ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ তৈরির কুশিলবরা গ্রেফতার ও হয়, আবার জামিনে বেরিয়ে এসে স্বরুপ ধারণও করে

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ তৈরির কুশিলবরা গ্রেফতার ও হয়, আবার জামিনে বেরিয়ে এসে স্বরুপ ধারণও করে, চলতি বছরের ৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় নকল ওষুধ উৎপাদনের অভিযোগে ওয়েস্ট আয়ুর্বেদিক ল্যাবরেটরিজ কারখানা সিলগালা করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে কারখানাটির মালামালও। পুলিশের তথ্য মতে, ওই কারখানা থেকে উৎপাদিত ওষুধ দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ওষুধ মার্কেট মিটফোর্ড এলাকায় পৌঁছে যেত। এরপর ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এবং কুরিয়ার সার্ভিসে ছড়িয়ে দেয়া হতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফার্মেসিতে। এর আগে ভেজাল ওষুধ উৎপাদনের অভিযোগে কারখানাটির মালিক গিয়াস উদ্দিনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
পরের ঘটনাটি গত ৩০ মার্চের। খোদ রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ উদ্ধার সহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম শহরে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির মোড়কে ৩ হাজার ৬৪১ ভেজাল ওষুধ জব্দ করে র‌্যাব। এসব ওষুধের মধ্যে রয়েছে এন্টিবায়োটিক, স্টেরয়েডের মতো ওষুধও। ভেজাল ওষুধ বিক্রির সঙ্গে জড়িত চক্রের ২ সদস্যকেও তখন গ্রেপ্তার করা হয়। যে দেশের ওষুধের সুনাম ও চাহিদা বিশ্বজুড়ে- সেই দেশে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। শুধু মুখে খাওয়ার ওষুধই নয় ইনহেলার, অয়েন্টমেন্ট, ইনজেকশনের মতো ওষুধও নকল হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালালেও ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য বন্ধে যেন কোনো প্রভাবই পড়ছে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজারে যে ওষুধ বিক্রি হয় তার শতকরা ১৫ ভাগ ওষুধ নিম্নমানের, ভেজাল বা নকল। কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি হয়। মোট ওষুধ বিক্রির প্রায় ২০ শতাংশ। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) সমমনা ১০টি সংগঠন আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে বলা হয়, দেশে বছরে ৩০০ কোটি টাকার ভেজাল ওষুধ তৈরি হয়। দেশের ওষুধ-শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে মোট উৎপাদিত ওষুধের অন্তত ২ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি বছর ৩০০ কোটি টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের ভেজাল, নকল ও নিম্নমানের ওষুধ তৈরি হয়। নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানি ভেজাল ওষুধ বাজারজাত করে। অনেক সময় এসব ওষুধে উৎপাদন ও মেয়াদের শেষ তারিখও থাকে না।

সম্প্রতি সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী বলেছিলেন, গত বছর নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রির দায়ে ২ হাজার ১৪৫টি মামলায় ১২ কোটি ৪১ লাখ ৬ হাজার ৪৮৪ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সময় ৩৯ জন আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৪৪টি প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা এবং ৪৬ কেটি ৬২ লাখ টাকার মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়।
এসব তথ্য থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয়,বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধের সুনাম থাকলেও দেশীয় বাজারে চলছে চরম নৈরাজ্য । বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, নকল-ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনে ঢাকা সহ সারাদেশে একাধিক চক্র সক্রিয়।
গত কয়েক বছরে মিটফোর্ডের বাজার থেকেই কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। এসব ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় আটা-ময়দা আর রং। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নকল ওষুধ উৎপাদনকারীরা বিভিন্ন এলাকায় কারখানা বানায়। তবে তাদের পাইকারি বাজার মিটফোর্ড। এখান থেকেই ভেজাল ওষুধ ছড়ায় সারাদেশে।মিটফোর্ডে খোলাবাজারে বিক্রি হয় ওষুধ তৈরির কাঁচামাল। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিই শুধু ওষুধ তৈরির কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। এ ছাড়াও কিছু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানও ঔষধের কাঁচামাল আমদানি করে। আবার লাগেজ ও চোরাই পথে ও ঔষধের কাঁচামাল এদেশে প্রবেশ করে। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের বিরুদ্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অভিযান মানেই উর্ধতন মহলের আইওয়াশ। অভিযানে নকল ও ভেজাল ওষুধ উদ্ধার,এসব নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক ও স্থায়ী বাতিল,ঔষধের পদ বাতিল করা হলেও উতপাদন ও বাজারজাত থেমে থাকেনা। বরং বাতিল কোম্পানির বাতিল ঔষধের বিকিকিনির মহা উৎসব। সংশ্লিষ্টরা বলছে নকল ও ভেজাল ওষুধে পুরো দেশ ছেয়ে গেছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ তৈরি করা হচ্ছে।এসব দেখার জন্য আছে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ধীন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, তারা নকল ভেজাল ও বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ না করে বরং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ঔষধ সামগ্রীর উতপাদন ও বাজারজাতে প্রকারান্তরে সহায়তা করে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ কে ব্যর্থতায় রুপ দিচ্ছে।মিটফোর্ডের খোলাবাজারে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরির কাঁচামাল খোলাবাজারে দূষিত পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে।ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে মিটফোর্ডে ৬ টি ডিপো লাইসেন্সের অনুমোদন দিয়েছে, ওই ৬ টি প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতি অনুসরণ করেই ব্যাবসা করছে, কিন্তু বাকিরা যাইচ্ছা তাই করছে, ধার ধারছেনা কোন নিয়মনীতিরই।   আবার সাধারণ ফার্মেসি লাইসেন্স নিয়ে ঔষধের ডিপো সহ ঔষধের কাঁচামাল ও বিক্রি করছে। এসব মানহীন কাঁচামালে তৈরি করা ঔষধ কতোটা মানসম্মত?

মিটফোর্ডের একশ্রেণির দাদন ব্যাবসায়ী আছে তারা বিভিন্ন বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির মালিকদের নিম্নমানের ঔষধের কাঁচামাল সরবরাহ করে ফিনিস প্রডাক্ট অতি অল্প দামে ঔষধ নিয়ে বাজারজাত করার কারণে বন্ধ হচ্ছে না ভেজাল ও মানহীন ওষুধ বিক্রির বিকিকিনি। এসব বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধ খেয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিকার পাওয়ারও সুযোগ নেই কারন এসব মানহীন ঔষধ নামক নীরব ঘাতকের শিকার দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষ। এছাড়া ওষুধ প্রশাসনের নজরদারির অভাব ,দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবলের সংকট এই সমস্যাকে প্রকট করে তুলেছে। এসব নকল ও ভেজাল ওষুধে দিন দিন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে। ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ দেশের জনস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে ফলে রোগ সারার বদলে উল্টে আরো জটিলতা বাড়ছে।ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান অনেক গুলো ইউনানি, আয়ুর্বেদিক, এলোপ্যাথিক ও হোমিও ঔষধ কোম্পানির লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঔষধ নিম্নমানের বিবেচিত হওয়ায় ওই সব ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও প্রকাশ করে। নিয়মানুসারে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে কোন ঔষধের নমুনা পরিক্ষায় নিম্নমানের বিবেচিত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ঔষধ কোম্পানির কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সম্পুর্ণ নিজের খরচে বাজার থেকে ওই কোম্পানির ঔষধ প্রত্যাহার করে নিবে এবং বহুল প্রচলিত ৩ টি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও প্রকাশ করতে হবে।অথচ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে ওই ঔষধ প্রত্যাহার না করে বরং পূর্বের তারিখ ও ব্যাচ নাম্বার পরিবর্তন করে নিম্নমানের বিবেচিত হওয়া ঔষধ ই দেদারসে উৎপাদন ও বাজারজাত করে। সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বেরত কর্মকর্তা এবং নথি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সবকিছু জেনেও না জানার ভান করে। অনেক ঔষধ কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল থাকা সত্ত্বেও ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাত করে চলছে।ইউনানি, আয়ুর্বেদিক ,হারবাল ও হোমিও ঔষধ কোম্পানির মালিকেরা তাঁদের কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধ তৈরিকালে শুধুমাত্র কালার ফ্লেভার ও কেমিক্যাল ব্যাবহার করে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসব জানেন তারপরও থেমে নেই ঔষধ তৈরিতে কালার ফ্লেভার ও  ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহার। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, যৌন উত্তেজক ঔষধে সিনড্রেনাফিন সাইট্রেট, ভিটামিন ঔষধে স্টোরয়েড জাতীয় কেমিক্যাল, গ্যাস্টিক ও আলসারের ঔষধে যথাক্রমে এন্টাসিড, রেনিটিডিন ও আমিওপ্রাজল, ব্যাথা-বেদনা নাশক ঔষধে ডাইক্লোফেনাক জাতীয় কেমিক্যাল, জ্বরের ঔষধে প্যারাসিটামল কেফেইন।অনেক কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল শনাক্ত হয়। কোম্পানির উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল হয়, ক্ষেত্র বিশেষ ঔষধের পদের উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ ও হয়, তবে তা শুধু ই কাগজে কলমে বাস্তব রুপ ভিন্ন। (রিপোর্টে যেসকল ঔষধ কোম্পানির ঔষধের ছবি দেওয়া হয়েছে ওই সকল কোম্পানি পরিদর্শন  ও কোম্পানির উৎপাদিত ঔষধ সমুহের নমুনা পরিক্ষা করলে অত্র রিপোর্টের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে) 


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *