জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে এক বিশেষ সেমিনার অনুষ্ঠিত 

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক ;  হর্টের পেসমেকার ও ভাল্বসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ন্যায্য মূল্যে বিক্রির জন্য মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্যদের অংশগ্রহণে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে,  এ খবর নিশ্চিত করেছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আতিয়া সুলতানা।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে,  রবিবার  ৬ আগস্ট  সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে,  হার্টের পেসমেকার ও ভাল্বসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়ের লক্ষ্যে মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি সেমিনার এর আয়োজন করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

উল্লেখিত  সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)  এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান এবং সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের পরিচালক  মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকগণ, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, ডিজিএফআইয়ের প্রতিনিধি, এনএসআইয়ের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সদস্যবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

সেমিনারের শুরুতেই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সেমিনার আয়োজনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নকল ও ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ভোক্তারা কোন পণ্য বা সেবা ক্রয় করে প্রতারিত হলে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করে থাকেন। প্রায়শই ভোক্তাগণ হার্টের পেসমেকার, রিং ও ভাল্বসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট উচ্চ মূল্যের বিষয়ে অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন।

সে প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মহাপরিচালকের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৩ জুলাই,  রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দি স্পন্দন লিমিটেড . নামক হার্টের পেসমেকার ও ভাল্ব বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সভার শুরুতে অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল পরিচালিত অভিযানের সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরেন। অভিযান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান PM3562 model এর পেসমেকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪,৮০,০০০ টাকা থাকলেও উল্লেখিত  প্রতিষ্ঠান তা ৫,৪৯,০০০ টাকায় বিক্রি করেছিল।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে মেয়াদোত্তীর্ণ Trifceta valve, Epie valve পাওয়া যায় এবং ফ্রিজে ঔষধের সাথে কাঁচা সবজিপণ্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তদারকিকালে আরও পরিলক্ষিত হয় পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয় রশিদে কার্বন কপি ব্যবহার না করে ক্রেতার নিকট থেকে ইচ্ছেমত পণ্যের মূল্য নেওয়া হচ্ছিল।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান দি স্পন্দন লিমিটেড . কে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৪০ ও ৫১ ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে ৬০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম জনস্বার্থে সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়।

এছাড়াও অভিযানে হার্টের পেসমেকার ও ভাল্বসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট বিক্রির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অসংগতি যথা মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে ডিভাইস বিক্রয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস পাওয়া, ফ্রিজে ডিভাইস ও ঔষধের সাথে কাঁচা সবজিপণ্য সংরক্ষণ করে রাখা, পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয় রশিদে কার্বন কপি ব্যবহার না করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

আলোচনায় মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি বলেন ২০১৭ সাল থেকেই আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসে মূল্য থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তাদের এসোসিয়েশনের সকল সদস্যগণ তা মেনে চলেন। তাছাড়াও ডাক্তারগণ এসকল ডিভাইসের মেয়াদ মূল্য যাচাই করে স্থাপন বা ব্যবহার করেন।

মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারন সম্পাদক বলেন ২০১৭ সালে প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী মেডিকেল ডিভাইস রেজিস্ট্রেশন ও মূল্য ছাড়া বাজারজাত করা যায় না। আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় মেডিকেল ডিভাইসের ৯৫ শতাংশই আমদানি করা হয়। স্বল্প সময়ে সকল মেডিকেল ডিভাইসের রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হয়নি, তবে তা চলমান রেয়েছে। তাছাড়াও নীতিমালা অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য লাল কালি দিয়ে’ নট ফর সেল’ লিখে মূল স্টোরের বাইরে সংরক্ষণ করতে হবে।

সভায় ূদি স্পন্দন লিমিটেড . এর প্রতিনিধি তাদের প্রতিষ্ঠানে অভিযানের বিষয়ে বলতে গিয়ে তাদের অবহেলার কথা স্বীকার করেন এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সচেতন থাকবেন মর্মে সভাকে অবহিত করেন।

আলোচনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি জানান আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসে অবশ্যই উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, মূল্য, ভিএআর  নম্বর এবং এমএ  নম্বর অবশ্যই থাকতে হবে।

সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি জানান জেলা ও উপজেলা সদর হাসপাতালসহ সরকারি মেডিকেল হাসপাতালে এ বিষয়ে তাঁদের অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ফলো আপ করে।

বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি জানান গত কয়েক মাসের ডাটা এনালাইসিস করে আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্যের ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত এবং তিনি তা অধিকতর পর্যালোচনার পরামর্শ প্রদান করেন।

সভায় মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তা অধিকারের ব্যপ্তি এমন যেখানে ভোক্তার অধিকার রয়েছে সেখানেই অধিদপ্তর কাজ করবে। তিনি এসোসিয়েশনের সভাপতিকে বলেন, এসোসিয়েশনের সকল সদস্য যেন সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করেন।

আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য যেন প্রদান করা হয়।তিনি আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসসমূহ নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করা হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে অনুরোধ জানান। তিনি মনিটরিং এ কোন অসংগতি পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আমাদের দেশে ডিভাইসগুলোর বিক্রয়মূল্য অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। আবার দেখা যায়, একই এইচএস কোডে আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্যের ব্যাপক পার্থক্য ।

এক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোতে স্পষ্ট হওয়ার জন্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ICMAB এর প্রতিনিধি এবং মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসের সকল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এক্ষেত্রে অস্পষ্টতা দূর করার পাশাপাশি মূল্যের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় আছে কিনা তা জানিয়ে আগামী ১ (এক) মাসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবে।

আলোচনায় মহাপরিচালক বলেন, আমি আশা করি এই সেক্টরে যে অস্পষ্টতা রয়েছে তা এই কমিটির প্রতিবেদনের মাধ্যমে দূর করা যাবে। তিনি আরও বলেন, আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইসের মূল্যের বিষয়ে ভোক্তাগণের আর কোন অভিযোগ থাকবে না এবং এক্ষেত্রে মানুষের আস্থা বাড়বে। মহাপরিচালক সভা শেষে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

পরিশেষে সেমিনারের সভাপতি হিসেবে অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আমদানিকৃত মেডিকেল ডিভাইস বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা মেনে ব্যবসা করার পাশাপাশি হার্টের পেসমেকার ও ভাল্বসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়ের লক্ষ্যে সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করবে সে বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে সেমিনারে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *