যাত্রী ছাউনিতে বইয়ের দোকান

এইমাত্র রাজধানী

বেদখলে ফুটপাত

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : নগরীতে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হলেও যাত্রীরা এর সুবিধা ভোগ করতে পারে না। এসব যাত্রী ছাউনিতে এখন যাত্রীদের অপেক্ষার পরিবর্তে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করেন দোকানিরা। যাদের জন্য এই ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে, তারাই এগুলোতে বসার কোনো জায়গা পান না। চুক্তি মোতাবেক যাত্রী ছাউনিতে দোকান নির্মাণের কথা না থাকলেও সেগুলোতে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এমনই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে। বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর পাশের রাস্তার উল্টো দিকের যাত্রী ছাউনি এবং ফুটপাতে বসেছে সারি সারি বইয়ের দোকান। পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট ফুটওভার ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাতে বিভিন্ন দোকান বসানো হয়েছে। ফুটপাত দখল থাকায় পথচারীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। হাটা-চলা করতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে তোপখানা সড়কের বিএমএ ভবনের সামনে থেকে শুরু করে পুরানা পল্টন মোড় পর্যন্ত ফুটপাতে বসেছে বিভিন্ন দোকান। এসব দোকানের কারণে প্রতিনিয়তই এখানে মানুষের জটলা তৈরি হয়। আর এ কারণে হাটা-চলায় ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা।
এদিকে গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকার রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে বসে আছে কয়েক হাজার হকার। অন্যদিকে ফুটপাত দখল করে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানের সব সড়কেই চলছে হকারদের রমরমা ব্যবসা। ফুটপাত দখলে নেয়ায় রাজধানীর অনেক স্থানেই সংকুচিত মানুষের চলার পথ। যার জন্য বাড়ছে যানজট। কোথাও কোথাও অবৈধ স্থাপনা এবং বিভিন্ন মালামাল রেখে দেয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েন পথচারীরা। রাজধানীর ফুটপাতে হকারদের রাজত্বের নেপথ্যে রয়েছে প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজি। দোকান ভেদে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে দৈনিক ৫০০ টাকা পর্যন্ত মাসোহারা দিতে হয় হকারদের। আর এই টাকা কোথায় যায় তাও জানেন না হকাররা। তারা বলছেন, প্রতিদিন একজন লাইনম্যান আসে তাকে আমরা দোকান বসানোর জন্য ১০০ টাকা দেই। কিন্তু সেই টাকা কোথায় যায় তা আমরা জানি না।
রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ের যাত্রী ছাউনিতে বই বিক্রি করেন এমন একজন বিক্রেতার কাছ থেকে জানা যায়, এখানে ‘পুস্তক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ ফুটপাত দখল করে দোকান বরাদ্দ দেন। তার জন্য আমাদেরকে প্রতিদিন ৫০-১০০ টাকা লাইনম্যানকে দিতে হয়।
ফুটপাতে বই বিক্রেতা বারেক সকালের সময়কে বলেন, দির্ঘদিন যাবৎ আমরা এখানে ব্যবসা করে আসছি। আর আমাদের একটা সমিতি আছে। দোকান করার জন্য আমরা সমিতিতে মাসিক চাঁদা দেয়। আর দৈনিক বসার ভাড়া বাবদ দিনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাইনম্যানকে দিই।
এক পথচারীর সঙ্গে কথা হলে সকালের সময়কে তিনি বলেন, এসব দোকানের কারণে যাত্রী ছাউনিতে কেউ বসতে পারে না। মাঝে মাঝে আমরা ঝড় বৃষ্টির কবলে পরি; তখন আমরা ছাত্রী ছাউনিতে আশ্রয় নিতে পারি না। আর অন্যান্য দিন তো এখানে বসাই যায় না। আমার অফিস মতিঝিল; অফিসে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে এ রাস্তা দিয়ে আমি হেটে যায়। এখানকার দোকানের কারণে ফুটপাত দিয়ে হাটতে খুবই সমস্যা হয়।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ফুটপাত দখলমুক্ত করতে বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস বেশ কয়েকটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এর আগেও এরকম অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, এর আগে উদ্যোগ হলেও এবারের উদ্যোগ একটু ভিন্ন। কারণ আমাদের মেয়র ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য এবার প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থায় গ্রহণ করবে। তবে এই কাজটি করতে একটু সময় লাগবে।
এ বিষয়ে পল্টন মোড়ের ফুটপাতে কাপড় বিক্রেতা লাভলু বলেন, মাঝে মধ্যেই পুলিশ এসে আমাদের উচ্ছেদ করে দেয়। কিন্তু আমরা এখানে ব্যবসা না করতে পারলে খাব কী! আমাদের তো এ ছাড়া আর কোনো আয়ের উপায় নেই।


বিজ্ঞাপন