কলকাতার বাইরের পশুর হাটের চিত্র।

শিউলি মিতু (কলকাতা) : বৃহস্পতিবার ২৯ জুন, ঈদুল আজহা। ত্যাগ আর উৎসবের মিশেলে গোটা বিশ্বের সঙ্গে ঈদুল আজহা পালন করবেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। কিন্তু,এবারের আসন্ন পঞ্চায়েতের নির্বাচনের সহিংসতা এবং একটানা বৃষ্টিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে রাজ্যজুড়ে পশুর হাটগুলোতে। ব্যতিক্রম শুধু কলকাতা। কারণ, শহর পঞ্চায়েতমুক্ত। তবে এখানেও ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে বৃষ্টি। তার ওপর এবার শহরের ভেতরে সেভাবে অনুমতি নেই অস্থায়ী পশুর হাটের।

শহরের সড়ক পরিষ্কার রাখার লক্ষ্যে কলকাতার একটু বাইরে বসেছে অস্থায়ী পশুর হাটগুলো। মূলত, বিক্রির জন্য কয়েকদিন ধরে রাজপথে পশু থাকার কারণে প্রচুর মলমূত্র ছড়িয়ে থাকে। যার ফলে শহরের সাফাই কর্মীরা ঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। এ সমস্যার জন্যই একপ্রকার শহরের বাইরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী পশুর হাটগুলো। এখনো পুরোপুরি সরানো না গেলেও, পরের বছর থেকে আর শহরে বসবে না পশুর হাট।
ফলে বিগত বছরগুলোতে শহরের মেটিয়াব্রুজ, গার্ডেনরিচ, রাজাবাজার, নারিকেল বাগান, মতিঝিল ইত্যাদি এলাকায় যেভাবে গরু, ষাঁড় এবং ভিন রাজ্যের রঙ-বেরঙের অস্থায়ী পশুর হাটের দেখা যেতো, এবার তা উধাও। এসবই এবার শহরে বাইরে এবং হাইওয়ের আশেপাশে বসেছে।
ব্যতিক্রম শুধু জাকারিয়া স্ট্রিট এবং খিদিরপুর। যদিও সেখানে গরু পাওয়া যায় না। এবারও নেই। শহরে অস্থায়ী হাট বলতে এ দুটোই রয়েছে।
এবারের অস্থায়ী হাটগুলোতে গরু প্রায় পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। আর তাই দেশি গরুর হাটগুলোতে শেষবেলায় জমে উঠেছে বেচাকেনা। অনেক বিক্রেতার হাঁক ডাক শোনা গেল, ‘খাসির দামে গরু নিয়ে যান। ’
বাসন্তী এলাকায় এসব হাটে দেশি গরু বিক্রি হচ্ছে ২০ হাজার রুপির মধ্যে। ঠিক মতো দর করতে পারলে অনেকক্ষেত্রে ১৫ হাজারেও মিলছে গরু। যেগুলোর ওজন ৭০ কেজি থেকে একশ কেজি, সর্বোচ্চ ১২০ কেজি। যেখানে ২০-২৫ কেজি ওজনের খাসি বিক্রি শুরুই হচ্ছে ১৫ হাজার রুপি থেকে। তাই এবারে গরুর চাহিদা অনেকটাই বেশি।
পাশাপাশি ভিন জাতের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে আকার এবং মান অনুযায়ী, এক লাখ রুপি থেকে ৯ লাখ রুপি। যদিও এগুলোর একটাও পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশে চাষ হয় না। সব আসে ভিন রাজ্য থেকে। তবে এগুলোর এবার বিশেষ চাহিদা নেই। এজন্য বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন অনেকে। ফলে চাহিদা বেশি দেশি গরুর। দামও সাধ্যের মধ্যে, বিলানোর পর মাংসের পরিমাণ যথেষ্ট ভালোই থাকবে পরিবারের জন্য।
বিক্রেতাদের মতে, এবারে দেশি গরুর প্রজনন ভালো হয়েছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী পশুর সংখ্যা বেশিই। গত সোমবার ২৬ জুন, কলকাতার পশু হাটগুলোর সর্বত্র এমনই চিত্র দেখা গেল।
অপরদিকে, দেশি খাসির পাশাপাশি ভিন রাজ্যের খাসি (প্রজাতি অনুযায়ী ) দাম শুরু হচ্ছে ৪০ হাজার রুপি থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ। এ সময় শহরে সবচেয়ে বেশি খাসি কিনে থাকেন কাবুলিওয়ালা অর্থাৎ আফগান সম্প্রদায়। শহরের ভবানীপুর, তালতলা, এন্টালি- এসব এলাকায় বহু বছর ধরে তারা বাস করে আসছেন। সব মিলিয়ে ৬ হাজারের মতো কাবুলিওয়ালা আছেন কলকাতায়। কোরবানি হিসেবে এদের পছন্দ খাসি কিংবা ভেড়া।
অপরদিকে, চাহিদা না থাকলেও মোটের ওপর ভালোই বিক্রি হচ্ছে উট এবং দুম্বার। ফলে সবকিছু ভুলে কোরবানি উপলক্ষ্যে শেষ বেলায় জমে উঠেছে কলকাতার পশুর হাটগুলো।
ঈদুল আজহা অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। একে ভারতে বকরা ঈদও বলা হয়। হিজরি বর্ষের দ্বাদশ মাস তথা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে এ ঈদ অনুষ্ঠিত হয়। বহুকাল ধরে পশ্চিমবঙ্গে এই পর্ব অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই হয়ে আসছে।
প্রশাসন চাইছে, এবারও তার ব্যতিক্রম যেন না হয়। এবারও ঈদ হোক উৎসবের, আনন্দের। পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বজায় থাকুক সাম্য ও ঐক্য এই প্রত্যাশা কলকাতার মুসলিম সম্প্রদায়ের।