মিরপুর সরকারি ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর সাবেক ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের আইন ও কাউন্সিল এর দাবীতে আন্দোলন

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সংগঠন সংবাদ স্বাস্থ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক  : গত ১৭ দিন যাবৎ আইন ও কাউন্সিল এর দাবীতে আন্দোলন করছে সরকারি ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিরপুর-১৩ এর সাবেক ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী। এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য প্রদান করেন ইউনানী আয়ুর্বেদিক গ্রাজুয়েট ডক্টর’স এসোসিয়েশন-অ্যাগড্যাব এর সভাপতি ডা. মির্জা লুৎফর রহমান লিটন, মহাসচিব ডা. আমিনুল বারী কানন ও বাংলাদেশ ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল এসোসিয়েশন -বুয়ামা এর সভাপতি ডা. তৌহিদ আল বিরুনী, মহাসচিব ডা. মঈন উদ্দিন।


বিজ্ঞাপন

এই চলমান আন্দোলনে যোগ দিয়ে আইন ও কাউন্সিল বাস্তবায়নের অধ্যাদেশ জারীর দাবি জানিয়েছেন সারাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা হাসপাতালের নিয়োগপ্রাপ্ত ইউনানী/আয়ুর্বেদিক মেডিকেল অফিসার বৃন্দ। এছাড়াও আন্দোলনে উপস্থিত হয়ে আইন কাউন্সিল এর দাবি করেন রওশন জাহান ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল লক্ষীপুর ও হামদর্দ ইউনানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল বগুড়ার ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।


বিজ্ঞাপন

আন্দোলনের বক্তব্যে বক্তারা বলেন, এদেশের আপামর মানুষের জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে সরকারীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে প্রচলিত এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের পাশাপাশি আমরাও (ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকবৃন্দ) নিরলসভাবে তুলনামূলক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও সহজলভ্য ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক
চিকিৎসা  সেবা প্রদান করে আসছি।


বিজ্ঞাপন

আমাদের সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে মেডিকেল কলেজসমূহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অধিভুক্ত।


বিজ্ঞাপন

এমবিবিএস সমমান ০৫ (পাঁচ) বছর মেয়াদি পাঠ্যক্রম অধ্যয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃক গৃহীত তিনটি পেশাগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ০১ (এক) বছর ব্যাপী ইন্টার্নশীপ প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করার পর বিইউএমএস/বিএএমএস চিকিৎসকদের পেশাগত রেজিস্ট্রেশন সনদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং জনস্বাস্থ্য-০১/হোমিও-৪/৯৩/৮৫, তারিখ- ০১/০৬/১৯৯৬খ্রি:  মোতাবেক জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর একটি অন্তবর্তীকালীন কাউন্সিল থেকে প্রদান করা হয়ে থাকে। যার চেয়ারম্যান ও রেজিস্ট্রার যথাক্রমে মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং পরিচালক (হোমিও ও দেশজ), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অস্থায়ী কাউন্সিল থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত প্রায় তিনশত বিইউএমএস ও বিএএমএস চিকিৎসক বিভিন্ন সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও প্রায় ৫০০০ চিকিৎসক বেসরকারী হাসপাতাল/প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন।

১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের পেশাগত অবস্থা বিবেচনায় একটি অন্তর্ববর্তীকালীন কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল যার উদ্দেশ্যই ছিল স্নাতক পর্যায়ের ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের পেশাগত রেজিস্ট্রেশন প্রদান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিএমডিসি-র আদলে কাউন্সিল গঠন ও সরকারী এবং বেসরকারি পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। কিন্তু গভীর দুঃখের বিষয় বিগত ৩০ বছরেও অন্তর্বর্তীকালীন কাউন্সিল থেকে একটি স্থায়ী কাউন্সিল গঠনের কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। ফলে আমরা পেশাগত স্বীকৃতি, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নানাভাবে বৈষম্য, হয়রানি, প্রতিবন্ধকতা ও ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হয়েই চলেছি।

বাংলাদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক পর্যায়ের স্বীকৃত ডিগ্রীসমূহ এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকদের জন্য (এমবিবিএস), দন্ত চিকিৎসকদের জন্য (বিডিএস), ইউনানী চিকিৎসকদের জন্য (বিইউএমএস), আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের জন্য (বিএএমএস), হোমিও চিকিৎসকদের জন্য (বিএইচএমএস) ও পশু চিকিৎসকদের জন্য (ডিভিএম) ।

পাঠ্যক্রমে কিছু মিল থাকলেও উল্লিখিত প্রতিটি কোর্সই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। তাই প্রতিটি চিকিৎসাব্যবস্থা স্বতন্ত্র আইন ও স্থায়ী কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত হওয়াই সমীচীন। উদাহরণস্বরূপ: এ্যালোপ্যাথিক ও দন্তচিকিৎসকদের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) আইন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন-২০২৩ ও যার কাউন্সিল গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং পশু চিকিৎসকদের জন্য ভেটেরিনারি আইন ও কাউন্সিল রয়েছে। অথচ ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকদের জন্য “ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শিক্ষা আইন-২০২৪” এখনও সংসদে ভেটিং শেষে পাশ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

বিএমডিসি-র ন্যায় আমাদের আলাদা আইন ও স্থায়ী কাউন্সিল না থাকায় আমরা উচ্চশিক্ষা, পেশাগত স্বীকৃতি, সামাজিক মর্যাদা থেকে প্রায় ৩০ বছর ধরে বঞ্চিত যা ভীষণভাবে বৈষম্যমূলক, অপমানজনক এবং পেশাগতভাবে বিব্রতকর। তিন দশকের অপমান, হতাশা, গ্লানি আর বয়ে বেড়ানো যাচ্ছে না।

ছাত্র প্রতিনিধি আপন আহমেদ বলেন, আমরা আজ স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব ডা. মো. সারোয়ার বারী মহোদয় এর আহ্বানে সচিবালয়ে মিটিং করি। তিনি আমাদের এক দফা দাবী আইন ও কাউন্সিল এর অধ্যাদেশ খুব দ্রুত সময়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।

তিনি আরো বলেন, খুব দ্রুত নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করে অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্পের ৩৫১ জন জনবল রাজস্বে স্থানান্তর করা হবে এবং পিএসসি এর অধীন বিসিএস (স্বাস্থ্য) এর মত বিসিএস (অল্টারনেটিভ মেডিসিন) পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ প্রদান করা হবে।

এসময় অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রী বক্তব্য প্রদান করেন ও বলেন, সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আমাদের সকলের প্রাণের দাবী স্বতন্ত্র “ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা আইন ও স্থায়ী কাউন্সিল” বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *