চা-ওয়ালা সেজে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা মুল্যের ৪১ হাজার পিস ইয়াবা সহ ইয়াবা ইয়াবা সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ ৫ জন কে গ্রেফতার করলো ডিএনসি’র কর্মকর্তারা

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব  প্রতিবেদক  : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকেই মাদক অপরাধ নিয়ন্ত্রনে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আসছে। মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারসহ নেশার মরণ ছোবল থেকে অপামোর জনসাধারন বিশেষ করে তরুন ও যুব  সমাজকে রক্ষার জন্য ঢাকা মহানগরীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রোঃ কার্যালয় (উত্তর) এর জোরালো কার্যক্রম অব্যাহত আছে।


বিজ্ঞাপন

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর) এর
উপপরিচালক জনাব মোঃ রাশেদুজ্জামান এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং সহকারী পরিচালক, ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর) মোঃ মেহেদী হাসান এর নেতৃত্বে গুলশান, রমনা, উত্তরা, ধানমন্ডি, তেজগাঁও সার্কেলের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিম গঠন করে গত বুধবার ১২ জুলাই  রাত থেকে  গতকাল বৃহস্পতিবার  ১৩ জুলাই  পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক ০৩টি অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৪১০০০ (একচল্লিশ হাজার) পিস ইয়াবাসহ ৬(ছয়) জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের তথ্য যথাক্রমে ঃ সাধন তনচংগ্যা (২৫), পিতা: চিকন জয় তনচংগ্যা থানা: রাঙ্গামাটি সদর, জেলা: রাঙ্গামাটি। (উদ্ধারকৃত আলামত : ১১ হাজার পিস ইয়াবা) ফাতেমা (৩৫), পিতা: মৃত: আব্দুল কাদের, থানা: টেকনাফ, জেলা: কক্সবাজার। (উদ্ধারকৃত আলামত : ২ হাজার পিস ইয়াবা) মোছাঃ মমিনা বেগম (২০), পিতা: সেলিম, থানা: টেকনাফ, জেলা: কক্সবাজার। (উদ্ধারকৃত আলামত : ২ হাজার পিস ইয়াবা), মোঃ ইয়াকুব আলী (৪০), পিতা: মৃত: মহিউদ্দিন,থানা: পীরগঞ্জ, জেলা: রংপুর।(উদ্ধারকৃত আলামত : ২৫ হাজার পিস ইয়াবা) এবং মোঃ নাঈম (২৪), পিতা: মোঃ নাজিম উদ্দিন, থানা: নরসিংদী, জেলা: নরসিংদী।(উদ্ধারকৃত আলামত : ১ হাজার পিস ইয়াবা) সর্বমোট আলামত : ৪১ হাজার পিস ইয়াবা ও আসামী ০৫ জন ।

চা বিক্রেতার ছদ্মবেশ ধারন করে ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেফতার :  ইতোপূর্বে উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের কয়েকটি মাদক/ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মাদকের চালান ঢাকায় আটক করলে উক্ত সিন্ডিকেটের মাদক ব্যবসায়ীরা ডিএনসির অভিযানের বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বন করে। মাদক বা ইয়াবা লেনদেনের পূর্বে মাদক ব্যবসায়ীদের ৪-৫ জনের একটি দল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ত পর্যবেক্ষন করে এবং তাদের ক্লিয়ারেন্সের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে মাদকের লেনদেন সম্পন্ন করে। তাদের এই তৎপরতা সম্পর্কে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানতে পারে এবং তাদের  কাছে তথ্য আসে যে দারুস সালাম থানাধীন গাবতলী এলাকায় এ চক্রের বিপুল পরিমাণ ইয়াবার একটি চালানের লেনদেন হবে। এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে গতকাল বৃহস্পতিবার  ১৩ জুলাই,  সকাল ১১:০০ ঘটিকার দিকে উক্ত স্থানে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর) এর চৌকশ কর্মকর্তাগণ চা বিক্রেতার ছদ্মবেশে সেখানে অবস্থান নেয়।

প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক সকাল ১১ টার  দিকে রাঙ্গামাটি হয়ে উত্তরবঙ্গের মাদক চোরাকারবারীর অন্যতম সদস্য সাধন তনচংগ্যা (২৫) কে মহিলাদের ব্যবহৃত পেটিকোটের ভিতরে বিশেষভাবে তৈরি পকেটে ১১০০০ (এগারো হাজার) পিস ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারের পর আসামী জানায়, টেকনাফ হতে ইয়াবা সংগ্রহ করে প্রথমে রাঙ্গামাটি নিয়ে যায়, সেখান থেকে একটি পরিবহনযোগে গাবতলী এলাকায় অবস্থানরত উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের মাদক ব্যবসায়ীর কাছে সরবরাহ করে।

নৌপথে চাঁদপুর হয়ে ঢাকা ইয়াবার চোরাচালান ঃ ঢাকার প্রবেশমূখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ডিএনসির নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা ঢাকায় মাদক চোরাচালানের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে। আমাদের কাছে তথ্য আসে টেকনাফের একটি মাদকচক্র প্রথমে চাঁদপুর জেলায় অবস্থান করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী ও চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখান থেকে নৌপথে লঞ্চযোগে ঢাকায় মাদক চোরাচালান করছে।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে গতকাল বৃহস্পতিবার ১৩ জুলাই,  বেলা ১২ টার  দিকে এমনি একটি চক্রের ২ জন মহিলা সদস্য চাঁদপুর হতে লঞ্চযোগে মাদকের একটি চালান নিয়ে সদরঘাট এলাকায় অবস্থান করবে।

ডিএনসির অপর একটি টিম উল্লেখিত  স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ফাতেমা (৩৫) ও মোছাঃ মমিনা বেগম (২০) কে ৪০০০পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃত আসামীরা জানায় তাদের দুজনের বাড়ি টেকনাফে। আইন-শৃঙ্খলা নজরদারি ফাঁকি দিয়ে টেকনাফ হতে প্রথমে ইয়াবার চালান চাঁদপুর অবস্থান করে এবং পরবর্তীতে লঞ্চযোগে ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে তারা বাড়তি সর্তকর্তা হিসেবে লাগেজের ভিতরে বিশেষ কৌশলে চেম্বার করে লুকিয়ে ইয়াবা পরিবহন করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একই পদ্ধতি অবলম্বন করে একাধিক ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে এসেছে।

ট্রাভেলারের ছদ্মবেশে মোটরসাকেল যোগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ইয়াবা চোরাচালানঃ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের  কাছে তথ্য আসে রংপুর কেন্দ্রীক কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও একাধিক মাদক মামলার আসামী মোঃ ইয়াকুব আলী (৪০) মিরপুরের কালশি এলাকায় করে দীর্ঘদিন ঢাকার মিরপুর ও উত্তরবঙ্গের রংপুর অঞ্চলে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছে। তার মাদক চোরাচালানের কৌশল একটু ভিন্ন ধরণের। টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সে সরাসরি নিজেই মাদকদ্রব্য সংগ্রহ ও পরিবহন করে ঢাকায় নিয়ে আসে। প্রথমে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অবস্থান করে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে হোটেলে অবস্থান করে মজুদ করে। পরবর্তীতে ইয়াবার বড় চালান বিভিন্ন কৌশলে সে ঢাকায় নিয়ে আসে। এ জন্য তার রয়েছে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল। তার সহযোগিরা প্রাইভেটকার যোগে প্রথমে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষন করে তাদের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর মোটরসাইকেলযোগে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। মোটরসাইকেলে আরোহন অবস্থায় সে ট্রাভেলারের বেশভূষা ধারণ করে, যাতে সহজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাকি দেয়া যায়।

এই পদ্ধতিতে ইতোপূর্বে সে বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান নিয়ে আসে বলে মাদক কর্মকর্তাদের  কাছে তথ্য ছিল। এসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে এবং সর্বশেষ জানতে পারে যে, কক্সবাজার হতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার একটি চালান নিয়ে ঢাকার মিরপুর, কালশী এলাকায় আসবে।

উক্ত তথ্য মোতাবেক ডিএনসির ঢাকা মেট্রো: কার্যালয় (উত্তর) এর রমনা ও গুলশান সার্কেল এর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকশ টিম নিয়ে ১৩/০৭/২০২৩ ইং তারিখ বিকাল ৪ টার  সময় হতে কালশী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

মোটরসাইকেল যোগে উল্লেখিত যায়গায়  আসলে ২৫০০০
পিস ইয়াবা ও মোটরসাইকেলসহ কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মোঃ ইয়াকুব আলী (৪০)কে গ্রেফতার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সে কক্সবাজারে অবস্থান করে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে মোটরসাইকেল যোগে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং এ ইয়াবার চালান পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে রংপুরে নিয়ে যেত। তার বিরুদ্ধে পূর্বে বিভিন্ন সময়ে ৭টি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

অপরদিকে একই দিন সকালে তেজগাঁও সার্কেলের অপর একটি টিম ফার্মগেট এলাকা হতে অপর একজন মাদক ব্যবসায়ী (নাঈম) কে ১০০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) মোতাবেক সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোঃ (উত্তর) কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান জানান, জাতীয় ও জনস্বার্থে দেশের যুব সমাজ কে মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা করতে মাদক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মাদকের বিরুদ্ধে ‘ শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি বাস্তবায়ন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) সচেষ্ট থাকবে এবং ভবিষ্যতে ও ।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *