নিজস্ব প্রতিনিধি : ২৪ ঘন্টার মধ্যে যশোরের অভয়নগরে ইজিবাইক চালক রাশেদ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সহ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই যশোর। আসামীরা প্রত্যেকেই ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের সক্রিয় সদস্য। গত ৪ মার্চ, দিনের বেলা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে যশোর ঝিকড়গাছা কিষ্ণনগর সহ যশোর কতোয়ালীর মুড়লী মোড় নামক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ভিকটিম রাশেদ উদ্দিন (২৫) যশোর জেলার ঝিকরগাছা থানাধীন গদখালী গ্রামের মোঃ জসিম উদ্দিন এর পুত্র। সে পেশায় একজন ইজিবাইক চালক ছিল।
প্রতিদিনের ন্যায় গত ২ মার্চ সকাল অনুমান ৭ টার সময় ভিকটিম রাশেদ নিজ বাড়ী থেকে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়। সন্ধ্যায় সে বাড়ীতে না ফেরায় তার মা রেহেনা খাতুন রাশেদ উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ০১৯৬৩৫১৫৪৫৩ তে রাত ৮ টার সময় কথা বলে। এরপর থেকে রাশেদ উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পাওয়া যায়।
পরদিন ৩ মার্চ, সকাল অনুমান ১১ টার সময় রাশেদ উদ্দিনের পিতা জসিম উদ্দিন ঝিকরগাছা থানায় নিখোঁজ জিডি করার জন্য গিয়ে জানতে পারেন যে, অভয়নগর থানায় একটি অজ্ঞাত মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সংবাদ পেয়ে ভিকটিম রাশেদের পিতা জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তিনি তার ছেলে ভিকটিম রাশেদ ভুইয়াকে সনাক্ত করে।
ভিকটিমের পিতার ধারনা অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা রাশেদ উদ্দিনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে হত্যা করে তার নিকট থাকা ইজিবাইক চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় পিবিআই, যশোর জেলা পিবিআই, যশোর জেলার জিডি নং-২৬, তারিখ-০৩/০৩/২০২৩, মূলে ছায়া তদন্ত শুরু করে।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম, অ্যাডিশনাল আইজি, বাংলাদেশ পুলিশ এর সঠিক তত্ত্ববধান ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্ত্বে পিবিআই, যশোর ক্রাইমসিন টিম ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) দেবাশীষ মন্ডল, সঙ্গীয় এসআই (নিঃ) স্নেহাশিস দাশ, এসআই (নিঃ) ডিএম নুর জামাল হোসেন ও এসআই (নিঃ) রতন মিয়াসহ যশোর জেলার চৌকস দল গত ৪ মার্চ দুপুর ১২ টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামী জান্নাত আক্তার@ আয়েশা (২২), পিতা-মজিবর রহমান, সাং-পারবাজার, থানা-ঝিকরগাছা, জেলা-যশোরকে ঝিকরগাছা থানাধীন কৃষ্ণনগর গ্রামের জনৈক মিজান ড্রাইভার এর ভাড়া বাসা থেকে ও আসামী মোঃ মেহেদী হাসান @ মিলন (২৩), পিতা-মৃত নিজাম উদ্দিন মোল্যা, সাং-বারভাগ, থানা-বাঘারপাড়া, জেলা-যশোরকে একই দিন বিকাল ৩ টা ৪৫ মিনিটের সময় কোতয়ালী থানাধীন মুড়লী মোড় বাসস্টান্ড থেকে গ্রেফতার করে।
এছাড়াও ডিবি যশোর জেলার একটি টিম গত ৪ মার্চ রাত অনুমান ১১ টা ৪৫ মিনিটের সময় কোতয়ালী থানাধীন বসুন্দিয়া মোড় থেকে গ্রেফতার করে ৫ মার্চ সকাল ৯ টা ১০ টার সময় পিবিআই, যশোর এর নিকট সোপর্দ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা রাশেদ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে স্বীকার করলে তাদের ফৌঃ কাঃ বিঃ ৫৪ ধারা মোতাবেক গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য যে, আসামী মেহেদী হাসান @ মিলন এর হেফাজত থেকে ভিকটিম মৃত রাশেদ উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ভিকটিম রাশেদ এর পিতা জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে যশোর জেলার অভয়নগর থানার মামলা নং-০২, তারিখ-০৩/০৩/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৭৯/২০১/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করলে পিবিআই, যশোর জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) ডিএম নুর জামাল হোসেন রাশেদ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী জান্নাত আক্তার@ আয়েশা (২২), মোঃ মেহেদী হাসান @ মিলন (২৩) এবং আসামী মোঃ রিমন বির্শ্বাস @ বাবু (২২) দের ভিকটিম রাশেদ এর পিতার দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার করে হেফাজতে গ্রহণ পূর্বক নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাকৃত আসামীরা জনায় যে, আসামী মোঃ মেহেদী হাসান মিলন, মোঃ রিমন বিশ্বাস @ বাবু ও আসামী জান্নাত আক্তার @ আয়েশা সংঘবদ্ধ ইজিবাইক ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির সদস্য। তারা যশোর জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় ইজিবাইক ও ভ্যান ছিনতাই করে পরস্পর যোগসাজসে ক্রয়—বিক্রয় করে থাকে।
আসামী মেহেদী হাসান মিলনকে আসামী মোঃ রিমন বিশ্বাস @ বাবু ভিকটিম রাশেদের ইজিবাইক ভাড়া ঠিক করে দেয় এবং মেহেদী হাসান মিলনের সাথে পরিকল্পনা করে কিভাবে ইজিবাইকটি ছিনতাই করবে। সেই পরিকল্পনানুযায়ী আসামী মেহেদী তার স্ত্রী জান্নাত আক্তার @ আয়েশাকে নিয়ে ভিকটিম রাশেদের ইজিবাইকটি রিজার্ভ ভাড়া করে।
পরিকল্পনানুযায়ী আসামী মেহেদী হাসান মিলন ও জান্নাত আকতার @ আয়েশা রাশেদ উদ্দিনের ইজিবাইকে চড়ে প্রথমে রাজগঞ্জ ঝাঁপা বাওড় এলাকায় বেড়াতে যায়। ঝাঁপা বাওড়ে থাকা ভাসমান ব্রীজে তারা কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে।
একপর্যায়ে ইজিবাইক নিয়ে যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন ধোপাদী সাকিনস্থ উলুর বটতলা হতে মশরহাটিগামী ইটের সলিং রাস্তার ডান পার্শ্বে পৌছালে আসামী মেহেদী হাসান মিলন ইজিবাইক থামিয়ে নিজের পরনে থাকা রাবারের বেল্ট খুলে ভিকটিম রাশেদের গলায় ফাঁস দিয়ে জোরে টেনে ধরে। আসামী জান্নাত আকতার @ আয়েশা ভিকটিমের দুই পা চেপে ধরে।
ভিকটিম রাশেদ উদ্দিনের শরীর নিস্তেজ হলে আসামী মেহেদী হাসান মিলন ও তার স্ত্রী আয়েশা একত্রে ভিকটিমের মৃতদেহ জনৈক মোঃ আজিজুর রহমান সরদার এর মাছের ঘেরের পানির মধ্যে ফেলে দেয়। তারপর আসামীরা ভিকটিমের ইজিবাইক রাজারহাট এলাকায় এনে আসামী মিলনের বন্ধুর নিকট বিক্রয় করে দেয়। পরে আসামী মেহেদী হাসান @ মিলন তার স্ত্রী আসামী জান্নাত আকতার @ আয়েশাকে নিয়ে ঝিকরগছা থানাধীন কৃষ্ণনগর গ্রামে তার ভাড়া বাসায় চলে যায়। মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারের জন্য পিবিআই যশোর জেলা ও ডিবি একত্রে কাজ করে।
