নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বাস্তবায়ন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী, মাদানী এভিনিউ হতে বালু নদী পর্যন্ত (মেজর রোড-৫) প্রশস্তকরণ এবং বালু নদী হতে শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং উত্তরা এপার্টমেন্ট প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কাইছারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজস্ব ঠিকাদার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন আধিপত্য। রাতারাতি বনে গেছে আঙুল ফুলে কলাগাছ। দুর্নীতির টাকায় রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে ৩৬০০ স্কয়ার ফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন রাজউক প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাইছার (ঠিকানা: বাড়ি নং: এ-২-৩, ফ্ল্যাট নং: ডি-৮, বনশ্রী মেইন রোড, ব্লক: এ, বনশ্রী, রামপুরা)। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি (গাড়ি নং: ঢাকা মেট্রো-১৮-৫৩-১০)।
সরেজমিন অনুসন্ধানেও এসব সম্পদের সন্ধান মিলেছে। অভিযোগ রয়েছে, নিজ পদ-পদপদবী ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করেন দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাইছার। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থে জামায়াত-বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাইছারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
উৎকোচের বিনিময়ে অযোগ্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাইছার। এমনই একজন বিতর্কিত ঠিকাদার দিবাকর চন্দ্র রায় ওরফে দিপুর মালিকানাধীন ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ নামক একটি অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে সুকৌশলে কাজ দিয়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। এর পেছনে রাজউকের বড় বড় কয়েকজন রাঘববোয়ালও জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের বিষয়ে রাজউক প্রকৌশলী মোহাম্মদ কাইছারকে বুধবার (১৯ জুলাই) রাতে দৈনিক পাঞ্জেরী’র পক্ষ থেকে তার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তিনি খুদেবার্তা পাঠিয়ে দৈনিক পাঞ্জেরী’কে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এমনকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করারও হুমকি দিয়েছেন। প্রকারান্তরে তিনি অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন খুদেবার্তায়। যা প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারির ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ইতিপূর্বে এলিট কনস্ট্রাকশনের নানা জালজালিয়াতির বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সম্বলিত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও আলোর মুখ দেখছে না তদন্ত কমিটি (অভিযোগের ডিজিটাল নথি নং: ২৭.০১১.২২)। অদৃশ্য ইশারায় সবকিছু চাপা পড়ে গেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের কথা বললেও মূলত দুর্নীতিবাজদের বছরের পর বছর শেল্টার দিয়ে আসছেন রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একাংশ। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে রাজউক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সদস্যগণ এবং প্রশাসন অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যেই তদন্তপূর্বক কার্যকরী ও সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন; যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। রাজধানী ঢাকাকে মহাপরিকল্পনার আওতায় আনতে রাজউক চেয়ারম্যানের বেশকিছু যুগপযোগী উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
এর আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এ আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ (Elite Construction, Proprietor: Dibakar Chandra Ray, Plot # 3/A, 5/A, 7/A, Road # 17, 19, 20, RAJUK Commercial Complex Cum Car Parking, Gulshan-1, Dhaka-1212) এর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের একটি পত্রের (স্মারক নং-৪০.০১.০০০০.১০২.৯৯.০০৩.২১.৩০৫) মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদারী লাইসেন্সের জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ প্রতিষ্ঠানটির জনবল সরবরাহ কাজ পরিচালনার বৈধতা যাচাইকরণের জন্য রাজউক কর্তৃক পত্র প্রেরণের প্রেক্ষিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এ মর্মে মতামত প্রদান করেন যে, ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ধারা ৩(ক) মোতাবেক এলিট কনস্ট্রকশন প্রতিষ্ঠানটি জনবল সরবরাহের কার্যক্রম পরিচালনা করা আইনগতভাবে বৈধ নয়।’
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগস্ট রাজউকের সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) মুহম্মদ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি আদেশে (স্মারক নং-২৫.৩৯.০০০০.০০৯.১১.০২২(২৮).২১.৩৮৮৭) আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত দু’টি কাজের কার্যাদেশ এবং সংশ্লিষ্ট চুক্তিদ্বয় বাতিল করা হয়।
গুলশান-১ এ অবস্থিত প্লট # ৩/এ, ৫/এ, ৭/এ, রোড # ১৭, ১৯, ২০, রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স কাম কার পার্কিংয়ের জায়গা নামমাত্র মূল্যে ইজারা নেয় দিবাকর চন্দ্র রায়। কার পার্কিংয়ের জন্য ভবনটি বরাদ্দ হলেও ভবনটির নিচতলা এবং দোতলায় রয়েছে ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’ এর অফিস। রাজউকের নাকের ডগায় কার পার্কিংয়ের জায়গায় অফিস পরিচালনা করে শর্ত ভঙ্গ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেখেও যেন না দেখার ভান করে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, কার পার্কিংয়ের আয়ের একটি অংশ মাসোহারা পেয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আরও ভয়াবহ অভিযোগ, ঐ অফিসে প্রায়ই মাদকের আসর বসে। যেখানে রাজউকের কতিপয় দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর যাতায়াত রয়েছে বলে লোকমুখে শোনা যায়।
কাগজপত্র জালিয়াতি করে অবৈধ অর্থের জোরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একের পর এক কাজ বাগিয়ে নিতে থাকে ‘এলিট কনস্ট্রাকশন’-এর সত্বাধিকারী দিবাকর চন্দ্র রায়- এমন অভিযোগ থাকলেও এর প্রতিকারের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এলিট কনস্ট্রাকশনের এমন ভয়াবহ জালজালিয়াতির বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সম্বলিত সংবাদ প্রকাশ হলেও অদৃশ্য কারণে তদন্ত আলোর মুখ দেখছে না।