বাল্বের দুর্নীতি’ট মাষ্টার মাইন্ড সিমা।

নিজস্ব প্রতিবেদক : কালবে দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড খ্যাত ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা সীমাকে ১০০ কোটি টাকা অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করা হয়েছে। ২০/৬/২০২৩ তারিখে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক মো: শহীদুল আলম সরকার স্বাক্ষরিত এক পত্রে আগামি ৫/৭/২০২৩ তারিখ দুপুর ১২ ঘটিকায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে বলে জানাগেছে।

উল্লেখ্য,সম্প্রতি কালবের ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা সীমা সহ সদ্য সাবেক বোর্ডের কতিপয় সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কৌশলে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাত করত: মানি লন্ডারিং প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদক স্মারক নং-০০.০১.০০০০.৪১১.০১০০৫.২০২২/২৯৬৮২ তারিখ-১১/৮/২০২২। বর্তমানে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা: মো: শহীদুল আলম সরকার,উপ-পরিচালক-দুর্নীতি দমন কমিশন।
সূত্রমতে,দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লিঃ (কাল্ব) দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে। অন্যদের উপর দোষ চাপিয়ে দুর্নীতির তকমা দিয়ে ফাহমিদা সুলতানা সীমা নিজেরই বড় দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্তার প্রমান পাওয়া গেছে।
কালবের নানা প্রকল্পের প্রধান সুবিধাভোগি তিনিই। বার লাইসেন্সের সোয়া পাঁচ কোটি টাকার বাজেট থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করে বড় অংকের সুবিধা নিতে ব্যর্থ্য হয়ে বোর্ডের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে শুরু করেন।
এমনকি বারের চুক্তিপত্রে স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করার পরও প্রত্যাশিত আর্থিক সুবিধা না পেয়ে; চুক্তিপত্রে তার স¦াক্ষর জাল করা হয়েছে বলে উদ্ভট কথা প্রচার করতে থাকেন। এছাড়া কালব রিসোর্টের সকল উন্নয়ন কাজের দরপত্র কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
আবার উন্নয়ন কাজ বুঝে নেয়া কমিটির আহবায়ক ছিলেন তিনি। তাছাড়া,জমি ক্রয় কমিটির হয় আহবায়ক নয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। অথচ তিনি নিজেই জমি ক্রয় ও রিসোর্ট উন্নয়নে দুর্নীতির স্ববিরোধি বক্তব্য প্রদান করছেন।জমি ক্রয় বা রিসোর্টের উন্নয়নে যদি দুর্নীতি হয়ে থাকে;তাহলে তার দায়ভার ফাহমিদা সুলতানা সীমার ওপরও বর্তায় বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।
সূত্রমতে, ইমপেলভিস্তা (৩/১১ হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭) নামের ১টি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর মিঃ কামরুল হাসান হলেন কাল্ব এর বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সীমার আপন বোন জামাই। বোন জামাইকে সহযোগিতা দেয়ার জন্য কালব এর চলমান অনলাইন সফটওয়্যার থাকা স্বত্ত্বেও নতুন করে সফটওয়্যার তৈরির নামে এপ্রিল ২০২১ খ্রিঃ ৭২,৮৫,০০০/- টাকার ওয়ার্ক অর্ডার ভাগিয়ে নেন। উক্ত কাজের মূল কারিগর ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সীমা। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন কাল্ব এর কিছু অসাধু দুর্নীতিবাজ ডিরেক্টর ও কর্মকর্তা।
পরবর্তীতে জানুয়ারী ২০২২ খ্রিঃ একই সফটওয়্যারকে অফ লাইন বলে চালিয়ে দিয়ে ৩৯,০০,০০০/- টাকার ওয়ার্ক অর্ডার ভাগিয়ে নেন। জানাগেছে সফটওয়্যারে অনলাইন বা অফলাইন তেমন কোন পার্থক্য নেই। সামান্য কিছু পরিবর্তন মাত্র। এক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর্মীদের উপর প্রভাব খাটিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা কোন প্রকার ক্রয় সংক্রান্ত নিয়ম কানুন তোয়াক্কা না করে উক্ত কাজ সম্পাদন করান।
কথায় পটু সীমা সকলকে দুর্র্নীতিগ্রস্থ বলে অন্যের উপর দুর্নীতির তকমা দিয়ে নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রিঃ তারিখে ফাহমিদা সুলতানা সীমা কাল্ব এর ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হিসেবে গাইবান্ধা সদর উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ এর একজন প্রতিনিধি/ডেলিগেট। তৎকালে মিসেস সীমা বা তার স্বামীর কোন সম্পদ না থাকলেও বর্তমানে স্বামীর মালিকানাধীন ২টি মাইক্রোবাস রয়েছে। গাড়ী ২টির নম্বর হলো যথাক্রমে ঢাকা মেট্রো চ ১৩-৮৯৫৬ এবং ঢাকা মেট্রো চ ১৪-২১১৬।
এমনকি কালবে বিগত তিন বছরের লুটপাটের টাকায় গাইবান্ধা শহরে একটি নতুন বাড়িও করেছেন। গত ৩ জুন শনিবার কালবের চেয়ারম্যান(পদের বৈধতা নিয়ে আইনগত প্রশ্ন রয়েছে;সমবায় অধিদপ্তরের অবৈধ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রার্থি বা ডেলিগেট আদালতের দ্বারস্থ না হওয়ায় তিনি চেয়ারম্যান পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন) ঢাকা থেকে সদলবলে গিয়ে মহাআড়ম্বরে বাড়ি উদ্বোধন করেন। বিশাল ভুরিভোজের আয়োজন করা হয়।
গাজীপুর জেলাধীন কালীগঞ্জ থানার কুচিলাবাড়ীতে অবস্থিত কালব রিসোর্ট এন্ড কনভেনশন হল কাল্ব এর একটি প্রজেক্ট। উক্ত রিসোর্টটিকে ফাদমিদা সুলতানা সীমা নিজের সম্পত্তি মনে করেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত তিনি সভায় আসলে সাথে একাধিক নেতা, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী নিয়ে হাজির হন যাদের থাকা, খাওয়া এবং যাতায়াতের দায়ভার কাল্ব এর। নাম প্রকাশ নাকরা শর্তে একাধিক ডিরেক্টর এ বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন।ব্যক্তিগত ভিজিটের যাবতীয় ব্যয় তিনি কালব হতে গ্রহণ করেন। এ যেন শরিষাতে ভুত।
বৃহত্তর ‘ক’ অঞ্চল হতে নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বাধীন এলাকায় মোট কর্মীর সংখ্যা ১৭২জন। কর্মীনিয়োগ, বদলীর সকল দায়-দায়িত্ব জিএম এর হলেও কাল্ব ভাইস চেয়ারম্যান ফাহমিদা সুলতানা সীমা টাকার বিনিময়ে প্রতি ২/৩মাস পর পর কর্মী বদল করে বলে শুনা যায়। স্থানীয় প্রায় ১২৪ টি ক্রেডিট ইউনিয়নের মধ্যে ৬৪টি শিক্ষক ক্রেডিট ইউনিয়ন।
উক্ত ক্রেডিট ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে বেশীরভাগ ক্রেডিট ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভায় ফাহমিদা সুলতানা সীমাকে বাধ্যতামূলক প্রধান অতিথি (তার কর্তৃক অঘোষিত সিদ্ধান্ত) হিসেবে দাওয়াত দিতে হয়।
উক্ত দাওয়াতে তিনি নগদ টাকা উপঠোকন হিসেবে গ্রহণ করেন। এছাড়া দাবী করে মাইক্রোবাস ভাড়া আদায় করেন। আবার টাকা নিয়ে কালবে স্টাফ নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।সম্প্রতি এমন অভিযোগের ভিত্তিতে কালব কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বলে জানাগেছে।
তিনি কাল্ব এর বিগত বোর্ডের ৫টি উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমান বোর্ডেও একাধিক উপ-কমিটির সদস্য। বিগত মেয়াদে ঋণ খেলাপী নিয়ন্ত্রণ উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাপী তিনি ট্যুর প্রোগ্রাম করছেন তার আত্মীয় স্বজন নিয়ে। যার সকল ব্যয় বহন করছে কালব। কাল্ব এর স্থানীয় পর্যায়ের বিল ভাউচার দেখলে এর প্রমান মিলবে।
বোর্ড ডিরেক্টর, স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে তিন ভয় দেখান, তার আত্মীয় স্বজন প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের লোক, তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার বাবা দীর্ঘদিনের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তার স্বার্থ পূরণ না হলে তিনি যে কারো ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করবেন না।
কথায় কথায় তিনি বলেন, কাল্ব না থাকলে বা আমি কাল্বে না থাকলে আমার কি?আমাকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে কাজ করতে হবে। না হয় তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে কাজ আদায় করে নিবেন। স্থানীয় জেলা পর্যায়ে কিছু অসাধু কর্মীদেরকে তিনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। বাকী কর্মীগন ভয়ে কোন কথা বলতে নারাজ।
নিজে সকল অপ-কর্মের সাথে লিপ্ত হয়ে অন্যদেরকে দুর্নীতিগ্রস্থ বলছেন আবার সবাইকে ব্ল্যাক মেইল করে স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করছেন এযেন সরিষাতেই ভুত। বর্তমান বোর্ডে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আরো বেপরোয়া। চেয়ারম্যানের ডান হাত তিনি। তাই বোর্ড সদস্য বা স্টাফদের তিনি কেয়ার করেন না।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর বেশকিছু তথ্য আমাদের হাতে আছে এবং নিজস্ব প্রতিবেদক কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে। সমবায় অধিদপ্তর, স্থানীয় শিক্ষা অফিসার, দুর্র্নীতি দমন কমিশনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া সহ কাল্ব এর অভিজ্ঞ ডেলিগেটদের নিয়ে তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টগণ মনে করেন।