মিরপুরের  চারবারের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার “টাকার খামারের ” শ্রমিক ছিলো অন্তত ৫০ জন সশস্ত্র ক্যাডার এর মাধ্যমে  বিভিন্ন বস্তি, মার্কেট, দোকান ও বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে আসতো  নিয়মিত  চাঁদা 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক  : ঢাকার মিরপুর আর ইলিয়াস মোল্লা যেন সমার্থক দুটি নাম। গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার  আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ইলিয়াস মোল্লার প্রভাব বলয় ছাড়া মিরপুরকে যেন ভাবাই যেত না। দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে চারবার সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছিলেন। সাংবিধানিক এই পদের সুযোগে নানা অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে তিনি এখন হাজার কোটি টাকার মালিক।


বিজ্ঞাপন

পুরো সংসদীয় এলাকাকে তিনি তাঁর ‘টাকার খামার’ বানিয়েছেন।
“ইলিয়াস মোল্লার ‘টাকার খামার’মিরপুর, রূপনগর, পল্লবীসহ ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ‘ঢাকা-১৬’। এই আসন এলাকার  সরকারি কোনো ফাঁকা জায়গা তাঁর লোলুপ নজর এড়ায়নি। দখল করে তৈরি করেছেন বস্তি, নয়তো দোকান বা অস্থায়ী মার্কেট। সব বস্তি, দোকান বা মার্কেটে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং ওয়াসার পানিরও সংযোগ দিয়েছেন,  নিজ অনুগতদের দিয়ে প্রতি মাসের ভাড়া বা চাঁদা তুলেছেন। মিরপুরে বিল, ঝিলের অঘোষিত মালিক হয়ে ওঠেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মিরপুরের  চারবারের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার “টাকার খামারের ” শ্রমিক ছিলো অন্তত ৫০ জন সশস্ত্র ক্যাডার এর মাধ্যমে  বিভিন্ন বস্তি, মার্কেট, দোকান ও বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে আসতো  নিয়মিত  চাঁদা  থেকেও তাঁর অনুগতরা নিয়মিত টাকা তুলত।

স্থানীয়রা আরো জানান, ওয়াকফ এস্টেট নামে এই জায়গাটিতে ৪৭৪টি প্লট ছিল। এসব প্লটে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা ছিল সাত হাজারের বেশি। যত প্লট বাড়ানো হবে তত  টাকা—এই ধারণা নিয়ে ৪৭৪টি প্লটকে ভেঙে সাত শতাধিক প্লট বানানো হয়। প্লটগুলো যাঁদের দখলে ছিল তাঁরা ছিলেন  ইলিয়াস মোল্লার কাছে জিম্মি।

সুলতান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি ১৯৯৫ সাল থেকে এখানে থাকি। আমাকে কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও একবার উচ্ছেদ করেছে। এরপর ইলিয়াস মোল্লা আমাদের সবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা করে নিয়ে আবার দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন। এরপর আরো কয়েকবার উচ্ছেদ এবং দখল বুঝিয়ে দিয়ে প্রতিবারই টাকা আদায় করেছেন। ২০১৯ সালে এই জমি উদ্ধার করে বরাদ্দকারীদের মধ্যে বুঝিয়ে দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ। এরপর সেখানে কিছু ভবন তৈরি করা হয়েছে। তবে ইলিয়াস মোল্লার দখলের ভয় এখনো দূর হয়নি।  নির্ধারিতসংখ্যক প্লটের বাইরেও কয়েক শ প্লট বানিয়ে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া দুয়ারীপাড়ার যত দোকান রয়েছে, সবটা থেকেই তাঁর অনুগতরা নিয়মিত চাঁদা তুলত। ৫ আগস্টের পর তাদের আর দেখা মিলছে না।

ঢাকা ১৬ আসন এলাকার সেনানিবাস ও ডিওএইচএস বাদে সব রাস্তার ফুটপাতের মালিক যেন ইলিয়াস মোল্লা ও তাঁর অনুসারীরা। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তার ওপর ও ফুটপাতে যারা অস্থায়ী দোকান সাজিয়ে বসত তাদের কাছ থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। রূপনগর, দোয়ারীপাড়া, মিরপুর-১০ নম্বর সেকশন, পলাশনগর,  মানিকদি, ইস্টার্ন হাউজিং, আরামবাগ, মিরপুর-৬ নম্বর সেকশন, ৭ নম্বর সেকশন, বাউনিয়াসব সব পাড়া-মহাল্লার ফুটপাত ও রাস্তার ওপর অস্থায়ী দোকানের ভাড়া ইলিয়াস মোল্লার অনুগতদের দিতে হতো। এসব কাজে পাড়া-মহল্লাগুলো ছয় থেকে সাতজনের গ্রুপ যুক্ত ছিল। রূপনগর টিনশেড কলোনি নামে পরিচিত এলাকাটিও ইলিয়াস মোল্লার আয়ের অন্যতম উৎস।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *