নিজস্ব প্রতিবেদক : তীব্র ডলার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে রাতারাতি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসার উপকরণ সামগ্রীর দাম। এমনকি মেডিকেল ডিভাইস আমদানিকারক ও ব্যাবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় মেডিকেল ডিভাইস বিক্রি নীতিমালা কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের চিহ্নিত ক’জন কর্মকর্তার খামখেয়ালি ও স্বার্থসংশ্লিষ্টতার কারণে হার্টের রিং ও প্রেসমেকারসহ জীবন বাচিয়ে রাখা সব মেডিকেল ডিভাইসের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ মতে মুল্য নির্ধারণ কমিটি কেও পাশ কাটিয়ে গেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দাম বাড়ানোর পর তিন থেকে চার গুন দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে এসব চিকিৎসা সহায়ক উপকরণ। একারণে চিকিৎসা খরচ মেটানো অসাধ্য হয়ে পড়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারের রোগীদের। স্ট্যান্ড বা রিং,কৃত্রিম ভাল্ব বা প্রেসমেকার ও অক্সিজেনারেটর দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হওয়ায় এসব কেনার সামর্থ হারিয়ে ফেলেছে মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীরা।
গত সাত মাস ধরে এসব উপকরণের এলসি খোলা ও আমদানি ব্যাপকভাবে কমে গেছে বলেও প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে কুচক্রী একটি মহল।
জরুরি অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, হৃৎপিণ্ডের ভাল্ব ও পেসমেকারসহ বিভিন্ন মেডিকেল ডিভাইসের তীব্র সংকটের ধুয়া তুলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ আইয়ুব হোসেন ও উপ-পরিচালক আব্দুল মালেক সংবাদ মাধ্যমে বলেন, বিশ্ব বাজারে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণেই এসব মেডিকেল ডিভাইস ব্যাবসায়ীরা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে মেডিকেল ডিভাইস এর দাম বাড়ানোর জন্য আবেদন করে, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেডিকেল ডিভাইস এর দাম বাড়ানো হয়েছে।
অথচ মেডিকেল ডিভাইসের মুল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির ১৭ জন সদস্যের মধ্যে বাকিদের পাশকাটিয়ে তিনজন সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে মেডিকেল ডিভাইসের মুল্য নির্ধারণ ও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয় টা ভিন্নভাবে দেখছে সচেতন মহল।
মেডিকেল ডিভাইসের মুল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্যরা হলেন,পরিচালক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিভাগীয় প্রধান , জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতাল ঢাকা, বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি সার্জারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শাহবাগ ঢাকা, অধ্যাপক ডা: মো: আবদুল্লাহ ওয়াদুদ চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, অধ্যাপক ডা : মো: আফজালুর রহমান প্রাক্তন পরিচালক, এনআইসিডিডি, সিনিয়র কনসালটেন্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, বাংলাদেশ স্পেশালিষ্ট হাসপাতাল ঢাকা, অধ্যাপক ডা ফারুক আহমেদ কার্ডিয়াক সার্জেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মিরপুর ঢাকা,অধ্যাপক ডা: ফজিলাতুন্নেছা চীফ কনসালটেন্ট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মিরপুর ঢাকা, অধ্যাপক ডা: মনিরুজ্জামান চীফ কনসালটেন্ট, কার্ডিওলজি বিভাগ ইউনাইটেড হাসপাতাল লি: ঢাকা, অধ্যাপক ডা আব্দুল আল সাকি মজুমদার, সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি, চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও রিসার্চ সেন্টার শাহবাগ ঢাকা,মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ মহাপরিচালক ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, মো: সালাউদ্দিন (পরিচালক চলতি) ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, মো: আব্দুল মালেক উপ-পরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ঢাকা।
এই সদস্যের সম্মিলিত মতামতের উপর নির্ভর করবে মেডিকেল ডিভাইসের মুল্য নির্ধারণ।
কিন্তু মুল্য নির্ধারণ কমিটির অন্যান্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কমিটির সকল সদস্য কে পাশ কাটিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক মো: সালাউদ্দিন এবং উপ-পরিচালক মো: আব্দুল মালেক এই তিনজন সদস্য-ই মেডিকেল ডিভাইস এর মুল্য বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়ার কারণে কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
একাধিক সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মেডিকেল ডিভাইসের মুল্য নির্ধারণ বা মুল্য বৃদ্ধির অনুমোদনের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না।
দেশের জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের পাশকাটিয়ে এভাবে চিকিৎসা সামগ্রীর মুল্য নির্ধারণের অনুমোদনের কারণে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনসাধারণ চিকিৎসায় বৈষম্যের শিকার হবে। এভাবে চলতে থাকলে সঠিক ও সাশ্রয়ী চিকিৎসা সেবা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।