দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে দুর্নীতির চিত্র উন্মোচিত : ইসলামিক ফাউন্ডেশন, কর অঞ্চল-৫, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও মধুপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়মের প্রমাণ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  বাংলাদেশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ-দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অনিয়ম এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জনগণের সেবা ও রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতির দায়ভার বহন করছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাম্প্রতিক সময়ে চারটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে নেমে একাধিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র উন্মোচন করেছে।


বিজ্ঞাপন

ইসলামিক ফাউন্ডেশন: শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে কোটি টাকার অনিয়ম : ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য নেয়া “মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প”ে প্রায় ৬ কোটি ১২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে এসেছে। দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানে গিয়ে আর্থিক রেকর্ড, ভাউচার ও অনুমোদনপত্র সংগ্রহ করে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়, প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অসদুপায় অবলম্বন ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের সত্যতা বিদ্যমান।

কর অঞ্চল-৫: ঘুষ লেনদেনে রাজস্ব ক্ষতি : রাজস্ব খাতের স্বচ্ছতা রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর অঞ্চল-৫ এ দেখা দিয়েছে ভয়াবহ অনিয়ম। অভিযোগ রয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এক সহকারী কর কমিশনার ৩৮ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে আয়করদাতার পুরনো রিটার্ন ও আর্থিক দলিল হস্তান্তর করেছেন। অভিযানে সংগ্রহ করা রেকর্ড ও সাক্ষ্যে অভিযোগের সত্যতা স্পষ্ট হয়েছে। এর ফলে শুধু রাজস্ব ক্ষতিই হয়নি, করদাতাদের আস্থাও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল: স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম :চিকিৎসা খাত দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে আলোচনায়। দুদকের টিম কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ ক্রয় প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এমএসআর ওষুধ কেনাকাটায় অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও আর্থিক অসংগতি বিদ্যমান। রোগীদের অভিযোগ অনুযায়ী হাসপাতালের সেবায় হয়রানি, অব্যবস্থাপনা ও ঘুষ লেনদেনের প্রবণতা রয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতি চিকিৎসা সেবার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

মধুপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: দলিল নিবন্ধনে হয়রানি : টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমির দলিল নিবন্ধনের সময় ঘুষ দাবি ও হয়রানির ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। অভিযানে প্রমাণ মেলে যে, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে সাব-রেজিস্ট্রার বিধিবহির্ভূতভাবে দলিল ফেরত দিয়েছেন। ভূমি-সংক্রান্ত লেনদেনে এ ধরনের দুর্নীতি জনগণের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সার্বিক চিত্র  :  এই চারটি অভিযানের ফলাফলে পরিষ্কার, ধর্মীয় শিক্ষা প্রকল্প থেকে শুরু করে কর অফিস, স্বাস্থ্যসেবা ও ভূমি নিবন্ধন অফিস— সর্বত্র দুর্নীতির সুশৃঙ্খল চক্র সক্রিয়। কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে, জনগণ ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়ছে।

দুদকের অবস্থান ও পরবর্তী পদক্ষেপ   :   দুদক জানায়, প্রতিটি অভিযানে সংগৃহীত কাগজপত্র, আর্থিক দলিল ও সাক্ষ্য প্রমাণ বিস্তারিতভাবে যাচাই করে কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *