নিজস্ব প্রতিবেদক : ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতা নিরসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার (১৬ মে) অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনের (ওআইসি) ৫৭ সদস্যের এক জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠকে এ আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ মনে করে নিরপরাধ বেসামরিক মানুষকে হত্যার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে কোনো মানুষের প্রার্থনায় বিঘ্ন ঘটানোকে ন্যায়সঙ্গত বলা যাবে না। এর সপক্ষে কোনো যুক্তিই থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ প্রস্তাব, আরব শান্তি উদ্যোগ ও কোয়ার্টার রোডম্যাপের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি সমন্বিত ও টেকসই সমাধানে বিশ্বাসী। জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গ হিসেবে ইউএনএসসির উচিত আন্তর্জাতিক অঙ্গণে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আল-কুদস আল শরীফে নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের ওপর দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলা, পবিত্র আল-আকসা মসজিদে বোমা নিক্ষেপ এবং নামাজরত মুসল্লি ও শেখ জাররাহ আবাসিক এলাকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ওআইসি জরুরি এ বৈঠকের আহ্বান করে।
বৈঠকে বাংলাদেশ জাতিসংঘে ওআইসির পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়ার দাবি উপস্থাপন করে এবং ইউএনএসসি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১০তম জরুরি বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের ব্যাপারে একমত প্রকাশ করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানবতার কল্যাণে কাজ করতে ও ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে মানবতার পক্ষে জোরালোভাবে দাঁড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এসময় ফিলিস্তিনে সহিংসতায় হতাহতের জন্য বাংলাদেশ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে।
এর আগে গত ১১ মে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে চিঠিও পাঠান।
গত ১২ মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে পত্র প্রেরণ করেছেন।’
ওই চিঠিতে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ‘আমি এই সময়েও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকারের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে ১৯৬৭ সালে নির্ধারিত সীমা অনুযায়ী একটি স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার ওই ভূখণ্ডের জনগণের রয়েছে।’
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। রোববার (১৬ মে) ইসরায়েলি হামলায় ৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত মোট ১৮৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৫ জন শিশু এবং ৩৩ নারী। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি।
এর আগে শনিবার বোমা হামলা চালিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) কার্যালয় ভবন গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী।