একজন বাংলাদেশী মুসলমানের চোখে জার্মানী

Uncategorized আন্তর্জাতিক জীবন-যাপন বিবিধ বিশেষ প্রতিবেদন

ড. এম কে কবির :  আমাদের দেশের অনেকেরই ধারণা জার্মানি গেলেই ওয়াইন, বিয়ার এইগুলি খেতে হয়। এখানকার সাদা মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করা যায় সহজে। ধর্ম-কর্ম সহজে পালন করা যায় না। ব্যাপারগুলি আসলে মোটেই তেমন না বাস্তবে। আজকে একজন মুসলিম হিসেবে এখানকার কিছু বাস্তব চিত্র আপনাদের জন্যে তুলে ধরলাম।


বিজ্ঞাপন

এলকোহল:
জার্মানিতে স্টুডেন্ট সময়কালীন থেকে আজ পর্যন্ত অনেক জার্মান পার্টিতে গিয়েছি। সেখানে জার্মানসহ অন্য দেশীরা এলকোহল খায় বেশিরভাগ, এটা সত্যি। আবার সংখ্যায় অনেক কম হলেও কোনো কোনো জার্মান আছে যারা এলকোহল খায় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এলকোহল জীবনে কোনো দিন খাইনি। আসলে আমার ব্যক্তিগতভাবে এলকোহল এর ঝাঁঝালো গন্ধটা ভালো লাগে না। এছাড়া ধর্মীয় একটা বিধি-নিষেধ তো আছেই যা কিনা ছোট বেলা থেকেই ধারণ করি। এখানে কাউকে এলকোহল খাবার জন্যে কেউ পীড়াপীড়ি করে না। আমায় জার্মানরা অনেক সময় জিজ্ঞেস করে যে, কেন আমি এলকোহল খাই না। আমি তাদেরকে বলি, এলকোহল আমার ভালো লাগে না, এই জন্যে আমি খাই না। আমার কাছে মনে হয় এলকোহল ভালো না লাগার কথা বলাটাই শ্রেয়। একেকজনের একেক কারণে ভালো না লাগতে পারে – যেমন আমার ক্ষেত্রে ঝাঁঝালো গন্ধ, ধর্মীয় বিধি-নিষেধ। জার্মানদের খুব কমন একটা প্রশ্ন, কেন এলকোহল খাই না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমার এই প্রশ্নের উত্তর থেকে তারা এটাও বুঝার চেষ্টা করে যে, আমি লিবারেল মুসলিম নাকি হার্ড মুসলিম। তবে আমাদের বাংলাদেশী অনেকেই জার্মানিতে এলকোহল খান – আমি মনে করি এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

শূকর:
আরেকটা ব্যাপার জার্মানিতে একটু খেয়াল রাখতে হয় বিশেষ করে জার্মান পার্টি বা রেস্টুরেন্ট এ গেলে। এখানে কোন মাংসটা শুকরের এটা জিজ্ঞেস করে নিতে হয়। শূকর যা কিনা ইংলিশ এ Pork বলে, তার জার্মান হলো Schwein. যারা শূকর খান না, তারা জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন Schwein এর ব্যাপারটি খাবার সময়। কোনো খাবার বিশেষ করে মাংসযুক্ত খাবার খাওয়ার সময় ব্যাপারটা খেয়াল রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

হালাল খাবার:
জার্মানিতে হালাল মাংস মোটামুটি সব জায়গায় পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে তুর্কিশ দোকানগুলিকেই আমরা সাধারণত প্রাধান্য দেই। তবে এরাবিয়ান দোকানও পাওয়া যায় যেখানে হালাল মাংস বিক্রি হয়।

সকল মুসলিম ভাই-ভাই:
কোরানের সূরা আল-হুজুরাত (Surat al-Hujurat 49:10 ) এ বলা আছে, সকল মুসলিম ভাই-ভাই। জার্মানিতে যদি দুইজন মুসলিমের মধ্যে কোথাও পরিচয় হয়, তা হলে তারা খুব সহজে “Bruder” বা “ভাই” বলে সম্ভোধন করে। এই ব্যাপারটি আমার অনেক ভালো লাগে। মনে হয়, ইসলাম ধর্মের মধ্যে শিখানো ভ্রাত্তিত্বের বন্ধনটা আসলেই অনেক গভীর।

ঈদ এর ছুটি:
জার্মানিতে মুসলিম কমিউনিটি চেষ্টা করেছিল দুই ঈদ এর দুইটি দিন ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করতে সরকারকে দিয়ে। যেহেতু ঈদ এর দিনগুলি ফিক্সড করা যায় না আগে থেকে, এই জন্যে ঈদের দিনকে সরকার ছুটি ঘোষণা করতে পারেনা। তবে ঈদ এর সময় মুসলিম প্রায় সবাই ছুটি নেয় অফিস থেকে। এতে কোনোদিন কারো সমস্যা হয়েছে বলে শুনিনি।

অফিস চলাকালীন নামাজ:
আমি অনেক মুসলিম কলিগকে দেখেছি তারা অফিস এর মধ্যে কোনো একটা রুম এ নিয়মিত নামাজ আদায় করে নেয়। এখানে কখনো কোনো বাধা এই ক্ষেত্রে আমার জব লাইফ এ শুনিনি। অফিস এর কর্মসূচি রক্ষা করে নিয়মিত নামাজ আদায় করা এখানে আসলেই সম্ভব। কাজেই যারা প্রাকটিজিং মুসলিম, তাদের জন্যে আশা করি জার্মানি ভালো একটা দেশ হবে এই ক্ষেত্রে।

মুসলিম মেয়েদের স্কার্ফ:
এখানে অফিস, আদালত, রাস্তা-ঘাট সব জায়গায় দেখা যায় মুসলি মেয়েদের অনেকেই মাথায় স্কার্ফ পরে চুল ঢেকে চলাফেরা করে। মুসলিম মেয়েদের পর্দা করে চলার ব্যাপারটি এখানে খুব দেখা যায়। কাজেই যারা দেশে থাকতে পর্দা করতেন, তারা এখানে এসেও সেই পর্দা করতে পারবেন।

জার্মানিতে মসজিদ:
জার্মানিতে অসংখ্য মসজিদ আছে যেখানে আপনি নামাজ পড়তে যেতে পারেন। যদিও এখানে অফিসিয়ালি মাইক এ জোরে আজান দেবার নিয়ম নেই। তারপর ও ভালো লাগে জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন শহরে মসজিদগুলো দেখে। বাংলাদেশিরাও এখানে অনেক জায়গায় ফ্লাট ভাড়া নিয়ে বা ফ্লাট কিনে মসজিদ করেছেন। এখানে বাংলাদেশি সহ অন্যান্য দেশের মুসলমানরা এসে নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।

জুম্মা:
জার্মানিতে সাধারণত: আমার জব লাইফ এর সব সময় জুম্মার টাইম আমার ক্যালেন্ডার এ ব্লক করে রাখি। অফিস এর মুসলিম কয়েকজন কলিগ মিলে এক সাথে জুম্মা পড়তে যাই সব সময়। তারপর এক সাথেই বাইরে কোথাও ভালো রেস্টুরেন্ট এ খেয়ে আবার অফিস এ আসি। এই ব্যাপারটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে। আল্লার কাছে শুকরিয়াও করি এই জন্যে যে, এই রকম একটা দেশে এসেও এভাবে জুম্মার নামাজটা পড়তে পারি।

উপসংহার:
অন্য ধর্মের যারা আছেন (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান), আশা করি তারাও তাদের অভিজ্ঞতাগুলি শেয়ার করবেন। তা হলে আমরা হয়তোবা বুঝবো খ্রীষ্টান প্রধান জার্মানি আসলেই সব ধর্মের জন্যে কেমন। আমি একজন মুসলমান হিসেবে আমার অভিজ্ঞতাগুলি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। কিছু লিমিটেশন হয়তোবা আছে এই দেশে। তারপরও আমার মতে, জার্মানি একটি চমৎকার দেশ, একজন মুসলমানের জন্যে। (ফেসবুক থেকে নেওয়া)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *