গোপালগঞ্জে ভাসমান সবজি চাষ প্রকল্পে কৃষি কর্মকর্তাদের লুটপাট 

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা জাতীয় সারাদেশ

 

মো: সাইফুর রশিদ চৌধুরী :  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি অফিস কর্তৃক ব্যাস্তবায়িত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জলাবদ্ধ ও অনাবাদি পতিত জমিতে ভাসমান সবজি উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। অর্থবছর শেষ হয়ে প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান হয়নি এই প্রকল্প। জানাগেছে প্রকল্পের তালিকাভুক্ত কৃষকদের হাতে ভাসমান বেড তৈরির শ্রমিক মুজরি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বুঝিয়ে না দিয়ে উপকরণ বিতরণ ও শ্রমিক মুজরি ভাতা বরাদ্দের মাষ্টাররোলে কৃষকদের স্বাক্ষর নিয়ে প্রকল্পের সমুদয় অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। আর এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার ও প্রকল্প এলাকার তিন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাদল জয়ধর, পার্বতী বৈরাগী ও প্রদিপ হালদারের যোগসাজশে। এছাড়াও কয়েকটি ইউনিয়নে প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাদের খাতিরের লোকজন, একই পরিবারের একাধিক সদস্য ও অপেশাদারদের নামে প্রকল্প দেখিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

প্রকল্প এলাকাগুলো সরজমিন পরিদর্শন করে জানাযায় গোবরা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়ায় একজন অপেশাদার সহ ১০ ব্যক্তির নামে ১০টি ভাসমান সবজি চাষ প্রকল্প দেখালেও তাদের ওই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত কোন সংশ্লিষ্টতা রাখা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্প পাওয়া কয়েকজন কৃষক সাংবাদিকদের জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্বতী বৈরাগী আমাদের হাতে কোন উপকরণ ও টাকা না দিয়ে আমাদের কাছথেকে স্বাক্ষর নিয়েছে। বাইরের কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে নামমাত্র কয়েকটি বেড তৈরি করিয়েছেন। আমরা প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের নাম কেটে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়েছে।অপরদিকে কাজুলিয়া ইউনিয়নের ভোজেরগাতী গ্ৰামে একই বাড়ীর চারজনের নামে প্রকল্প দেখিয়েছেন উপ-সহকারী কৃষি বাদল জয়ধর। কাজুলিয়া ইউনিয়নের কৃষক মোস্তাফিজুর শেখ সাংবাদিকদের জানান, আমার মত যারা প্রকৃত কৃষক তাদের নামে প্রকল্প না দিয়ে শুধুমাত্র ভাগাভাগি করে খাওয়ার জন্য একবাড়ীর ৪জন অপেশাদারের নামে ৪ টি প্রকল্প দিয়েছে কৃষি কর্মকর্তা বাদল। এবিষয়ে আমরা কৃষি দপ্তরের উদ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করবো।

গোবরা, কাজুলিয়া, রঘুনাথপুর সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা জানিয়েছেন বিগত অথবথরেও ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সহ অন্যান্য প্রদর্শনী প্রকল্প গুলো নামমাত্র বাস্তবায়ন করে প্রকল্পের অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করেছে কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা।

তারা আরো বলেন, অসৎ কৃষি কর্মকর্তাদের লালসার কারনে এধরনের প্রকল্প থেকে গোপালগঞ্জের কৃষকরা কোন ধরনের সুফল পাচ্ছে না।শুধু মাত্র কৃষি কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হচ্ছে। এধরনের দূর্নীতির কারনে সরকারের মহতী উদ্যোগ বিফলে যাচ্ছে।

এবিষয়ে অনুসন্ধান করে উপজেলা কৃষি অফিসের একটি গোপন সূত্রে জানা গেছে, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাদল জয়ধর, পার্বতী বৈরাগী ও প্রদিপ হালদার দীর্ঘদিন ধরে কাজুলিয়া, গোবরা ও রঘুনাথপুর ইউনিয়নে কর্মরত থাকায় বেপরোয়াভাবে অনিয়ম দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছে।

এছাড়াও পার্বতী হালদার সরকারি চাকুরি বিধি উপেক্ষা করে ঘোনাপাড়া মার্কেটে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।এবিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাদল জয়ধর, পার্বতী বৈরাগী ও প্রদিপ হালদার তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সবসময় কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করি। যে সকল কৃষক প্রদর্শনী পায়না তারাই আমাদের নামে অপপ্রচার চালায়।

উপজেলা কৃষি অফিসার মাফরোজা আক্তার তার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমর্থন করে বলেন, এখন পর্যন্ত ভাসমান সবজি প্রকল্পের সকল উপকরণ দেওয়া হয়নি, একটু সময় দেন, কিছু দিন পরে দেখবেন সব প্রদর্শনী দৃশ্যমান হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *