আজকের দেশ ডেস্ক : রাজধানীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল। এখানেই গড়ে উঠেছে দেশের নামি দামি সব ক্লাব। প্রায় শত বছরের পুরোনো এই ক্লাবগুলোকে নিয়ে এক সময় মেতে উঠত দেশবাসী। নিজ নিজ দলের ক্লাবগুলো নিয়ে টান টান উত্তেজনায় থাকত দর্শকরা। তবে সেই দিন আর নেই। ক্যাসিনো কাণ্ডে সুনসান নীরবতা নেমে এসেছে ক্লাব পাড়ায়। ক্যাসিনোর কালো থাবা এসে পড়েছে ক্লাবগুলোতে।
সরেজমিনে ক্লাবগুলোতে দেখা যায়, চেয়ার টেবিল ছাড়া আর কিছুই নেই। নেই কোনো নিরাপত্তা কর্মী। অধিকাংশ ঘরের দরজা ছিল অরক্ষিত।। ধুলো আর ময়লায় ভরে গেছে প্রতিটি ঘর।
একসময় ওয়ান্ডারস ক্লাবের প্রধান ফটকে শোভা পেত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি তবে এখন আর চোখে পরছে না। এই ক্লাবটি র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সিলগালা করে দিয়েছে। ১৯৩৭ সালে গড়ে উঠা এই ক্লাবটির দরজায় এখন ঝুলছে লাল সুতা ও সাদা কাপড়ে মোড়ানো সরকারি তালা।
প্রায় দুই দশক ধরে ক্লাব পাড়ায় ব্যবসা করেন শিপন মিয়া। তিনি বলেন, এখন সন্ধ্যা নামলে আর কাউকে পাওয়া যায় না। আগে সন্ধ্যা নামলেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের আনাগোনা বেড়ে যেত। রাতভর চলত গানবাজনা আর হইহুল্লুর। গলির বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে থাকত ‘সম্রাট বাহিনীর’ লোক। তাদের কাজ যে কোনো ঝামেলা ঠেকানো তবে অভিযান চালানোর পরে তাদের আর আনাগোনা নেই।
তিনি আরো জানান, শুধু ওয়ান্ডারস ক্লাবে নয় আশেপাশের আরো কয়েকটি ক্লাবে এই ক্যাসিনো খেলা হত তবে এখন সব বন্ধ।
ক্লাবগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘সামাজিক ক্লাবের আড়ালে যারা অবৈধ কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবো। ইতিমধ্যেই আমরা কয়েকটি ক্লাব সিলগালা করে দিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু ওয়ান্ডারস ক্লাবের এক কর্মচারী জানান, প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এখানে কাজ করি। গত দুই বছরে যা দেখেছি তা নজিরবিহীন। আগে খুব সুন্দর ছিল পরিবেশ। খুব নামীদামী লোকেরা আসত এখানে। প্রায় শত বছরের পুরনো ক্লাবটিতে এক ধাক্কায় সব গৌরব ধুলোয় মিশে গেল। এখন বলতে লজ্জা লাগে আমি এখানে কাজ করতাম।
সিলগালা না করে দিলেও এখানকার প্রায় সব ক্লাব বন্ধ। অধিকাংশ ক্লাবে দরজা ভিতর থেকে তালা মারা। তবে ওয়ারি ক্লাবটির প্রধান ফটক খোলা ছিল। ভিতরে প্রবেশ করতেই একজনকে ফোনে কথা বলতে দেখা যায়। তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখানকার কেউ না। পাশে দোকানে কাজ করি। এই জায়গাটা নিরিবিলি হওয়ায় বসে আছি। শেষ পর্যন্ত তার পরিচয় এই প্রতিবেদককে জানায়নি তিনি তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লাবটির পাশে পান বিক্রেতা জানান, বসে থাকা ব্যক্তিটির নাম আব্দুর রহিম। তিনি অনেক দিন ধরেই ক্লাবটিতে কাজ করেন। ক্যাসিনো কাণ্ডের পর ক্লাবটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পলাতক তবে গোপনে তিনি দেখাশুনা করছেন।
ব্রিটিশ আমলে গড়ে উঠা এই ক্লাবটি নিয়ম অনুযায়ী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসক। ক্লাবটি নিয়ে এই পান বিক্রেতা আরো জানান, এখানে অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে ক্যাসিনো খেলা না হলেও হাউজি খেলাসহ আইপিএল, বিপিএলে বাজি ধরা হত এই ক্লাবে এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মাদকের অবাধ ব্যবহার ছিল ক্লাবটিতে।