বিশেষ প্রতিবেদন ঃ নড়াইলে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত সাইনবোর্ড লাগিয়ে অবৈধভাবে সর্বরোগের চিকিৎসা চলছে দীর্ঘদিন যাবত। হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অবৈধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রনে রাখতে পালন করে রেখেছে নাশকতা সহ বহু মামলার আসামীর নেতৃত্বে মাস্তান বাহিনী। যার সংবাদের সংগ্রহে যাওয়ায় তিন সাংবাদিককে মাইকে ডাকাত সাংবাদিকরা হামলা করেছে ঘোষণা দিয়ে পেটানো ও মিথ্যা সাঁজানো চাঁদাবাজি দিয়ে এখনো বহাল তবিয়তে থাকা কথিত খোকন হুজুরের খুঁটির জোর কোথায়? এমন প্রশ্ন এখন নড়াইল সহ সারাদেশের সাংবাদিক সমাজের।
জানা যায়, নড়াইলের সদর উপজেলার আগদিয়া গ্রামের আব্দুর রউফ সিকদার ওরফে (খোকন হুজুর)। তিনি একজন সর্ব রোগের চিকিৎসক। ইউনানী ও আর্য়ুবেদীসহ নানা অপচিকিৎসা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই কথিত চিকিৎসক খোকন।
দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া সর্বরোগের এই চিকিৎসক জ¦ীনের আছর, ঝাড় ফুক, প্রেমের সম্পর্ক গড়ে দেয়া, স্বামী স্ত্রী’র মিলন, নিঃসন্তান দম্পত্তির সন্তান দেওয়া, যৌনরোগ, কিডনিজনিত সমস্য, হার্টের সমস্য, আল্সার, গ্যাষ্ট্রিক, করোনা, টাইফয়েড জ¦র, মাথা ব্যাথা, হাটু ব্যথা, ক্যান্সার, জন্ডিস, হাপানি, লিভার সমস্যাসহ মহিলাদের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করে আছে। সেই সাথে নামসর্বস্ব বিতর্কিত ঔষধ কোম্পানির বিতর্কিত ঔষধ সামগ্রী দিয়ে তথা আর্য়ুবেদীক ও ইউনানী চিকিৎসা দেন তিনি।
এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন বিশাল অবৈধ কর্মকান্ডের সহযোগী সিন্ডিকেট। করোনা ভাইরাস এর সংক্রামণ কালে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে আগদীয়া বাজারে ওয়াজ মহফিল ও গান জামায়াতের আয়োজন করে যা রীতিমতো জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী কর্মকান্ডের সামিল । তার এহেন জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধ করতে গিয়ে বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলামকে হেনেস্তা করে খেকন বাহিনীর সদস্যরা।পরে নড়াইলের পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তোক্ষেপে ওই গনজামায়েতের অপচেষ্টা বন্ধ হয়।শুধু তাই নয় তার এতিমখানায় ছাত্রদের সরকার বিরোধী বিশেষ কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয় বলে স্থানীয় বিশেষ সুত্রের দাবি।স্থানীয়দের মতে খোকন হুজুরের কর্মকান্ডের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন।
একদিকে তিনি স্থানীয়দের তাবিজ কবজ দিচ্ছেন অপরদিকে তিনি একাই সর্ব রোগের চিকিৎসা ও দিচ্ছেন। তার ভিডিও তে তিনি বলেন তিনি চিকিৎসা সেবা বা ঔষধ সামগ্রী সম্পর্কে একটু কম জানেন। তাহলে তিনি স্থানীয় জনসাধারণের চিকিৎসা করছেন কিসের ভিত্তিতে? তিনি কি কোন ফার্মাসিস্ট, কবিরাজ না হেকিম? তিনি কোন আয়ুর্বেদিক বা ইউনানি কলেজে পড়াশোনা করেছেন? তার না আছে কোন ডিগ্রি না আছে কোন প্রকার ঔষধ সামগ্রীর বিষয়ে সঠিক ধারণা। এখানে প্রশ্ন ওঠে সারাদেশে ও বিদেশ থেকে ডাক্তারী পড়ে চিকিৎসা দেয়া ও মানসম্পন্ন হাসপাতাল গুলোর কি দরকার? যদি খোকন হুজুরই সব পারে এই প্রশ্ন অভিজ্ঞমহলের।
গত (১৩ জানুয়ারি) শুক্রবার সাংবাদিকরা সরেজমিনে গেলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে কথিত সর্ব রোগের চিকিৎসক খোকনের থলের বিড়াল। এই ভুয়া চিকিৎসকের শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাইলে সঞ্চারিত হয় নতুন অভিজ্ঞতার ঝুলি। তিনি বলেন, আমি জেনারেল লাইনে কামিল পাশ। কিন্তু বাংলাদেশ শিক্ষা ব্যবস্থায় জেনারেল বিভাগের কামিল বলে কোন বিভাগ নাই। আছে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যনিজ্য। তিনি নাকি সাধারন বিভাগ নিয়ে পাশ করেছেন। তাহলে প্রশ্ন থাকে যে তিনি কি শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারন বিভাগ নামে নতুন বিভাগ নিজে তৈরি করেছেন? পরদিকে, সর্বরোগের রোগীদের চিকিৎসক খোকন কিভাবে আর্য়ুবেদিক ও ইউনানী চিকিৎসা দেন। এবিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারে নাই। শুধু তিনি স্বীকার করেছেন তার একটু যোগ্যতা কম। যা হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়-ঔষধ প্রশাসন পরিদপ্তর কর্তৃক আর্য়ুবেদী ও ইউনানী চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। রয়েছে ওষুধ প্রস্তুত, মজুদ ও বাজারজাতে ফার্মেসী নিয়ন্ত্রনে আইন। কিন্তু এই সর্বরোগের চিকিৎসক খোকন নিজ বাড়িতে আনুমানিক ৭/৮ লাখ টাকার ইউনানী ও আর্য়ুবেদী ঔষধ মজুত ও বিক্রয় অব্যাহত রেখেছেন। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়-ঔষধ প্রশাসন পরিদপ্তর ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ আইনের পরিপন্থী।
তিনি শুধুমাত্র হলুদ খামে প্রশাসন ও তার গৃহপালিত কথিত সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রন করে কোন আইনের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামত প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে ও পালিত মাস্তান বাহিন কে ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছনে সর্ব রোগের অপচিকিৎসা। অথচ ঔষধ ও চিকিৎসা সেবা সঠিক ব্যবস্থায় প্রয়োগ করে জীবন বাঁচানোর জন্য।
ঘটনার দিন সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে মারধর, লাঞ্চিত করে নড়াইল থানায় তদন্ত ছাড়াই সাঁজানো মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে জেলজাহতে পাঠায়। ঐদিন তাদের হামলা ও মারধরে সাংবাদিকরা মারাও যেতে পারতো। এ বিষয়ে শত শত জাতীয় আঞ্চলিক প্রিন্ট এবং অনলাইন পত্রিকায় ফলাও সংবাদ প্রকাশ হলেও নড়াইল জেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের টনক নড়েনি। যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। প্রশাসনের ঘুম ভেঙ্গে সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও কথিত সর্বরোগের চিকিৎসককে গ্রেফতার সহ আইনের আওতায় এনে কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন।
উক্ত ঘৃনিত ঘটনায় নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রবীণ প্রথিতযশা সাংবাদিক এনামুল কবির টুকু নিজে জেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিং-এ সাংবাদিকদের উপর হামলার নগ্ন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও কথিত সর্বরোগের চিকিৎসককে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
সাংবাদিকদের কাছে থাকা তথ্য প্রমাণ ও ভিডিও ফুটেজে ঘটনার সময়, আগে ও পরে আব্দুর রউফ সিকদার সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিকরা আমার যোগ্যতা যাচাই করতে এসেছে, তারা কোন চাঁদা চায়নি। যার ভিডিও ফুটেজ ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার তথা ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে, তথ্য সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে না পেরে আব্দুর রউফ সিকদার ঢাকার ইউনানী ও আয়ুর্বেদী ”ইকরাম কোম্পানির’ এমডি পরিচয়দানকারী ইকরাম নামের এক ব্যাক্তিকে মুঠোফোনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে ধরিয়ে দেন।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আব্দুর রউফ সিকদার ঢাকায় আমার কাছে আসলে আমি ঢাকার একটি কলেজে ভর্তি করে দেই এবং কোন ক্লাস করা লাগেনি যারা জানে তারা বোঝে, কিছু দিন পরে আমি আব্দুর রউফ সিকদারকে একটি সার্টিফিকেট নিয়ে দিয়েছি।
এরপর আবারও নড়াইলের দন্তচিকিৎসক নাছির উদ্দিনকে ফোনে ধরিয়ে দেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আব্দুর রউফ সিকদারের কোন সার্টিফিকেট নাই। অনেক দিন ধরে কবিরাজি করেন। তাই উনি ঔষুধ বিক্রি করতে পারবে বলে সার্টিফাইড করেন
কিন্তু মিথ্যাবাদী, খোকন হুজুর পরিচয়দানকারী কথিত সর্বরোগের চিকিৎসক আব্দুর রউফ সিকদার মান্তান বাহিনী দিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা মারধর ও তাদের নামে মিথ্যা-ভিত্তিহীন, সাঁজানো চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করে। যা চরম লজ্জাজনক, ঘৃণিত ও নিন্দনীয় বিষয়।
এবিষয়ে নড়াইল জেলার সিভিল সার্জন নাসিমা আকতারের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা কাগজ পত্র জমা দেন তারপর তদন্ত করে দেখবো। সিভিল সার্জন এবিষয়ে সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্বাবধায়কের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
নড়াইল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্বাবধায়ক ডাঃ সুব্রত কুমার সাংবাদিকদের জানান, আমরা তো তাকে চিনি না, ঠিকানা দেন। এটা তো আলাদা পার্ট, আমরা তদন্ত করে বিষয়টি দেখব।
এখন প্রশ্ন আর কতজন সাংবাদিক পেটানোর পর নড়াইলের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দপ্তরগুলো ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠে অবশেষে তদন্ত করে দেখবেন আর ব্যবস্থা নেবেন? না-কি “ডাল-মে কুচ কালা-হে”? খোকন ও তার ডানহাত ইমরান শিকদার নামক সন্ত্রাসীর “বাজেট নামক-হলুদ খামে” বন্দী হয়ে সবাই কি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন? এসকল প্রশ্ন সচেতন সমাজ ও সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ।
আগদিয়া বাজারের এক সময়ের মরিচ বিক্রেতা, ভাটপাড়া ও মোড়লগঞ্জের ২ নারী সম্পর্কিত কেলেঙ্কারীর হোতা, সর্ব রোগের চিকিৎসক, অবৈধ আয়ে কোটিপতি বহু বিত্ত বৈভবের মালিক আব্দুর রউফ শিকদার, তার শেল্টারদাতা ছেলে সাজেদুল ও শুকুর শিকদারের ছেলে নাশকতাসহ বহু মামলার আসামী, সন্ত্রাসী-মাদক সেবী ও ব্যবসায়ী ইমরান শিকদারের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্য প্রমাণ সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। যার সত্যতা যাচাই পূর্বক আগামীতে ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হবে। যতদিন পর্যন্ত “বাজেট নামক হলুদ খাম” প্রাপ্ত নড়াইলের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের গভীর ঘুম না ভাঙবে। (চলবে…)