এ দেশে Bond (বন্ড) ব্যবস্থাপনা :History of Bond

Uncategorized অর্থনীতি আইন ও আদালত জাতীয় বানিজ্য বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

মোহাম্মদ বেলাল  হোসেন চৌধুরী ঃ  Robert Walpole নামক ব্রিটিশ পলেটিশিয়ান ও ব্রিটিশ শাসক ১৭৩৩ সালে বন্ড ব্যবস্থার ধারনা/প্রস্তাব দেন ও চালু করেন। প্রথম দিকে “এক্সাইজ স্কিম” এর আওতায় শুধুমাত্র Tobacco and Wine জাতীয় পণ্য বন্ডেড ওয়্যারহাউজে রাখা হতো এবং ওয়্যারহাউজে রক্ষিত পণ্য এক্সাইজ শুল্ক পরিশোধ করে পণ্য অপসারণ করা হতো। তবে এ প্রস্তাব তৎকালিন সময়ে তেমন ভাবে জনপ্রিয় ছিল না তদুপরি এ ব্যবস্থা ১৮০৩ সাল পর্যন্ত চালু ছিল।


বিজ্ঞাপন

১৮০৩ সালে এ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করে বন্ডেড ওয়্যারহাউজে আমদানী পণ্য রাখার বিধান চালু করা হয়, সেক্ষেত্র এখনকার মতো বন্ড দিয়ে( এখন যেটা জেনারেল বন্ড) পণ্য খালাস করে গুদামজাত করা হতো, পরবর্তীতে শুল্ককর পরিশোধ করে ওয়্যারহাউজ থেকে পণ্য বাহির করা হতো (এখনকার হোম কনজাম্পশন বন্ড)।


বিজ্ঞাপন

পরবর্তীতে সময়ের ব্যবধানে অন্যান্য কর্মকাণ্ড যোগ হয়। বন্ডে পণ্য রেখে তা পরবর্তী ব্যবস্থার মুল উদ্দেশ্যই ছিল শুল্ককর একসাথে না দিয়ে কিছুটা উপশম ব্যবস্থায় যথাযথ রাজস্ব আদায় ও শিল্প বিকাশে সহায়ক, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ তথা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

বন্ডেড ওয়্যারহাউজ কি ?

বন্ড বা বন্ডেড ওয়্যারহাউজ হলো এমন একটি সুরক্ষিত জায়গা/ গুদাম/ ওয়্যার হাউস যেখান শুল্ক করাদি পরিশোধ না করে আমদানিকৃত পণ্য খালাস করে রাখা হয়। অবশ্য এ উদ্দেশ্যে রাখা হয় পরবরতীতে এ পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরন করে রপ্তানী বা শুল্ক পরিশোধ করে দেশীয় ভোগের জন্য খালাস করা হবে।

১৭৩৩ সালে ইংল্যান্ডে বন্ড ব্যবস্থাপনা চালু হলে পরবর্তীতে ব্রিটিশরাই তা এ উপমহাদেশে চালু করেন। ১৮৭৮ সালে এ উপমহাদেশে Sea Customs Act, 1878 চালু হয়। পাকিস্তানী আমলে সী কাস্টমস এক্ট,১৮৭৮ বাতিল করে সেই বাতিলকৃত আইনের ধারা বিধি মোটামুটি একি রেখে দি কাস্টমস এক্ট ১৯৬৯ জারী করা হয়, যা এখনো চালু আছে। সেই কাস্টমস আইনের একাদশ অধ্যায় মানে সেকশন ৮৪ থেকে ১১৯ তে বন্ড ব্যবস্থার কথা বিস্তারিত বলা হয়েছে- অবশ্য

দি কাস্টমস এক্ট ১৯৬৯ এর সেকশন ১২ ও ১৩ ধারা অনুযায়ী বন্ড লাইসেন্স প্রদান করা হয়।সেকশন ১২ অনুযায়ী সরকারী প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স ও সেকশন ১৩ অনুযায়ী বেসরকারি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স প্রদান করা হয়। বন্ড লাইসেন্স পাওয়ায় পূর্বে বন্ড আবেদন চৌহদ্দি এলাকাকে NBR ওয়্যারহাউজিং স্টেশন ( সেকশন ১১ অনুযায়ী) ঘোষনা করিয়ে নিতে হয়। ব্রিটিশ ও পরবর্তীতে পাকিস্থান পিরিয়ডে বন্ড প্রথা প্রচলিত ছিল। তখন মুলত ব্যবসা বানিজ্য সহজ ও সহনীয় করার লক্ষ্যেই এ বন্ড প্রথা প্রচলন করা হয়েছিল। সে সময় মুলত হোম কনজাম্পশন ( দেশীয় ভোগের প্রতিষ্ঠান) বন্ড প্রথা প্রচলিত ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮০ দশকের প্রথম দিকে এদেশে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু হয়। পুরনো ঢাকার ঊদূ রোডের রিয়াজ গার্মেন্টস দেশের প্রথম গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান।

আর এই গার্মেন্টস ব্যবসার প্রসারের লক্ষ্যে ও অধিক পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আহরন কল্পে রপ্তানিমুখী বন্ড প্রথা পুরোদমে চালু করা হয়। বন্ডে যেহেতু শুল্কযোগ্য পণ্য শুল্ক প্রদান ব্যতিরেক রাখা হয় সেহেতু পূর্বে এই বন্ড গুদামের তালা চাবি শুল্ক ডিপার্টমেন্ট এর বন্ড অফিসারের (ইন্সপেক্টর এখন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ) হাতেই থাকতো (এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে যেমন : ডিপ্লোম্যাটিক বন্ড ) কিন্ত পরবর্তীকালে গার্মেন্টস বন্ডের আওতায় এলে দেখা যায় গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান অফিস সময়ের পরও বন্ড থেকে কাঁচামাল বাহির করার প্রয়োজনে চাবি সংরক্ষনকারী কাস্টমস অফিসার বা বন্ড অফিসারকে সহজ ভাবে পাওয়া যায় না আবার একি অফিসারের অধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চাবি থাকলে তার পক্ষে একি সময়ে সব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে বন্ড গুদামের তালা খুলে উপকরণ বাহির করে দেয়াও কষ্টসাধ্য।

এ জটিলতা সহজীকরনের জন্য এলো “স্পেশাল বন্ডেড ওয়ার হাউস” এর ধারনা। অর্থাৎ গার্মেন্টস শিল্প ও সহযোগী শিল্পের বন্ডের চাবি তাদের হাতেই থাকবে। তারা তাদের প্রয়োজনীয় মুহুর্তে বন্ড থেকে কাচামাল বাহির করে পণ্য উৎপাদন করবেন এবং তার একটি হিসাব যথাযথ ভাবে সংরক্ষন করবেন।

বন্ডের যাবতীয় কর্মকাণ্ড প্রথম দিকে কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম, ঢাকা থেকে পরিচালিত হতো। কিন্ত বন্ডেড প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পাওয়ায় ৯০ দশকের শেষ দিকে বন্ড কমিশনারেট নামে নতুন কমিশনারেটের যাত্রা শুরু হয়। ঢাকায় হয় এর মুল অফিস আর চট্টগ্রামে হয় আঞ্চলিক অফিস। বন্ডের প্রথম কমিশনার হন মিসেস হাসিনা খাতুন, যিনি ছিলেন এদেশের কাস্টমসের ইতিহাসে প্রথম মহিলা কমিশনার, যিনি ছিলেন যথেষ্ট দক্ষ অফিসার।

২০১১ সাল থেকে দুটি স্বতন্ত্র বন্ড কমিশনারেট চালু করা হয় যা হলো:

(১) কাস্টমস বন্ড কমিশনার, ৩৪২/১ সেগুনবাগিচা, ঢাকা;
(২) কাস্টমস বন্ড কমিশনার, ৪২ এম,এম আলী রোড, লালখান বাজার, চট্টগ্রাম।

বর্তমানে ঢাকা বন্ড কমিশনারেট কে ঢাকা (উত্তর) এবং ঢাকা (দক্ষিণ) দুভাগে বিভক্ত করা হয়েছে উভয়ের অফিস পুরনো অফিসে বিদ্যমান রয়েছে।

বিভিন্ন সময় বন্ড কমিশনারেট চালাতে গিয়ে জারী হলো বিভিন্ন আদেশ, প্রজ্ঞাপন । এলো বন্ড লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০০৮ এ বিধিমালা অনুযায়ী বর্তমান পাচ প্রকার বন্ড লাইসেন্স/রেজিস্ট্রেশন (ইপিজেড ও অর্থনৈতিক এলাকায়) এখান থেকে প্রদান করা হয়;

(১) সম্পূর্ণ রপ্তানিমূখী বন্ড প্রতিষ্ঠান ;
(২) প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমূখী বন্ড প্রতিষ্ঠান ;
(৩) ডিউটি ফ্রি ও ডিউটি পেইড বন্ড প্রতিষ্ঠান;
(৪) সম্পূর্ণ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানীমূখী (ইপিজেড এলাকায় ) বন্ড প্রতিষ্ঠান;
(৫) সম্পূর্ণ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিমূখী (BEZA Bangladesh Economic Zone Authority) বন্ড প্রতিষ্ঠান ;
(৬) বাংলাদেশ হাইটেক পারক আইন অনুযায়ী উক্ত পারকে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান;

বি:দ্র: বর্তমানে হোম কনজাম্পশন বন্ড লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রয়েছে।তবে আগের লাইসেন্স ইস্যু করা কিছু প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে।

কাস্টমস এক্টের ধারা ৮৬ অনুযায়ী জেনারেল বন্ড, রিস্ক বন্ড প্রদান পূর্বক বন্ডার পণ্য/কাঁচামাল তার বন্ড গুদামে রাখেন। পরবর্তীকালে সেকশন ৯৮ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বন্ডার কাঁচামাল দ্বারা মুল পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করে থাকেন।

বন্ড কমিশনারেট এর কাজ কি?

বন্ড কমিশনারেট এর প্রধান প্রধান কাজ নিম্নরূপ :

(১) শিল্প বান্ধব নতুন প্রতিষ্ঠানকে বন্ড লাইসেন্স প্রদান করা,

(২) পূর্বের লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠান যথাযথ কার্যক্রম করছে কিনা তা মনিটর করা,

(৩) পূর্বের লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ন ও অডিট করা,

(৪) প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত প্রাপ্যতা বা নতুন মেশিনের প্রাপ্যতা নির্ধারণ করা,

(৫) প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ, স্থানান্তর ও নতুন কাঁচামাল অন্তর্ভুক্তিকরন বাস্তবায়ন করা,

(৫) হোম কনজাম্পশন বন্ড থেকে যথাযথ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা,

(৬) ডিউটি ফ্রি শপ ও ডিউটি পেইড, ডিপ্লোম্যাটিক বন্ড প্রতিষ্ঠান অডিট ও মনিটরিং,

(৭) সেকশন ৯৮ মোতাবেক নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য রপ্তানী বা খালাস নিতে অক্ষম হলে বন্ডারকে ঐ পণ্য সংশ্লিষ্ট শুল্ককর দাবীনামা জারী করে আদায় করা মানে মেয়াদউত্তীন পন্যের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।

(৮) পন্য সেকশন ৮৬ অনুযায়ী প্রথমে পণ্য ইন টু বন্ড ও পরবর্তীকালে সেকশন ১০৪ অনুযায়ী হোম কনজাম্পশনের ক্ষেত্রে ডিউটি পেমেন্ট করে পণ্য এক্স বন্ড অন্য ক্ষেত্রে সেকশন ১০৫ অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করছে কিনা তা মনিটর করা। উল্লেখ্য যে রপ্তানির ক্ষেত্রে কোন ডিউটি পরিশোধের বিষয় নেই।

(৯) বন্ড লাইসেন্সধারী নাম মাত্র প্রতিষ্ঠান যারা রপ্তানিকারক সেজে অনিয়ম করে তা তদন্ত করে লাইসেন্স বাতিল করা।

(১০) পণ্য উৎপাদ উপকরণ বা সহগ এর বাইরের পণ্য বন্ড লাইসেন্স থেকে বাদ দেওয়া।

(১১) রপ্তানির বিপরীতে প্রকৃত বৈ:মুদ্রা আসছে কি না তা যথাযথ মনিটরিং। আজ এতটুকু দিলাম, এখন পাঠকবৃন্দ আপনাদের দোয়া মতামত কাম্য । (মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরীর টাইম লাইন থেকে নেওয়া)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *