ডিএসইর নতুন-পুরাতন ট্রেকহোল্ডারদের মধ্যে চলছে চরম বৈষম্য

Uncategorized অর্থনীতি আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বানিজ্য বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : ট্রেডিং ওয়ার্ক স্টেশন (টিডব্লিওএস) চার্জের ক্ষেত্রে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নতুন ও পুরাতন ট্রেকহোল্ডারদের মধ্যে চরম  বৈষম্য তৈরি হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

পুরাতন ট্রেকগুলো ১০টি টিডব্লিওএসের জন্য স্টেশনপ্রতি যে পরিমাণ চার্জ দিচ্ছে, নতুনদের সেখানে একটি স্টেশনের জন্য তার দ্বিগুণ ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে।

পুরাতন ব্রোকারেজ হাউজগুলো একবার এ চার্জ পরিশোধ করলেও নতুনদের প্রতি মাসেই টিডব্লিওএস চার্জ পরিশোধ করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে নতুন ট্রেকহোল্ডারদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাঁরা বলছেন- এটি চরম বৈষম্য যা পুঁজিবাজারের উন্নয়নের অন্তঃরায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র  জানায়, ট্রেক নীতি অনুযায়ী পুরাতন ট্রেকহোল্ডাররা এক থেকে ১০টি টিডব্লিওএসের ক্ষেত্রে প্রতি স্টেশনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে চার্জ প্রদান করে। ১১ থেকে ২০টি টিডব্লিওএসের জন্য স্টেশন প্রতি চার্জ দিতে ১০ হাজার টাকা করে। এছাড়াও ২১ থেকে ২৫টির ক্ষেত্রে প্রতি ষ্টেশনের জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং ২৬টির বেশি টিডব্লিওএসের ক্ষেত্রে প্রতিটির জন্য ৩০ হাজার টাকা করে ডিএসইকে প্রদান করে পুরাতন ট্রেকগুলো। তবে নতুন ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ক্ষেত্রে একক স্টেশনের জন্য চার্জ দিতে হয় ১০ হাজার টাকা।

নতুন ট্রেকহোল্ডাররা বলছেন, গত বছরের (২০২২ সাল) থেকে টিডব্লিওএস চার্জের বৈষম্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ডিএসইর কাছে বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনরায় টিডব্লিওএস চার্জ ইস্যুতে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে নতুন ট্রেকহোল্ডারদেরও পুরাতনদের মতো সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সমাধান মেলেনি।

জানা গেছে, সম্প্রতি নতুন ট্রেক হোল্ডাররা ডিএসই চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবুর সাথে দেখা করেন। এসময় তাঁরা ট্রেডিং ওয়ার্ক স্টেশনের জন্য পুরাতন ট্রেক হোল্ডারদের মতো চারটি শ্রেণিতে ভাগ করে টাকার পরিমান কমানোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে থ্রি আই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইশতাক আহমেদ শিমুল গণমাধ্যম কে  বলেন, আমাদের নতুন ট্রেকহোল্ডারদের প্রতি মাসে একটি টিডব্লিওএসের জন্য ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। আর পুরাতন ট্রেকগুলো এক্ষেত্রে মাত্র একবারই ফি পরিশোধ করে। আমাদের ২০টি টিডব্লিওএস থাকলে প্রতি দুই লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে, অথচ নতুনদের এক্ষেত্রে কোন টাকা দেওয়া লাগবে না। আমরা লেনদেন না করলেও এ ফি প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে, এটি বড় ধরণের বৈষম্য। ফলে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা নতুন শাখা বা ডিজিটাল বুথ করতে পারছি না। এটি আমাদের ওপর জুলুম ছাড়া আর কিছুই না।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা ডিএসইর চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ডিএসইর নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যানও এ বিষয়ে অবগত আছেন। বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শামছুদ্দিন আহমেদ স্যারের নেতৃত্বেও বৈঠক হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি।

জানতে চাইলে কবির সিকিউরিজের সিইও আনোয়ার সাদাত গণমাধ্যম কে  বলেন, বর্তমানে ব্যবসার যে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকার করে স্টেশনপ্রতি টিডব্লিওএস চার্জ দেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। পুরাতনরা আগে থেকেই ব্যবসা করছে, আমরা নতুন আসছি। আমাদের ক্ষেত্রে ওদের সমান টিডব্লিওএস চার্জ দেওয়াও কষ্টকর। অথচ আমরাই ওদের থেকে বেশি টিডব্লিওএস চার্জ দিচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম গণমাধ্যম কে  বলেন, ওয়ার্ক স্টেশন চার্জ নিয়ে ডিএসই থেকে কোন পরামর্শ চাওয়া হলে কিংবা কেউ এটি বিবেচনার জন্য পেশ করলে কমিশন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।

উল্লেখ্য, বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজার সম্প্রসারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথক (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) আইন অনুযায়ী নতুন ট্রেডিং রাইট টাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট (ট্রেক) ইস্যু করে বিএসইসি। এখন পর্যন্ত ৫৮টি নতুন ট্রেক ইস্যু করা হয়েছে।

নতুন ট্রেকগুলো হচ্ছে- ফারিহা নিট টেক্স লিমিটেড, এসকিউ ওয়্যার ক্যাবল কোম্পানি, গিবসন সিকিউরিটিজ, কবির সিকিউরিটিজ, মনার্ক হোল্ডিংস, সোহেল সিকিউরিটিজ, আরএকে ক্যাপিটাল, যমুনা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, স্নিগ্ধা ইক্যুইটিজ, ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ কোম্পানি, সাউথ এশিয়া সিকিউরিটিজ, ট্রিস্টার সিকিউরিটিজ, থ্রিআই সিকিউরিটিজ, সোনালী সিকিউরিটিজ, কেডিএস শেয়ার এবং সিকিউরিটিজ, আল হারামাইন সিকিউরিটিজ, মীর সিকিউরিটিজ, টিকে শেয়ার এবং সিকিউরিটিজ, এনআরবি ব্যাংক সিকিউরিটিজ, এসবিএসি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট, অমায়া সিকিউরিটিজ, প্রুডেনশিয়াল ক্যাপিটাল, তাকাফুল ইসলাম’ সিকিউরিটিজ, বিএনবি সিকিউরিটিজ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স সিকিউরিটিজ, মাহ. বারাকা সিকিউরিটিজ, এএনসি সিকিউরিটিজ, এসএফআইএল সিকিউরিটিজ, তাসিয়া সিকিউরিটিজ, ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ, সেলেস্টিয়াল সিকিউরিটিজ, ট্রেড এক্স সিকিউরিটিজ, অমর সিকিউরিটিজ, ব্যাং জি জিও টেক্সটাইল, মীনহার সিকিউরিটিজ, বিপ্লব হোল্ডিংস, অ্যাসোসিয়েটেড ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ,  বি রিচ, এমকেবি, রহমান কলম্বিয়া সিকিউরিটিজ, স্মার্ট শেয়ার, বেনেময় সিকিউরিটিজ, রিলিফ এক্সচেঞ্জ, সম্রাট সিকিউরিটিজ, এনওয়াই ট্রেডিং, বি এবং বিএসএস ট্রেডিং, অ্যাসুরেন্স সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, সিএএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড, এসবিআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড, উইংস ফিন লিমিটেড, ফারইস্ট শেয়ারস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ট্রাস্ট রিজিওনাল ইক্যুইটি লিমিটেড , ইনোভা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ব্রিজ স্টক অ্যান্ড ব্রোকারেজ, ম্যাট্রিক্স সিকিউরিটিজ, এবং ডিপি ৭ লিমিটেড উল্লেখযোগ্য।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *