১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃত অর্থেই ছিল জনযুদ্ধ

Uncategorized জাতীয়

আজকের দেশ ডেস্ক ঃ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই–ই সর্বাত্মক এই যুদ্ধে শামিল হয়েছিল সমানভাবে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক নারীর ওপর নিপীড়ন, ধর্ষণ, লাঞ্ছনা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বাছবিচারহীনভাবে।

নারীরা ধর্ষিত বা অত্যাচারিত হয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটা যেমন বড় হয়ে উঠেছে, তার চেয়েও বড় সত্য এই যে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নারীসমাজ লড়াই করেছে, দেশের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে, রক্ষা করেছে।

অন্যদিকে রণাঙ্গনে দাঁড়িয়েও বিপুল বিক্রমে লড়েছেন নারীরা। তবু আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের সঠিক মূল্যায়ন আজও হয়নি।

একজন বিথীকা বিশ্বাস বা শিশির কণা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যদের গানবোট গ্রেনেড মেরে উড়িয়ে দিলেও যুদ্ধ-পরবর্তীকালে তাঁরা যথাযোগ্য বীরের মহিমায় অভিসিক্ত হতে পারেন না।

উপরন্তু হাজার নারী মুক্তিযুদ্ধাদের ললাটে জোটে সামাজিক লাঞ্ছনা। যুদ্ধ শেষে এই বিথীকা বিশ্বাস ও শিশির কণা বা নারী যোদ্ধাদের তাঁদের পরিবার ও সমাজ গ্রহণ করেনি। যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে এমন উদাহরণ অসংখ্য।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মুক্তিযুদ্ধকালে নারীর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থান ছিল অত্যন্ত সনাতন ও পশ্চাৎপদ।

পুরুষেরা যখন সংগ্রামরত ছিল পাকিস্তানি সৈনিকদের পরাস্ত করে স্বদেশকে মুক্ত করার জন্য, নারীকে তখন দেশমুক্তির পাশাপাশি নিজের অস্তিত্ব, মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য লড়াই করতে হয়েছে।

মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান—সব ধর্মের নারীই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কেবল বাঙালি নয়, সর্বাত্মকভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন আদিবাসী নারীরাও।

যুদ্ধের সময় যদিও বাংলাদেশ সরকারের নীতিতে নারীদের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া, গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা এবং প্রশাসনিক কাজের নেতৃত্বে নারী সাংসদদের দায়িত্ব দেওয়া ইত্যাদির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, তার পরেও এ ক্ষেত্রে নারীরা ছিলেন অনড়।
স্বাধীনতার ২৯ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যক্ষ অবদানের স্বীকৃতি পেতে শুরু করেন নারীরা। এর ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ বিস্মৃতি ও অবহেলা শেষে ইতিহাস এখন বদলাতে শুরু করেছে।

নারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন তিনজন ১৯৭২ সালে ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম; এরপর তারামন বিবি ১৯৭৩ সালে ও ১৯৯৭ সালে পেয়েছেন কাঁকন বিবি। তারামন বিবি ও কাঁকন বিবি ২০১৮ সালে প্রয়াত হয়েছেন এবং দুজনই অনেককাল ছিলেন বিস্মৃতির অন্ধকারে।

তবে এখন পরিস্হিতি পাল্টেছে।সশস্ত্রবাহিনীতে এখন বাড়ছে নারীদের অংশগ্রহণ।সমাজের নিম্নভিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তেও সশস্ত্রবাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ সম্মানের চোখে দেখা হয়।
(১ম ও ২য় ছবিতে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নারীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ। ৩য় ছবিতে সংঘর্ষ কবলিত মালীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা।)


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *