সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও তার বেকার স্বামীর দাদাগিরি

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

মাদারীপুর প্রতিনিধি  :  মাদারীপুর জেলার টেকেরহাটে এক মাফিয়া দম্পত্তির আবির্ভাব ঘঠেছে। এই দম্পত্তির বহুমুখি অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সনাতন ধর্মের সাধারণ মানুষ। তারা সরকারী ক্ষতার অপব্যবহার করে প্রতিবেশির জমা জমি জোর পুর্ব্বক দখল করে নিচ্ছে। বাধা দিতে গেলে নিজেকে সরকারী কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী ডেকে আনছে। তাদের হাত থেকে আত্মীয় স্বজনও রেহাই পাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তারা স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ আইনি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন

মহা ক্ষমতাধর এই দম্পত্তির পরিচয় খুঁজে জানা গেছে, ১। দীপ দাস (৩৫), পিতাঃ মনিন্দ্রচন্দ্র দাস, ২। কেয়া দাস (৩৪), স্বামীঃ দীপ দাস সাং-দক্ষিন চাঁদপট্টি, ইউপি-কবিরাজপুর, থানা-রাজৈর, জেলা-মাদারীপুর। তাদের সহযোগি হলেন: ৩। সুমন দাস (৪২),পিতা-মৃত সরোজ রঞ্জন দাস, সাং-টেকেরহাট আবাসিক রাজৈর পৌরসভা, থানা-রাজৈর, জেলা-মাদারীপুর। এদের মধ্যে ১ নং বিবাদী দীপ দাসের স্ত্রী কেয়া দাস একজন সরকারী ১ম শ্রেণির কর্মকর্তা। তিনি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন।

অন্যদিকে দীপ দাস কোন কর্ম না করলেও ২ লাখ টাকা মুল্যের মটর বাইকের মালিক। তার সম্পর্কে গ্রামে নানা অপকথা শোনা যায়। তিনি নাকি প্রতিদিন ৪/৫ হাজার টাকা হাত খরচ করেন। এলাকার যতো নেশাখোর ও জুয়াড়ি পোলাপান আছে তাদের সাথে চলা ফেরা করেন। প্রায় রাতেই তিনি বাড়ী ফেরেন না।৩/৪ দিন নিখোঁজ থাকার পর বাড়ী ফিরে আসেন।


বিজ্ঞাপন

এই সময়ে তিনি নানা প্রকার অসামাজিক কাজ ও ভাড়াটিয়া হিসাবে অপরাধ মূলক কাজ করেন মর্মে গুঞ্জন রয়েছে। এটাই তার আয়ের প্রধান পথ বলে এলাকাবাসী মনে করেন। কোন কর্ম না করেও একটি যুবক কিভাবে ২ লাখ টাকা দামের মটর বাইক চালান?


বিজ্ঞাপন

কিভাবে প্রতিদিন ৪/৫ হাজার টাকা পকেট খরচ করেন তা কারো বোধগম্য নয়। বিগত ১৭ বছর এই দীপ দাস বাংলাদেশ আওয়ামী যুব লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। এসময় তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ব্যানারে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতা কর্মীদের সাথে দীপ দাসের ছবি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।৫ আগষ্টের পর এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। ৬ মাস আগে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাথে আঁতাত করে এলাকায় ফিরে এসে আবার স্বমুর্তি ধারন করেছেন

অপরদিকে তার স্ত্রী কেয়া দাসের বিরুদ্ধে সরকারী কর্মকর্তা পরিচয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার,অনিয়ম-দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পত্রিকায় কেয়া দাসের নামে একাধিক সংবাদও প্রকাশ পেয়েছে। প্রকাশিত একটি সংবাদের ভাষ্য ছিল নিন্মরূপ: কালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ লেনদেন, নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের আত্মীয়দের নিজ অফিসে নিয়োগ,কিশোর-কিশোরী ক্লাবের শিশুদের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে নড়াইলের কালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কেয়া দাসের বিরুদ্ধে।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় ২০২২ সালের ১৬ ই অক্টোবর কালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন কেয়া দাস। যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় তার সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি। সরেজমিনে গিয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতা,ভিজিডি প্রকল্প, কিশোর কিশোরী ক্লাবের শিক্ষক নিয়োগে ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে।

কালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন কালিয়া পৌরসভা ও ১৪ টি ইউনিয়নসহ মোট১৫ টি কিশোর কিশোরী ক্লাব রয়েছে। যেখানে প্রতিটি ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৩০ জন।সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার আবৃত্তি,গানসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয়।তাদের প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ প্রতিদিন ৩০ টাকার পুষ্টিকর নাস্তা।

কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, তাদেরকে দুই প্যাকেট বিস্কুট যার খুচরা মুল্য ১০ টাকা করে পাইকারি ৭.৮৪ পয়সা।একটা ক্লাবে সপ্তাহে ১৮ ‘শ টাকার নাস্তা দেয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে ৯৪০ টাকার বিস্কুট। যার ফলে প্রতিমাসে প্রায়ই অর্ধ লক্ষ টাকা নিজের পকেটে রাখেন কেয়া দাস। এমন কি কোন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কেয়া দাসের কাছে ফেরত দিতে হয় বলে জানান নাম প্রকাশে কয়েকজন শিক্ষক।

এছাড়াও কিশোর কিশোরী ক্লাবে মনিহারী বাবদ গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর প্রতি কেন্দ্রে ৩ হাজার করে ১৫ টি কেন্দ্রে ৪৫ হাজার টাকা বাজেট দেয়া হয়েছে। যার একটি টাকাও আজও কোন কেন্দ্রে দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এভাবেই প্রতিমাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করছেন কেয়া দাস।

এমনকি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয় অপেক্ষামান প্যানেল থেকে নিয়োগ না দিয়ে নিজের প্রভাব খাটিয়ে আপন ভাই শিব শংকর দাস, ভাইয়ের স্ত্রী শিপ্রা দাসকে নিজের অফিসে ইচ্ছামত নিয়োগ করিয়ে সবকিছু নিজের কব্জায় রেখেছেন। যার কারণে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে অন্য কোন সহকর্মীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না বলে জানিয়েছেন ঐ কার্যালয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মরত কয়েকজন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কেয়া দাসকে উৎকোচ দিয়ে উপজেলার বাঐসোনা ইউনিয়নের বাঐসোনা গ্রামের রুহুল মোল্লার স্ত্রী শিল্পী সুলতানা ভিজিডি প্রকল্পের কার্ড ও একই সাথে তার সর্বশেষ সন্তানের বয়স ১০ বছর পার হলেও মাতৃত্বকালীন ভাতা ভোগ করছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি একই সাথে দুটি ভাতা ভোগ করতে পারবেন না।

একই পদ্ধতিতে একতলা পাকা ঘরে বাস করা বাঐসোনা গ্রামের রকমান মোল্লার স্ত্রী কহিনুর বেগম, আবির হোসেন এর স্ত্রী তাঞ্জিরা বেগম, রোমান শেখের স্ত্রী হীরা খানমসহ অসংখ্য ব্যক্তি ওই মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার যোগসাজসে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ভাতা গ্রহণ করছেন। এতে সাধারণ হতদরিদ্র পরিবার সরকারি ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবী করেছেন এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধি।

বাঐসোনা ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য জানান, আমরা জনপ্রতিনিধি হয়েও কোন ভাতার ব্যাপারে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কেয়া দাসের সাথে কথা বলতে পারিনা কিন্তু তিনি তার দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে সেসব ভাতা টাকার বিনিময়ে করে দেয়। অথচ যাদের দেয় তাদের সামর্থ্য আছে বাদ পড়ে যায় গরিবরা।

সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কেয়া দাসের বক্তব্য আনতে গিয়ে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি।খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি বিসিএস পরীক্ষার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন,গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কিশোর কিশোরী ক্লাবের জন্য বরাদ্দকৃত যে পাঁচ চল্লিশ হাজার টাকা কালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে এসেছিল সে বিষয়ে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আমাদেরকে জানানোর নির্দেশনা থাকলেও তিনি (কেয়া দাস) আমাকে জানাননি।

এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এ বিষয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাবো।

এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এর সহকারী পরিচালক জানান, কালিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কেয়া দাসের বিরুদ্ধে আসা সকল বিষয় আমি নিজে খোঁজ খবর নিয়ে দেখব।

যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তিন দিন যাবত সরকারিভাবে ছুঁটি না নিয়ে কেয়া দাসের অফিসে না আসার বিষয়ে তিনি জানেন না বলে অবহিত করেন।

এ দিকে সম্প্রতি দীপ দাস গং এর বিরুদ্ধে জ্যাঠাত ভাই সুমন দাস রাজৈর থানায় একখানা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগ থানায় জমা দেওয়ার পরও কোন প্রতিকার মেলেনি।

ভুক্তভোগিরা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা,স্বরাষ্ট্র সচিব,আইজিপি,র‌্যাব প্রধান,নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক ও রাজৈর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসির দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *