৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
দ্বিতল এই সেতুতে স্প্যানের ওপর কংক্রিটের স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হলেই পিচ ঢালাই হবে। ২২ মিটার প্রশস্ত এই সেতুতে চারটি লেইনে যানবাহন চলতে পারবে।
পদ্মা সেতুর মাঝের ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নকশা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। পরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা সংশোধন করে পাইল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর।
আজকের দেশ রিপোর্ট : মহামারীর প্রথম ধাক্কা পেরিয়ে পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণ সেরে ফেলা গেলেও বাকি কাজের গতি টেনে ধরছে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ।
কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে সঠিক সময় মালামাল আনা এবং বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের আসা-যাওয়ার সমস্যা হওয়ায় প্রভাব পড়ছে নির্মাণযজ্ঞে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালের জুনে স্বপ্নের এ সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েই প্রকল্পের কাজ চলছে।
প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এপ্রিল পর্যন্ত মূল সেতুর ৯৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কাজ শেষ। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
গত বছরের শুরুতে এ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। মহামারীর শুরুতে চীনা শ্রমিকরা চলে যাওয়ার পরও মার্চে কাজে ছিলেন প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক। তাদের নিয়েই সীমিত পরিসরে কাজ চলছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হলে বছরের শেষে ডিসেম্বরে আবার পুরোদমে কাজ শুরু হয়।
দক্ষিণ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে যে বিপুল কর্মযজ্ঞ কয়েক বছর ধরে পদ্মাপাড়ে চলছে, তা পূর্ণ অবয়ব পায় গত ১০ ডিসেম্বর।
সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয় সেদিন; তৈরি হয় রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ।
এখন সেতুর নিচতলায় রেলওয়ে স্ল্যাব, উপরে রোড স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। এছাড়া পিচ ঢালাই এবং ল্যাম্পপোস্ট বসানো, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ লাইন নেওয়াসহ আরও কিছু কাজ বাকি।
আগামী বছর কাজ শেষ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “মহামারীতে কাজের যে গতি কমেছে, তা এখনো পুরোপুরি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য সময় বেশি লাগছে।”
তিনি বলেন, দেশের বাইরে থেকে যে মালামাল আগে এক মাসে আসত, তা এখন দুই থেকে তিন মাস সময় নিচ্ছে। তাতেও কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
তাছাড়া এ প্রকল্পের অনেক বিশেষজ্ঞ দেশের বাইরে, বিশেষ করে চীন থেকে আসা যাওয়া করেন। তাদের দেশে গিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন কোরেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। এখন বিমানের টিকেট পাওয়াও তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।
তবে আগামী বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, সেতুতে ঢালাইয়ের কাজ, সড়কের জন্য প্রস্তুত করা, রেলের জন্য প্রস্তুত করার কাজ এর মধ্যেই’ শেষ করা হবে।
সব ঠিক থাকলে ২০২২ সালের জুনে এ সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামও বলছেন, “টার্গেট সময় সামনে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি এ সময়েই সব কাজ শেষ করতে পারব।
তিনি জানান, বর্তমানে এ প্রকল্পে ৪ থেকে ৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারি কাজ করছেন। অনেক সময় এ সংখ্যা কম বেশি হয়।
তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ তেমন দেখা যায়নি। গত এক বছরে ১০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজটি করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন’।
১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকায় ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু প্রকল্প শুরু হতেই সময় লেগে যায় ২০১৪ সাল। চারবার প্রকল্প সংশোধন করে এখন ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।