নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা দলের একজন নারী সংসদ সদস্যের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন-এমন অভিযোগকে কেন্দ্র করে দলটিতে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে দলের বনানী কার্যালয়ে দলের দুটি পক্ষের মধ্যে শক্তির মহড়া দেখা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, রাঙ্গা সংরক্ষিত নারী আসনে দলের সংসদ সদস্য মাসুদা এম রশিদ চৌধুরীর কাছ থেকে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। তবে রাঙ্গা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টির সদস্য পাঁচজন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ পাঁচজন সদস্যর কাছ থেকেই দলীয় তহবিলে পাঁচ কোটি করে টাকা দেওয়ার গোপন অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন চট্টগ্রামের মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী। মাসুদা চৌধুরী গোপন অঙ্গীকারনামা অনুসারে দলের তহবিলে টাকা দেননি। তবে মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে তিন কোটি ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২০ মে মাসুদা চৌধুরীকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন রাঙ্গা। তিনি পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশে ওই নোটিশ দিয়েছেন সেখানে উল্লেখ ছিল। নোটিশে মাসুদা চৌধুরীকে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ফোরাম তাকে কিছু শর্ত সাপেক্ষে মনোনয়ন দিয়েছে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়, পার্টি দপ্তরে আপনার স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারপত্র রক্ষিত আছে। তবে আপনি অঙ্গীকারনামা পালন করেননি। এমতাবস্থায় পার্টির চেয়ারম্যান কেন আপনাকে পার্টির সব পদ থেকে অব্যাহতি দেবে না দশ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর অনুরোধ রইলো।
মাসুদা চৌধুরী নোটিশের জবাব না দেওয়ায় ১৫ জুন এরশাদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা অনুসারে তাকে দলের প্রাথমিক ও প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে মাসুদা চৌধুরী বলেন, হ্যাঁ, একটি আঙ্গীকারনামা ছিল। তবে সেখানে অর্থ লেনদেনের বিষয় ছিল না। তবে আমরা তো পার্টি ফান্ডে টাকা দিই। আমিও দিয়েছি, কত টাকা দিয়েছি সঠিক অঙ্কটা বলবো না।
মসিউর রহমান রাঙ্গাকে টাকা দিয়েছেন কি না-জানতে চাইলে মাসুদা চৌধুরী আরো বলেন, তার সঙ্গে দেন-দরবারটা করেছে আমার ছেলে ব্যারিস্টার সানজিদ রশিদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমি পত্রিকায় দেখেছি আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমি কোনো নোটিশ পাইনি। পার্টিতে আমার কোনো চাঁদাও বাকি নেই।
মাসুদা চৌধুরীর ছেলে সানজিদ রশিদ বলেন, মসিউর রহমান রাঙ্গা মনোনয়নের আগে আমার মা এবং আমাকে তার বাসায় ডেকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন। মনোনয়নের আগে তিন কোটি টাকা দেওয়ার কথা হয়। বাকিটার জন্য ছয় মাস সময় চাই। তবে নির্বাচনের আগে আমি মসিউর রহমান রাঙ্গাকে পাঁচটি চেক দিই। পরে শপথ নেওয়ার আগে তিন কোটি টাকা ক্যাশ দিয়ে চেকগুলো ফেরত নিয়ে আসি।
তিনি দাবি করেন, এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি তার মা শপথ নেওয়ার দিন রাঙ্গা তার কাছে জরুরি ভিত্তিতে আরো কিছু টাকা চান। তিনি তার এক নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার চেক এনে তাকে দেন।
সাজিদ আরো বলেন, আমি পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য ছয় মাস সময় চেয়েছিলাম। সে হিসাবে আগস্ট মাসে সময় শেষে হবে। তবে তার আগে তিনি (রাঙ্গা) প্রায় প্রতিদিন টাকার জন্য আমাকে ফোনে মেসেজ পাঠান। জ্বালাতন শুরু করেন। সর্বশেষ আমার মায়ের সুনাম ক্ষুন্ন করতে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের নোটিশ দেন।
তিনি বলেন, মসিউর রহমান রাঙ্গাকে যে টাকা দিয়েছি তার সব তথ্য-প্রমাণ আমার কাছে আছে। দ্রুতই আমি সংবাদ সম্মেলনে সব জানাবো।
জানতে চাইলে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, গোপন কোনো অঙ্গীকারনামা বলে কিছু নেই। পার্টিতে বিধান আছে সংসদ সদস্য হতে হলে পার্টির চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। আমরা আগে খেয়াল করিনি, পরে দেখি ওনার দেড় বছরের চাঁদা বাকি। সেই কারণে পার্টির চেয়ারম্যান চিঠি দিয়েছেন। এ ছাড়া কথা ছিল এমপি হলে উনি চট্টগ্রামে পার্টির অফিস খুলবেন। উনি তাও করেননি। মাসুদা চৌধুরীর ছেলের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এ রকম কোনো টাকা নিইনি।
এদিকে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি যাতে আর না এগোয় সে জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটি গোপন বৈঠক করেছেন। মাসুদা চৌধুরীকে অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মুহম্মদ (জি এম) কাদের কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
মাসুদা চৌধুরীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে রাঙ্গার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুজনের সমর্থকরা দলের বনানীর কার্যালয়ে পাল্টাপাল্টি শক্তির মহড়া দেয়। জয় অভিযোগ করে বলেন, গত ১৯ জুন রাঙ্গা তাঁকে ফোনে হুমকি দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মাসুদা চৌধুরী ত্রিশ বছর ধরে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আছেন, আমরা চাই না তাঁকে নিয়ে এভাবে টানাহেঁচড়া হোক। এটি পার্টিরও ইজ্জতের বিষয়।
হুমকি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে রাঙ্গা বলেন, জয় আমার আত্মীয়। তাকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এ ছাড়া বনানী কার্যালয়ে শক্তি প্রদর্শনের বিষয়ে আমি এখনো কিছু জানি না।