নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ মিথ্যা কার্যাদেশ দেখিয়ে ঋণের নামে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কুমিল্লার বুড়িচং থানার পিরযাত্রাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কুমিল্লা থেকে গোয়েন্দা অভিযান চালিয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হকের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করেছে।তার বিরুদ্ধে দুইটি মামলা চলমান রয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যম কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সচিব আরও বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সের কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের কার্যাদেশের বিপরীতে ইউসিবিএল ব্যাংক, কুমিল্লা শাখা থেকে ৪৭ কোটি টাকা ঋণ নেন জাকির হোসেন। কিন্তু কাজের বিপরীতে প্রাপ্ত বিলের চেক নগদায়ন করেননি। এমনকি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করেন। তিনি আরও জানান, সিটি কর্পোরেশনের কাজটি অসমাপ্ত রেখে চলে যান অভিযুক্ত জাকির হোসেন। এর ফলে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয় এবং পুনরায় টেন্ডার করে কাজটি সমাপ্ত করতে গিয়ে অতিরিক্ত ৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতি সাধন হয়।
মামলার এজাহার ও দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১০মে চট্টগ্রাম-১ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক বাদী হয়ে পৃথক দুইটি মামলা করেন। যার মধ্যে ২২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জাকির হোসেন ও ইউসিবিএলের ৫ কর্মকর্তা সহ সাতজনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের হয়। আর দ্বিতীয় মামলায় জাকির সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
প্রথম মামলার আসামিরা হলেন, গ্রেপ্তারকৃত মো. জাকির হোসেন, মেসার্স রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আলম, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের তৎকালীন এফ ভিপি এন্ড হেড অব ব্রাঞ্চ ও বর্তমানে স্পেশাল এ্যাসেটস ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন মো. সারোয়ার আলম, এ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অপারেশন ম্যানেজার মো. আনিসুজ্জামান, এফএভিপি ছাইফুল আলম মজুমদার, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মকামে মাহমুদুল ইসলাম আরেফিন ও দেবু বোশ।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আসামি মোহাম্মদ আলম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি প্রকল্পের কার্যাদেশপ্রাপ্ত হয়ে নিজে কাজ না করে, অবৈধভাবে জাকির হোসনকে আমমোক্তার নিয়োগ করে। এরপর তাকে কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করে। কিন্তু তিনি কাজটি সম্পূর্ণ না করে গণভোগান্তি সৃষ্টি করে সরকারি ৪ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ৪৩০ টাকা আর্থিক ক্ষতি সাধন করে।
অন্যদিক মো. জাকির হোসেন মিথ্যাভাবে নিজেকে রানা বিল্ডার্স (প্রা.) লিমিটেডের এমডি হিসেবে উপস্থাপন করেন। এরপর সিল-স্বাক্ষর ও অপর্যাপ্ত পরিমাণে মর্টগেজ রেখে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ইউসিবিএলের কুমিল্লা শাখা থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন।
দ্বিতীয় মামলায় আগের সাত জন সহ ফেনীর বাসিন্দা ছালেহ আহাম্মদকেও আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় একই প্রক্রিয়ায় সিল-স্বাক্ষর ও অপর্যাপ্ত পরিমাণে মর্টগেজ রেখে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ইউসিবিএলের কুমিল্লা শাখা থেকে আরও ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করে আসামিরা। এভাবে মোট ৪৭ কোটি টাকা ঋণ নিতে আত্মসাৎ করেন তারা। যা পরবর্তীতে সুদ-আসল মিলিয়ে ৫০ কোটি টাকারও বেশি দাঁড়ায়।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদক সচিব আজকের দেশ ডটকম কে জানান, মামলা দুটির তদন্তকালে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এরপর গত ১৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে তাকে কুমিল্লা শহরের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন বলে দুদকের কাছে তথ্য ছিল। যার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।