প‌রিবার‌কে সহ‌যো‌গিতার অজুহা‌তে কি‌শোরী‌কে প্রবাসীর ব্ল্যাক‌মেইল

অপরাধ

মি‌ডিয়া এন্ড পাব‌লিক রি‌লেশন্স উইং‌কে

পাঠা‌নো মেসে‌জের ভি‌ত্তি‌তে ব্যবস্থা

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : হবিগঞ্জের মেয়ে তিথী রায় (ক‌ল্পিত নাম)। বাড়ি বানিয়াচং। কলেজ ছাত্রী। পড়াশুনায় বেশ ভাল। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। টিউশনি করে নিজের পড়াশুনার খরচ যোগাতে হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় সনাতন ধর্মের অপর এক লোকের সাথে। নাম মৃত্যুঞ্জয় (ক‌ল্পিত নাম)। থাকেন দেশের বাইরে। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। নাঙ্গলকোট থানা। মৃত্যুঞ্জয় জানতে পারেন তিথীর দুর্বলতা। পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চান। নিজেকে দাতা হিসেবে পরিচয় দেন। ধীরে ধীরে তিথীকে সম্পর্কে জড়াতে থাকেন। তিথীর পরিবারকে মাঝে মাঝে কিছু টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। প্রেমের অভিনয় করে গভীর সম্পর্কে জড়াতে চেষ্টা করেন। তিথীও তাকে বিশ্বাস করতে থাকে। এক সময় তিথীর দুর্বলতা বুঝে তার কাছ থেকে আপত্তিকর ছবি নিতে থাকেন।


বিজ্ঞাপন

তিথী মৃত্যুঞ্জয়কে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে এড়াতে থাকে। তিথীর সন্দেহ হয়। নানা ভাবে চেষ্টা করে জানতে পারে মৃত্যুঞ্জয় বিবাহিত। দেশে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। প্রতারিত হচ্ছে টের পেয়ে সরে যেতে চায় তিথী। তাকে সম্পর্ক ধরে রাখতে বাধ্য করতে চায় মৃত্যুঞ্জয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবিগুলো ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। তিথীর নামে ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকে। তিথী তাকে পুলিশের কথা বলে। মৃত্যুঞ্জয় পুলিশের কথায় পাত্তা দেয় না। সে বিদেশে থাকে, বাংলাদেশের পুলিশ তার কিছুই করতে পারবে না। নানাভাবে ভয় দেখিয়ে তিথীকে তার সাথে সম্পর্কে যেতে বাধ্য করতে থাকে মৃত্যুঞ্জয়।


বিজ্ঞাপন

উপায়ান্তর খুঁজে পায় না তিথী। নানা জায়গায় সাহায্য চেয়ে সমাধান পায় না। লোকটি বিদেশে থাকে বলে কেউ তাকে সহায়তা করতে পারেনি। মানসিক যন্ত্রনায় সে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। হঠাৎ কি মনে করে তিথী বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংকে জানানোর কথা ভাবে। বাংলাদেশ পুলিশ ফেইসবুক পেইজের ইনবক্সে সাহায্য চেয়ে বার্তা প্রেরণ করে। মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং তার বার্তাটি পাওয়ার সাথে সাথে তাকে অভয় দেয়। তার পাশে সর্বান্তকরনে থাকার আশ্বাস দেয়। পাশাপাশি তাকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে কাউন্সিলিং করতে থাকে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুবিধার্থে বার্তাটি তিথীর থানায় না পাঠিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের নিজ থানার ওসি নাঙ্গলকোট মো. বখতিয়ার চৌধুরীকে পাঠায়।

বাংলাদেশ পুলিশে এখনও অনলাইন জিডি ও মামলার প্রোভিশন চালু হয়নি। সাধারণ হিসেবে তিথী ও তার অভিভাবককে হবিগঞ্জের বানিয়াচং থেকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট আসতে হতো। মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং এর বিশেষ রেফারেন্সে তিথীর নিকট থেকে একটি লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন ওসি নাঙ্গলকোট। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুঞ্জয়ের অভিভাবকদেরকে থানায় ডাকা হয়। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সহায়তা নিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় তিথী ও তার পক্ষ অনলাইনে থানার সাথে যুক্ত থাকে।

বিদেশে থেকে ফিরিয়ে আনার ভয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবার বেশ চাপে পড়ে। চাপে পড়ে মৃত্যুঞ্জয়ও। বিদেশ থেকেই সে তার এলাকার জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে তার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করে। বিদেশে তার সাথে কর্মরত একাধিক বাংলাদেশির উপস্থিতিতে তিনি একটি মুচলেকার সই করে তা বাংলাদেশে পাঠান। তিথীর সকল তথ্য ডিলিট করার প্রমানাদি পাঠান। ফেইক আইডি বন্ধ করেন। কিন্তু, তিথীর পরিবার সার্বিক প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। পুলিশকে আইনী ব্যবস্থা না নিতে অনুরোধ করে।

বাংলাদেশ পুলিশকে তিথী লিখেছেন, “স্যার, আপনাদের ধন্যবাদ দিলেও কম হবে। আপনাদের এই নিঃস্বার্থ সহযোগিতা কখনো ভুলবো না। আপনারা আমাকে নতুন করে বাঁচার সুযোগ করে দিলেন।”