বনানীর সোর্স শহীদের পাহাড়সম অপরাধ : নীরব ভূমিকায় প্রশাসন

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বনানীর কথিত সোর্স শহীদ।


বিজ্ঞাপন

রিয়াদ আহমেদ অর্ণব   : বনানী থানা এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম পুলিশের সোর্স শহীদ। ২০০৫ সালে বিস্ফোরক ও অস্ত্রসহ বনানীর হিন্দুপাড়া বস্তি থেকে গ্রেফতার হয় শহীদ। জেল থেকে সাজা খেটে বের হওয়ার পর পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করে। শহীদের চাহিদা মেটানোর জন্য ফাঁসাতে পারে যে কাউকে। বর্তমানে সে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।


বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কড়াইল বস্তি, গোডাউন বস্তি, এরশাদ নগর বস্তি, বনানী ২নাম্বার রোড, ওয়্যারলেস গেইট, হাজারিবাড়ি, ও টিবি গেইট সহ বনানী থানা এলাকার প্রতিটা অলিগলিতে শহীদ মাদক সাম্রাজ্য পরিচালনা করে আসছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি সমর্থিত  সূত্র জানায়, সোর্সদের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা আছে। তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর তাদের দিয়ে দেয়। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে যে সোর্স মানি বরাদ্দ রয়েছে তা সোর্সদের কাছে পৌঁছানো হয় না। ফলে ওইসব সোর্সরা যেসব আলামত উদ্ধার বা জব্ধ করা হয় তার থেকে কিছু নিয়েই তারা আবার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। এতে সোর্সরা বাধ্য হয়েই মাদক ব্যবসায় জড়িত হচ্ছে।

পুলিশের সোর্সসহ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা যারা করেন, তাদের তথ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। মাদক ব্যবসায়ী, তাদের গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের নাম, পিতার নাম, তাদের রাজনৈতিক দলীয় ও প্রশাসনিক পরিচয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে। সারা দেশের মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক গডফাদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান।

একটি সূত্র জানিয়েছে, শহীদের সোর্স বাহিনীতে রয়েছে, হারুন, ভাগিনা হৃদয়, নাডা সুমন, ফটিক, নাসির উদ্দিন ও ড্রাইভার কাশেম। বনানী থানার সাবেক কনস্টেবল মিয়া হোসেন এখন বনানী থানায় না থাকলেও তাঁকে প্রায়ই শহীদের সাথে দেখা যায়।
বেদে বস্তির মুদি দোকানদার ফারুক জানান, কড়াইল বস্তিতে মাদক ব্যবসার মহাজন শহীদ। যারা শহীদের কাছ থেকে মাদক নেয়না শুধু তারাই ধরা পড়ে। শহীদের ঘরে প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত পুলিশের যাতায়াত থাকে।

জানা গেছে, কয়েকবার শহীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে বনানী থানায়। তবে তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। শহীদের বাড়ি বনানীর টিঅ্যান্ডটি মাঠের এক নম্বর গোডাউন বস্তিতে। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা যায়, পুলিশের ড্রাইভার ও সোর্স হওয়ার পর থেকে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। তার বাসায় প্রতিরাতে জুয়া খেলা হয়। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বললেই গ্রেফতারের ভয় দেখান তিনি। সন্ত্রাসীদের থেকে শহীদকেই সবাই বেশি ভয় পায়।

এসব অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ বলেন, আমি আগে বনানী থানা পুলিশের গাড়ি চালাইতাম। এখন চালাই না। আগে পুলিশের গাড়ি চালাইতাম বলে অনেকে আমাকে সোর্স মনে করে। এখন আমি এক ফরেনারের গাড়ি চালাই। যে এসব অভিযোগ দিয়েছেন তিনি মিথ্যা বলেছেন। আমি এসব কিছুই করি না। বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শহীদকে চিনি না। আমাদের কোন সোর্স নেই।

এদিকে সোর্স নিয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি। এখন থেকে এক্ষেত্রে তিন দফা যাচাই-বাছাই করতে হবে। সম্প্রতি যাত্রাবাড়ীতে এক ছাত্রীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় নেয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। সে ঘটনায় এক কর্মকর্তাসহ ৩ জনকে বরখাস্তও করেছে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ।

পুলিশের সোর্স রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। তাদের অতীত-বর্তমান নিয়ে তথ্য যাচাই বছাইয়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে আসা পুলিশের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সংবাদ পর্যালোচনা করে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *