১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, স্বাধীন ভূখণ্ডে ফিরলেন জাতির পিতা

Uncategorized জাতীয়



আমিনুর রহমান বাদশা ঃ পাকিস্তানি শোষণের রোষানল থেকে সদ্য মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। সোনার বাংলায় তখন উদিত হচ্ছে স্বাধীন সূর্য। কিন্তু সেই স্বাধীনতায় যেন ছিল না প্রাণ। থাকবে কীভাবে? তখনও যে স্বাধীন ভূখণ্ডে পা রাখেননি স্বাধীনতার মহানায়ক! তাই তো প্রকৃতি ছিল মুখ গোমড়া করে। তবে হাসি ফুটতে দেরি হয়নি। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন ভূখণ্ডে পা রাখেন জাতির পিতা।

ক্যালেন্ডারের পাতার এই দিনটি বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কুখ্যাত মিয়ানওয়ালি কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছিলেন মুক্ত বাংলাদেশে। মহানায়কের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আনন্দাশ্রুতে মথিত হয়েছিল সমগ্র বাংলাদেশ ও আপামর বাঙালি।

পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বেলা ১টা ৪১ মিনিটে জাতির অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন বীরোচিত আবহে। বাঙালি জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা পরিণত হয়েছিল জনতার মহানগরে।

এর আগে ওই বছরের ৮ জানুয়ারি তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন যান বঙ্গবন্ধু। তারপর দিল্লি হয়ে ঢাকা ফেরেন। বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমানটি যখন তৎকালীন তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে, তখন লাখো জনতা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে স্বাগত জানায় প্রাণপ্রিয় নেতাকে।

জনস্রোত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি পৌঁছায় তখনকার রেসকোর্স ময়দানে যা বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে উল্লসিত লাখো জনতা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে পরিণত করে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমুদ্রে।

সেখানে স্বতঃস্ফূর্ত জনতার উদ্দেশ্যে আবেগ ও আনন্দে বঙ্গবন্ধু প্রদান করেন এক ঐতিহাসিক ভাষণ। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধজয়ী জনতার উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রথম সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীকে জানান গভীর ভালোবাসা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য সবাইকে আত্মনিয়োগ করার উদাত্ত আহ্বান জানান।

এসময় শুরু হয় আরেক যুদ্ধ ও স্বপ্ন। স্বাধীন বাংলাদেশের উত্তাল জনতা প্রিয় নেতার ডাকে সোনার বাংলা গড়ার কাজে সঙ্কল্পবদ্ধ হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের আর পাকিস্তানি শোষণে নিষ্পেষিত বাঙালি জাতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও মর্যাদাবান করার সেই যুদ্ধের আরেক নাম ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’।

পাকিস্তানি হানাদারদের শোষণ-নির্যাতনের কবল থেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে স্বাধীনতা লাভের মাধ্যমে ‘প্রথম বিপ্লব’ সফল হলেও ‘সোনার বাংলা’ গড়ার ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ অসমাপ্ত থাকে। তবে তার অসমাপ্ত স্বপ্নকে পূর্ণ করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই দিনে পিতাকে জানাই লাখো সালাম ও গভীর শ্রদ্ধা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *