নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হয়েও প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় চাকরি নেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শুল্ক, আবগারী ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (পশ্চিম) সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের ৭ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার রায়ে তিন ধারায় তাকে ১৬ বছরের কারাদ- প্রদান করেন আদালত। পেনাল কোডের ৪২০/৪৬৮ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাত করে চৌদ্দ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং বিশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন আদালত। পেনাল কোডের ৪৭১ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই বছরের কারাদ-ের আদেশ দেন আদালত। যদিও বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন তিন ধারার সাজা একত্রে চলবে।
রায় ঘোষণার সময় মনিরুজ্জামান পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, আসামি মনিরুজ্জামান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হয়েও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদের ঠিকানা ব্যবহার করেন। প্রতারণামূলকভাবে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণে দেশের সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মিথ্যা পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরর জন্য সরকার প্রদত্ত স্বীকৃতি, কোটা ও সুবিধা ভোগ করেছেন। যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে সেই মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগকে অপব্যবহার তথা অপমান করেছেন। আসামির এহেন অপকর্মের কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়, স্বীকৃতি ও সুবিধাদি হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। ফলে আসামি কোনো অনুকল্প পেতে পারে না।
রায়ে আদালত আরও উল্লেখ করেন, দেশের অন্যদের জন্যও এই রায় বার্তা হিসেবে কাজ করবে। আসামি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান না হয়েও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র সৃষ্টি ও তা ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় চাকরি নিয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর তফসিলভুক্ত অপরাধ পেনাল কোডের ৪২০/৪৬৮ ও ৪৭১ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামির অপরাধের প্রকৃত ও ফলাফল বিবেচনায় তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান যুক্তিযুক্ত মনে করি।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান না হয়েও প্রতারণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরি নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শুল্ক, আবগারী ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (পশ্চিম) সাবেক রজস্ব কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানকে পেনাল কোডের তিন ধারায় ১৬ বছরের কারাদ- দিয়েছেন আদালত।
তবে তিন ধারার সাজা একসাথে চলবে বিধায় তাকে ৭ বছর কারাভোগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জালিয়াতির অভিযোগে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। বিভিন্ন সময়ে এ মামলায় ২১ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
উল্লেখ্য, আসামি মনিরুজ্জামান ২০১৪ সালের ১১ মে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে চাকরি পান। এ সংক্রান্ত অভিযোগ দুদকের কাছে এলে ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। দুদকের উপ-পরিচালক এস এম গোলাম মাওলা সিদ্দিকী অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল হয়। ওই বছরই আদালত আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন।