে প্রমাদ। আমরা যদি দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ উপহার দিতে চাই, তাহলে মাদক পরিহার করার কোন বিকল্প নেই। আপনারা উপজেলায় গিয়ে ধীরে সুস্থে একটি কর্মপরিকল্পনা দিলে আমরা তা মানকদ্রব্য নিষ্প্রাণ অধিদপুরকে নিয়। উপস্থিত সকলকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগন তাদের গ্রুপের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় অংশ নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, মাদকের সরবরাহ হ্রাস করার জন্য এর উৎস নির্মূল করতে হবে, মাদকের রোড চিহ্নিত করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে, মাদক ব্যাবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, মাদক মামলার আসামি কে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা ও সীমান্ত এলাকার নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। একইসাথে মাদকের চাহিদা যে কারণে বাড়ছে তা চিহ্নিত করতে হবে। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে হবে। অরুণ প্রজন্মকে হতাশা, দুঃশ্চিন্তা, সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে প্রথমে রক্ষা করতে হবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে, চাকুরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ডোপাটা করতে হবে। তরুণ সমাজকে মাঠমুখী করতে হবে, খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। গণমাধ্যমকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। মাদকাসকদের তালিকা ও স্টেজ নির্ণয়পূর্বক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সকল সরকারি হাসপাতালগুলোতে মাদকাসরুদের জন্য আলাদা কর্নার তৈরি করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের সকলের

আন্তরিক চেষ্টায় মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। সকলের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ এবং মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কর্মশালাটি সফলভাবে শেষ করা হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *