কৃষি ও মেশিনারিজ শিল্পে নতুন দিনের হাতছানি

Uncategorized অর্থনীতি জাতীয় বানিজ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

হীমেল রহমান :  তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে উন্নত প্রযুক্তি প্রথমিক পর্যায়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়। সাধারণত এইসব দেশ শ্রম নির্ভর হওয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার অনেকের জীবিকা হরন করে। একটি দেশের অগ্রযাত্রাকে তরান্বিত করতে, জীবনমানের উন্নতি ঘটাতে প্রযুক্তির ব্যবহার তো থামিয়ে দেওয়া যাবে না।


বিজ্ঞাপন

উন্নত বিশ্বে কৃষিকাজে সবকিছু যন্ত্রের মাধ্যমে হচ্ছে। চাষাবাদ, বীজ বপন, নিড়ানি, সার দেওয়া, ফসল কাটা, কীটনাশক প্রয়োগ, মাড়াই, ঝাড়া ও প্যাকেটিং পর্যন্ত সবই হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণের ফলে একদিকে যেমন তারা উৎপাদনের পরিমান বাড়াতে সক্ষম হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি উৎপাদন ব্যয় কমেছে।

আমাদের দেশে এখন ধান কাটা ও ধান মাড়াইয়ের মৌসুম চলছে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক মেশিন দিয়ে ধান কাটতে দেখা যাচ্ছে। আকারে ছোট অটোমেটিক মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে ধান মাড়াই করা হচ্ছে।

বড় হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা ও মাড়াই একসঙ্গে করা হচ্ছে চোখের পলকে। এতে কৃষকরা উপকৃত হলেও মজুররা পরছে বিপদে। একটা মেশিন ৫০ জন মজুরের কাজ করে দিচ্ছে, মৌসুমি কাজ হারাচ্ছে সেই ৫০ জন মানুষ। আপাতদৃষ্টিতে এটি একধরনের আর্থিক ক্ষতি, কিন্ত ভবিষ্যতের দিকে তাকালে এটি একটি সম্ভাবনা। কৃষি ও মেশিনারিজ শিল্পে নতুন দিনের হাতছানি।

বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার বাড়ছে। এটি নিয়ে সুশীল শ্রেণি মোটেও খুশি নয়। সোশাল মিডিয়ায় হারভেস্টারের তুমুল সমালোচনা করে কেউ কেউ দাবি করছে এধরনের মেশিন গরিবের পেটে লাখি দিচ্ছে, মানুষের কাজ নিয়ে নিচ্ছে। ওদের দাবি সত্য, আর সমস্যাটা সাময়িক। মাঠে কাজ করা মৌসুমি মজুররা সাময়িক সমস্যায় পড়লেও তারা দ্রুতই বিকল্প কর্মসংস্থান খুঁজে নিবে। কৃষকদের আরো কিছু সমস্যা আছে, যেমন: সব জমিতে মেশিনের ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে, খড় জমানো যাচ্ছে, সব কৃষকের সামর্থ নেই। এই সমস্যাও ক্ষনস্থায়ী। গবেষকরা জমির সঙ্গে মানানসই যন্ত্র উৎপাদন করে ফেলবে দ্রুতই।

যাদের মেশিন ব্যবহার করার সামর্থ্য নেই মেশিন মালিক ও কৃষকদের সমিতি হতে পারে চমৎকার সমাধান। কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত না করে সাময়িক সমস্যাগুলো সমাধান নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আখেরে প্রযুক্তির ব্যবহার খরচ ও সময় বাঁচিয়ে পরোক্ষভাবে হাজারো মানুষের অর্থ সাশ্রয় করবে। মেশিনের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে মেশিন বেশি উৎপাদন হবে, তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান। নতুন একটা খাত তৈরি হবে যা শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি ডিমান্ড করবে।

দেশে যখন মোবাইল ফোন আসে, তখন কেউ কেউ মনে করেছিলো মোবাইল বুঝি ডাকপিয়নদের পেটে লাথি দিতে যাচ্ছে। সিমকার্ডের দাম ও মোবাইল ফোনের অপকারীতা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। মোবাইল আসার পর যতজন ডাকপিয়ননের পদ শূন্য হয়েছে তার শতগুণ মানুষ শুধুমাত্র মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করে সাবলম্বী হয়েছে। ধীরে ধীরে সিমের দাম হাতের নাগালে এসেছে, মোবাইল ফোন হয়েছে অপরিহার্য জিনিস।

কৃষি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একইভাবে যারা চুক্তিভিত্তিক মাঠে কাজ করতো তারা কেউ মেশিনারিজ বিক্রয় করবে, কেউ এক্সেসরিজের ব্যবসা করবে কেউ বা মেইন্টেনেন্সের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করবে। আরো পজিটিভলি ভাবলে, আগে যারা পেশীশক্তি ব্যবহার করতো তাদের পরের প্রজন্ম ব্যবহার করবে মেধাশক্তি।

কৃষিতে আমাদের সনাতন পদ্ধতির কারণে আশানুরূপ মাত্রায় উৎপাদনশীলতাকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত সবাই। সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়ে যাবে।

এখন আমাদের সময় সনাতন পদ্ধতিকে পিছনে ফেলার। কাজ হারানোর যে সাময়িক সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা মিটিয়ে খাদ্য নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক কৃষি খাতকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে টেকসই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সুশীলদের কথা শুনলে চলবে না, আশাকরি কৃষকরা এইসব পাত্তা দিবে না।

অগ্রগতির সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতিবাজ ও সুশীলরা। আমাদের এই সময়টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শ্রম নির্ভর অর্থনীতি থেকে প্রযুক্তি নির্ভর অর্থনীতি অর্জন করতে হলে কৃষিতে শ্রমিকের বদলে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে।
(.তথ্য সুত্র: ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *