মশা মারতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যান
অসচেতনাকে দুষছে দুই সিটি
এম এ স্বপন : রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৭২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৭ জনেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বেসরকারিতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাজধানী থেকে মশা মারতে না পারলে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রেরকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব-৭১। শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতদিন শুধুমাত্র রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলেও এখন ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলা ও চট্টগ্রাম জেলাতেও ডেঙ্গু আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা এখনো নামমাত্র হলেও যেকোনো সময় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে গেছে। আগে কয়েকদিন জ্বরে ভোগার পর গায়ে রশে ওঠা, চোখ লাল হওয়া ও রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যেত। কিন্তু এখন প্রথমদিন থেকেই রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমতে থাকে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে রোগীর হার্ট অ্যাটাক ও কিডনি বিকলের মতো ঘটনাও ঘটছে।
উদাহরণস্বরূপ তারা সম্প্রতি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পপুলার ও স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নারী চিকিৎসক ডা. নিগার নাহিদের একাধিকবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ কারো জ্বর হলে বাসায় না রেখে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসকদের জন্য নতুন করে চিকিৎসা গাইডলাইন তৈরি করেছেন। ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে কোন ওষুধ ব্যবহার করতে হবে, কী ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে আর কী কী ওষুধ বর্জন করতে হবে সে সম্পর্কে গাইডলাইনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০জুলাই পর্যন্ত ৩ হাজার ৪ ‘শ ৫৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮, মার্চে ১৭, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ১ ‘শ ৯৩, জুনে ১ হাজার ৭ ‘শ ৫০ এবং ১০ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৩ ‘শ ৮৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।
আক্রান্তদের মধ্যে এপ্রিলে ২ জন ও জুলাইয়ে ১ জনসহ মোট ৩ জনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছে এমন রোগীর সংখ্যা ৬ ৮৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭২ জন। ভর্তি মোট রোগীর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ জন, মিটফোর্ডে ১৬, শিশু হাসপাতালে ৫, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১৫, হলি ফ্যামিলিতে ১১, বারডেম ৪, মুগদা সরকারি হাসপাতালে ৩, বিজিবি হাসপাতাল ৬ ও অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৩ জন ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১ জন ভর্তি হয়েছে।
অসচেতনাকে দুষলেন দুই সিটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা : বর্ষার শুরুতেই ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু মশার প্রকোশ। সেই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রন শাখার তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় শুধু রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩০ জন রোগী। আর গত ১১ দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এক হাজার পাঁচ শ ৪৬ জনে। যা গত পুরো মাসে আক্রান্তের সমান। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যুও ঘটেছে। এতে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে নগরবাসীর জনজীবনে।
তবে ডেঙ্গুর প্রকোপ এবং রোগীর সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিত হারে বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এটির মূল কারণ হিসেবে জন সচেতনার অভাবকে দুষছেন ঢাকার দুই সিটির দায়িত্বশীল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কিংবা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হলেও শুধুমাত্র জনসচেতনার অভাবেই এটি নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না। আর এ কারণেই ক্রমেই অনিয়ন্ত্রিত হারে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে দাবি করছেন তারা। তাই জনগণকে সচেতন হওয়ার জোর দাবিও জানাচ্ছেন তারা।
কিন্তু নগরবাসী বলছেন, জনসচেতনার উপর দায় চাপিয়ে দুই সিটি ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রনে সিটি করপোরেশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না। এমনকি কোনো কোনো ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দেড়দুবছরে মশার ওষুধ তো দূরের কথা সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধন কর্মীদেরও দেখা মিলে নি কালেভদ্রে। আবার কোথাও কোথাও একবার ওষুধ ছিটালেও দীর্ঘদিন ধরে আর ঔষুধ ছিটানোর কোনো লক্ষণ থাকে না। এসব কারণেই মশার উপদ্রব বেড়েছে এবং রোগে আক্রান্ত হচ্ছে জানিয়ে বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এমনকি সিটি করপোরেশনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সিটি করপোরেশন মশা নিধনের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ও নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর (ডিএসসিসি) ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশও পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খিলগাঁও এলাকায় গত দুবছর ধরে শুধু আমি নয়, এলাকার কোনো বাসিন্দাও বলতে পারবে না যে তারা মশার ওষুধ তো দূরের কথা, মশা নিধন কর্মীদেরও এক নজর দেখেছে। তাহলে যেখানে মশা নিধন কর্মী নেই, মশার নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। সেখানে মশার উপদ্রবে যদি কেউ রোগাক্রান্ত হয় তাহলে সে দায় কি জনসচেতনার দোহায় দিয়ে এড়ানো যাবে? কিন্তু সিটি করপোরেশন সে কাজটিই করছে।
শুধু এই আইনজীবীই নন, এমন অভিযোগ করেছেন রাজধানীর নন্দীপাড়া, জুরাইন, মিরপুর, ভাষানটেক, বাসাবো, শনির আখড়া, হাজারীবাগ ও বছিলার বাসিন্দারা। নন্দীপাড়ার বাসিন্দা নাজমুল সাকিব বলেন, নিয়মানুযায়ী প্রতি একদিন দুদিন পর পর ঔষুধ ছিটানো তো দূরের কথা। মাসে একবারও যদি ঔষুধ ছিটানো হতো তাহলেও মনে হয় এমন হতো না। রাতের বেলা নয় শুধু, দিনের বেলাতেও মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ আমরা। একই অভিযোগ করলেন জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ডিএসসিসির ৪২৯ জন মশক নিধন কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। তারা প্রতিদিন সকাল বিকাল দুইবার মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ করে। তারা মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য সকালে লার্ভিসাইড এবং বিকালে অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ ছিটানোর কাজ করে।
এক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি যা যা করণীয় তা করার চেষ্টা করছে। বিশাল এলাকায় পর্যাপ্ত কর্মী না থাকলেও যারা আছে তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু শুধুমাত্র জনসচেতনতার অভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমরা স্বীকার করছি যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। কিন্তু সেটির জন্য অবশ্যই অসচেতনায় দায়ী। কারন আমাদের কর্মীরা বাসাবাড়ির বাহিরে ঔষুধ ছিটালেও নানা কারণে বাসাবাড়ির ভেতরে ওষুধ ছিটাতে পারছেন না। তাই বাসাবাড়ির ভেতরে তিনদিনের বেশি জমে থাকা টব, ফ্রিব কিংবা বাসার ছাদের পানিতেই ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তার ঘটে। আর তাই আমরা চেষ্টা করছি জনসচেনতা বাড়াতে। এজন্য আমরা বিজ্ঞাপন, লিফলেট, সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ণ করে যাচ্ছি।
বাসিন্দাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মশক নিধন কর্মীরা সব সময় ওষুধ ছিটানোর কাজ করে। তবে কেউ যদি তাদের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একই কথা বললেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন। তিনি বলেন, ২৮০ জন কর্মী সকাল বিকাল ঔষুধ ছিটাচ্ছে ডিএনসিসির সব এলাকায়। কিন্তু জনসচেতনার অভাবে আমরা তা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করতে পারছিনা। উন্নয়ন কাজে সড়কে কনস্ট্রাকশন কাজ হয়। সেখানে পানি জমে। এটাও একটা কারণ। আবার বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানিও একটা কারণ। তাই আমরা জনসচেতনতায় নানা কর্মসূচী করে যাচ্ছি।
ওষুধ ছিটালে কাজ হচ্ছে না কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঔষুধ কাজ হচ্ছে না বলা যাবে না। কাজ ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু ওইযে আন্ডার কনস্ট্রাকশন এবং বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানির কারণেই তা পুরোপুরি কাজে আসছে না। কারণ সেসব জায়গায় তো ওষুধ ছিটানো যায় না। তাই সেসব স্থান থেকে সৃষ্ট মশা গুলোই দ্রুত বিস্তার ঘটায়। আর এ কারণে কিছুটা অনিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ।
বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সহকারি পরিচালক ডা. আয়েশা আজম বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে এতে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। সাবধানতা অবলম্বন এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করলে নিরাময় হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, জুন মাসে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৭৫১ জন। আর চলতি মাসের ১১ দিনে সেই সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৬ জন। যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ ডেঙ্গুর প্রকোপটা সাধারণত আগষ্ট–সেপ্টেম্বরের দিকে হয়। কিন্তু চলতি বর্ষার আগেই শুরু হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপও আগে শুরু হয়েছে।
মশা মারতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যান : ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাজধানী থেকে মশা মারতে না পারলে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রেরকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব-৭১।
শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ রাজধানীর দুই মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলেন। আমি তো আমার ঘর পরিষ্কার রাখি। কিন্তু আপনারা নর্দমা পরিষ্কার করেছেন কি? নর্দমা থেকে যে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখছেন কি?
এছাড়া ডেঙ্গুতে কতজন মারা গেছে, কতজন অসুস্থ আছে তার কোনো বিবৃতি মেয়ররা দেননি উল্লেখ করে বলেন, আপনাদের দায়িত্বহীনতার কারণে মানুষের জীবনহানি হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। আপনারা দুই মেয়র বসেন। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধে করনীয় ঠিক করেন। তা না হলে জনগণ আপনাদের ছেড়ে দেবে না।
গাজী টেলিভিশন ও সারাবাংলা ডটনেটের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, মেয়রদের যত কাজই থাকুক, এখন তাদের শুধু একটা কাজ, তা হলো ‘মশা মারা’। যদি এটি ঠিকমত করতে না পারেন তাহলে তাদের উচিত ব্যর্থতার দায় নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া।
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, শহর এখন মশার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সিটি করপোরেশন এ বিষয়টি অস্বীকার করে যাচ্ছে। ডেঙ্গু যখন একটু একটু করে বাড়ছে, গণমাধ্যম যখন রিপোর্ট করতে শুরু করেছে, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন যখন বিষয়টি সিটি করপোরেশনে জানাচ্ছে তখন আমরা দেখেছি তারা বিষয়টি অস্বীকার করছে। বিশেষ করে দক্ষিণের মেয়র- তিনি কথায় কথায় বলেন যে ডেঙ্গু এমন কোনো বড় আকার নেয়নি, যে সিটি করপোরেশনকে বিচলিত হতে হবে।
সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজা আরও বলেন, এ মুহূর্তে আমরা দুই সিটি মেয়রকে একটি কাজ বেঁধে দিতে চায়, আপনাদের আর কোনো কাজ নেই- শুধু মশা মারা। আপনারা মশা মারতে এসেছেন, আপনারা শুধু মশা মারবেন, মশা মারা ছাড়া আর কোনো কাজ আপনাদের থাকতে পারে না। যদি মশা মারতে না পারেন তাহলে আমাদের আহ্বান ঢাকা থেকে ছড়ে চলে যান। অন্তত ঢাকাবাসী দুজন মানুষ থেকে মুক্তি পাবে।
বিক্ষোভ অংশগ্রহণকারীরা বলেন, প্রতিদিন ১৫৫ জন রোগী হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। আমরা যারা সেচ্ছায় রক্তদানে কাজ করি গত এক সপ্তাহ চরম হিমশিম খাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, মেয়ররা বলছেন মশা ওষুধের চেয়ে শক্তিশালী। তাহলে আপনারা দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করুন। আমাদের অর্থমন্ত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সংসদে এসেছেন। তার বাজেট বক্তৃতা প্রধানমন্ত্রী পড়ে দিয়েছিলেন। তারপরও আপনাদের টনক নড়েনি। আপনারা এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত হননি এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। তাহলে বুঝতেন এটার ভয়াবহতা কি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসু, ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান সুইট, ইঞ্জিনিয়ার শাকিল আহমেদ, আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু, মানবাধিকার কর্মী পদ্মাবতী দেবী, ডা. শাহাদাত হোসেন নিপুসহ অনেকে। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত পরিবারের পক্ষ থেকে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অম্বিক ম-ল ও গুলশাহানা ঊর্মি।