!! ইতিহাসের পাতা থেকে নেওয়া !! ৩ মার্চ ১৯৭১ স্বাধীনতা ঘোষণার প্রথম আনুষ্ঠানিকতা

Uncategorized জাতীয়


আজকের দেশ ডেস্ক ঃ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্মের ২৩ বছর পর ১৯৭০ সালে দেশটিতে প্রথমবারের মতো সরাসরি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বাঙালীর প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের যোগ্যতা অর্জন করে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাঞ্জাবি শাসকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের সরকারপ্রধান হতে দিতে রাজি ছিল না।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক-শাসক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের একটি বিবৃতি রেডিও পাকিস্তানের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। ওই বিবৃতিতে জেনারেল ইয়াহিয়া বলেন: ‘এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে, আমি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমি বারবার এ কথাই উল্লেখ করেছি, শাসনতন্ত্র কোন সাধারণ আইন নয়; বরং এটা একসঙ্গে বসবাস করার একটি চুক্তি মাত্র।’ রেডিও পাকিস্তানের বরাত দিয়ে এ খবরটি পরদিন ২ মার্চ দৈনিক আজাদ ও দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়।

জেনারেল ইয়াহিয়া খানের এই বিবৃতিতে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে যায়। একসঙ্গে বসবাস করা না করা সংক্রান্ত ইয়াহিয়ার এই বক্তব্যের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম সুযোগটি গ্রহণ করেন। তিনি এক মুহূর্তও দেরি না করে ১ মার্চ দুপুরেই হোটেল পূর্বাণীতে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। ইয়াহিয়ার বক্তব্যের উত্তরে তিনি বলেন- ‘ষড়যন্ত্র যদি আরও চলে, তাহলে বাংলাদেশ নিজ প্রশ্নের মীমাংসা করে নেবে। আগামী ৭ মার্চ আমি রেসকোর্স ময়দানে বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের কর্মসূচী ঘোষণা করব।’

সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পরক্ষণেই ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতার মিছিল শুরু হয়ে যায়। মিছিলে স্লোগান ছিল ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ অল্পক্ষণের মধ্যেই পল্টন ময়দানে এক স্বতঃস্ফূর্ত জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক ছাত্রনেতা এবং তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নবনির্বাচিত সাংসদ তোফায়েল আহমদ সভায় বলেন- ‘আর ৬-দফা বা ১১-দফা নয়, এবার বাংলার মানুষ এক-দফার সংগ্রাম শুরু করলো। আর এই এক-দফা হচ্ছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব।’ (দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ, ২ মার্চ, ১৯৭১)

১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একটি বিবৃতি দেন। তা পরদিন পাকিস্তানের সব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন- ‘সারা বাংলাদেশে বাঙালীরা স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীর সামনে প্রমাণ করেছে যে, তারা আর নির্যাতিত-শোষিত হতে রাজি নয়; বাঙালীরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১ মার্চ বিকেল ৩টায়। ঐ দিনই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে রাত ৮টায় তৎকালীন ইকবাল হলে (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ছাত্রলীগের তৎকালীন এবং প্রাক্তন ৮ নেতা এক জরুরী সভায় মিলিত হন। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, শেখ ফজলুল হক মণি, তোফায়েল আহমদ, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন ও শাজাহান সিরাজ। এ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক বিরাট ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রস্তাব পাঠ করেন ছাত্রলীগের তৎকালীন দফতর সম্পাদক এম এ রশীদ। সভামঞ্চে ছাত্রলীগের চার নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন এবং শাজাহান সিরাজ সম্মিলিতভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে দেন।

১ মার্চ সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন যে, ৭ মার্চ তিনি বাঙালীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্পর্কিত কর্মসূচী ঘোষণা করবেন। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ এবং শ্রমিকলীগের যৌথ সমাবেশে তিনি বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রথমেই বলেন, ‘হয়তো এটাই আমার শেষ ভাষণ। …. আমি যদি নাও থাকি, আন্দোলন যেন থেমে না থাকে। বাঙালীর স্বাধীনতার আন্দোলন যাতে না থামে।

আমি মরে গেলেও সাত কোটি মানুষ দেখবে দেশ সত্যিকারের স্বাধীন হয়েছে।’ খবরটি ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *