বাজারের নৈরাজ্য ঠেকাতে যৌথ অভিযানে নামছে ৯ টি সংস্থা

Uncategorized জাতীয়


নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, মূল্য কারসাজিসহ বাজার অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামছে সরকারের নয়টি সংস্থা। আজ থেকেই চালানো হবে সমন্বিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত আদায় ও বেশি দামে পণ্য বিক্রি, পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ সংরক্ষণ না থাকা, অবৈধভাবে মজুদ, ক্রয় ভাউচার না রেখে ইচ্ছেমতো দাম নেওয়া, প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন না থাকা, নোংরা পরিবেশে মানহীন ভেজাল পণ্য উৎপাদন, বাজার সিন্ডিকেট, আসল পণ্যের মোড়কের আড়ালে নকল পণ্য বিক্রি, খাদ্যদ্রব্যের ভেজালসহ বিভিন্ন অপরাধে জেল-জরিমানা সহ অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তির আওতায় আনবে এই সমন্বিত ভ্রাম্যমাণ আদালত।




সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত আদায়, সিন্ডিকেটের করে ক্রেতাদের বেশি দামে পণ্য ক্রয়ে বাধ্য করা, উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন না থাকা, নোংরা পরিবেশে মানহীন ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও পরিবেশনের অভিযোগ রয়েছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে মুদি দোকান সহ নিত্যপণ্য বিক্রয়কারী পাইকারি ও খুচরা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট, শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ধরনের অনিয়মকারী প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেই এই সমন্বিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে অভিযান সমন্বয়কারী কর্মকর্তা বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মনিটরিং অফিসার মো. ইমরান হোসেন মোল্লা গতকাল বুধবার গণমাধ্যম কে বলেন, ‘আপাতত প্রতি মাসে একবার এই নয়টি সরকারি সংস্থার সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজন হলে একাধিকবার অভিযান চালানো হবে। এর বাইরেও প্রতিটি সংস্থা নিজ নিজ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।’
ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, এই সমন্বিত অভিযানের বাইরেও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ মোবাইল কোর্টসহ ভেজাল ও নকল খাদ্য বিক্রি, উৎপাদন ও বিপণনের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। সেসব অভিযানও অব্যাহত থাকবে।সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারের নৈরাজ্যকর অবস্থায় ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকার দাম না বাড়ালেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। কেউ কেউ কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নিচ্ছে। এছাড়া ভেজাল ও নকল পণ্যেও বাজার এখন সয়লাব। এসব অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে সমন্বিত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিট (এফপিএমইউ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আজ থেকে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক (খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক কার্যক্রম) ড. সহদেব চন্দ্র সাহা। এদিকে বাজারের নৈরাজ্য রুখে শৃঙ্খলা ফেরাতে চলমান ভোক্তা অধিকার আইন-২০০৯ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান গণমাধ্যম কে বলেন, বর্তমান আইনে যে জরিমানা বা দন্ডের বিধান রয়েছে তা অপরাধ অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। তাই আইনের সংশোধন প্রয়োজন। ওই আইনে যে জরিমানা ও শাস্তি রয়েছে তা দ্বিগুণ করে নতুন আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে।’সফিকুজ্জামান বলেন, ‘নতুন প্রস্তাবনা অনুমোদন হলে জরিমানা বা শাস্তির ব্যাপ্তি বাড়বে। আর এগুলোর ব্যাপ্তি বাড়লে যাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি তাদের যদি আরও কঠোর জায়গা নিতে পারি তাতে অপরাধ কমবে এবং ভোক্তাদের লাভ হবে।’ এ বিষয়ে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যম কে বলেন, ‘বাজারের নৈরাজ্য-অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সরকার বা সরকারের সংস্থাগুলো যত কঠোর হবে ততই ভালো। আমরা চাই মানুষের জন্য ক্ষতিকর কোনো কাজ যেন কোনো ব্যবসায়ী না করেন।’ তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগকে (অভিযান) আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে সেই সঙ্গে এটা বলতে চাই, বিনা অপরাধে কেউ যেন শাস্তি না পায়।’এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাজারে অভিযান পরিচালিত হয়েছে তিন হাজার ৩৪১টি। অভিযানে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছয় হাজার ৯৩৩টি। বাজারে এসব অভিযানের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ছয় কোটি ৫৪ লাখ ২৭ হাজার ৯০০ টাকা।
একই সময়ে ভোক্তার দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দণ্ড দেওয়া হয়েছে ৪০৭টি প্রতিষ্ঠানকে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩৩ লাখ তিন হাজার ৫০০ টাকা। নিয়ম অনুযায়ী, অভিযোগের ভিত্তিতে আদায়কৃত অর্থের ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে দেওয়া হয়। সেই হিসাবে সাত লাখ ৮০ টাকা পেয়েছেন ৩৯৬ জন অভিযোগকারী। এছাড়া একই সময়ে ভোক্তার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে চালানো অভিযান এবং বাজার তদারকির মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে মোট সাত হাজার ৩৪০টি প্রতিষ্ঠানকে, যা থেকে ছয় কোটি ৮৭ লাখ ৩১ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে আদায়কৃত অর্থের ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে মোট জমা হয়েছে ছয় কোটি ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৭৭৫ টাকা। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিন মাসে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পৃথক অভিযান চালিয়ে সাত হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম পেয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পরিচালিত অভিযানে নানা অনিয়মের অভিযোগে ৪২টি রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর মধ্যে ৩০টি রোস্তোরাঁর নিবন্ধন নেই। সে হিসেবে নিবন্ধনহীন রেস্তোরাঁর সংখ্যা ৭৫ শতাংশ।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *