মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস বিকৃতি এবং স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ও ভীতি সৃষ্টি করে চলেছে বিএনপি

Uncategorized জাতীয়

আজকের দেশ রিপোর্ট ঃ দীর্ঘ দুই যুগের মুক্তিসংগ্রাম এবং স্বাধীনতা-যুদ্ধের মাধ্যমে হাজার বছরের শৃঙ্খলমুক্তি ঘটে বাঙালি জাতির। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী নেতৃত্বে বীরের জাতি হিসেবে বিশ্বমানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।সেই দেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই নিয়মিত মহান মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস বিকৃতি এবং স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি ও ভীতি সৃষ্টি করে চলেছে বিএনপি। ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও চার লাখ মা-বোনের ত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে খুবই কুণ্ঠাবোধ করে এই দলটি। কিন্তু কেনো? সবসময় তারা বাঙালি জাতির মহান বিজয়কে পাশ কাটিয়ে যেতে বিভিন্নরকম ছলা-কলার আশ্রয় নেয় কেনো?
একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে খেয়াল করে দেখবেন, বিএনপি দলটি সবসময় বাংলাদেশের মুক্তির ইতিহাস ও বিজয়ের অর্জনগুলোকে উদযাপন করতে চায় না। বরং অন্যান্য বিদ্বেষমূলক কর্মসূচি প্রণয়ন করে জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সংস্পর্শে আসার সুযোগ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। এমনকি বছরজুড়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের সময়েও তারা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে নাশকতা সৃষ্টি ও দেশকে অস্থির করার সর্বোচ্চ অপচেষ্টা করেছে।
এর বাইরে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা কখনো কখনো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে প্রচার করে। যেমন- মুক্তিযুদ্ধের মূল রণকৌশল ও নির্দেশনা তথা ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের ৫০তম বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের সময়, ২০২১ সালে বিএনপি তা উদযাপনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু এই কর্মসূচিতে তারা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করে। অথচ ৭ মার্চের সাথে জিয়াউর রহমানের কোনো সম্পর্কই নাই। কিন্তু সবসময় মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে তারা ইতিহাস বিকৃতির আশ্রয় নেয় কেন? বিএনপির এই অনৈতিক আচরণ, কপটতা এবং হীনমন্যতার কারণ কী? নিজেদের স্বাধীনতাবিরোধী এবং বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান ঢেকে রাখতে চায় কী তারা!
বাংলাদেশ-বিরোধীদের নিয়ে বিএনপি গঠন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর দমনপীড়নঃ মূল সমস্যাটা বিএনপির জন্ম ও কর্মপদ্ধতির মধ্যেই রয়েছে। কারণ ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে সেনানিবাসে বসে বিএনপি গঠন করে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান। খুন-ধর্ষণ-লুটপাটে জড়িত রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু যে দালাল আইন করেছিলেন, তা বাতিল করে সাজাপ্রাপ্ত ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে মুক্ত করে দেয় জিয়া। ১৯৭৮ সালে জিয়ার আহ্বানে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে রাজাকারদের সর্দার গোলাম আযম। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী দলগুলোর নিবন্ধন বাতিল এবং দণ্ডিত দালালদের ভোটাধিকার বাতিল করেছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ বাতিল করে আবারো উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ খুলে দেয়। এমনকি সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ তুলে দিয়ে দালালদের ভোটার হওয়ার সুযোগও করে দেয়। ফলে সমাজে পুনর্বাসিত হয় যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর সাজাপ্রাপ্ত সদস্যরা। মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে যে লাল-সবুজের পতাকা অর্জন করে বাঙালি জাতি, সেই পতাকাও বদলে দিতে চেয়েছিল স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। ১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে নতুন জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে, এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয় হয়। এমনকি সেনাবাহিনী থেকে শত শত মুক্তিযোদ্ধা সেনাকে বিনাবিচারে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতকে শক্তিশালী করে তোলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়া। জিয়াউর রহমানের হাত ধরে রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরোধী, উগ্রবাদী ও রাজাকারদের পুনর্বাসনঃ এরপর, ১৯৭৯ সালে যে লোক দেখানো নির্বাচনে বিএনপি থেকে যে ৩০০ প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় সেনাপ্রধান জিয়া, তাদের মধ্যে ২৫০ জনই ছিল চিহ্নিত, অভিযুক্ত ও দণ্ডিত স্বাধীনতাবিরোধী। ১৯৭১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য যে শাহ আজিজুর রহমান জাতিসংঘে গিয়েছিল পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে, সেই ঘৃণিত দেশদ্রোহী রাজাকার আজিজকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয় বিএনপি-প্রধান জিয়াউর রহমান। এরপর সংসদে দাঁড়িয়ে ‘বাংলা ভাষা’র নাম বদল করে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ হিসেবে নতুন নামকরণ করে শাহ আজিজুর রহমান। কারণ, বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল ভিত্তিটা রচিত হয়েছিল মূলত এই বাংলা ভাষার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। তাই স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আমাদের ভাষার নামই বদলে দিতে চেয়েছিল। এমনকি বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল স্লোগান ‘জয় বাংলা’ এবং মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল-খ্যাত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জিয়াউর রহমান।আরেক কুখ্যাত রাজাকার মসিউর রহমান যাদু মিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর সমমর্যাদা দিয়ে বানানো হয় সিনিয়র মন্ত্রী। বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার দায়ে এই যাদু মিয়াকে দালাল আইনে বিচার করে কারাদণ্ড দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েই তাকে জেল থেকে ছেড়ে দেয় জিয়া। জিয়ার অন্য রাজাকার মন্ত্রীদের মধ্যে খন্দকার আবদুল হামিদ বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত,হিসামসুল হুদা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তান বেতার থেকে অনুষ্ঠান প্রচার করতো, আব্দুল আলিম জয়পুরহাটে সংখ্যালঘুদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়, মির্জা গোলাম হাফিজ মুক্তিযুদ্ধকে ষড়যন্ত্র বরে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, আবদুর রহমান বিশ্বাস মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এরকম স্বীকৃত দেশবিরোধীরা জিয়াউর রহমানের মন্ত্রী হওয়ায় আবারো দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
৭১এর খুনি-ধর্ষক-রাজাকারদের জন্য খালেদা জিয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং গভীর মমত্ববোধঃ পরবর্তীতে একাত্তরের খুনি-ধর্ষক-রাজাকাররা আবারো বাংলার মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয় জিয়াউর রহমানের স্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাত ধরে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *