মো:রফিকুল ইসলাম,নড়াইলঃ
নড়াইলে সার সিন্ডিকেটের হোতা অলোক কুন্ডুর ট্রাক ভর্তি ৪৪০ বস্তা টিএসপি সারসহ আটক করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাতে শহরের মুচিপোল এলাকা থেকে ট্রাকটি আটক করা হয়। অলোক কুন্ডু ওই সার নিজের দাবি করলেও তার পক্ষে কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সারসহ ট্রাকটি আটক করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়। অপরদিকে কেচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসতে পারে বলে ধারনা করছেন,সচেতন মহল। কারন জেলার সার সিন্ডিগেট নিয়ন্ত্রন করে থাকে ৪-৫ জন। এদের মধ্যে অন্যতম অলোক কুন্ডু। নামে বেনামে জেলায় রয়েছে তার নিয়ন্ত্রনাধিক ডিলার,তারা শুধু নামে সার ডিলার,তবে সব কিছু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্র করে থাকে অলোক কুন্ডু। বিএডিসি ও কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এসব নিয়ন্ত্রন করে থাকেন এই দুর্নীতিবাজ অলক কুন্ড। তার বিরুদ্ধে কেউ ভয়ে কথা বলতে পারেন না। গণমাধ্যম কর্মি’রা নিউজ করলে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা অথবা চাঁদাবাজির উল্টো অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সারসহ ট্রাক আটকের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধূরীকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী,পুলিশ জানায়,গণমাধ্যম কর্মি’রা জানতে পারে ট্রাকে সার রাতের আধারে পাচার করা হচ্ছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যার পর যশোর-ট- ১১-৪১৫৮ ট্রাকটি মুচিপোলে পৌঁছালে গণমাধ্যম কর্মি’রা ট্রাকটি থামালে চালক মিজানুর রহমান জানান,অলোক কুন্ডু সার বোঝাই ট্রাকটি তার অফিসের সামনে রাখতে বলেছে,পরক্ষনে আবারও বলেন,যে কোন একটি তেলের পাম্পে নিয়ে যেতে বলেছেন। এমন কথা বার্তায় সন্দেহ হলে,সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমানকে বিষয়টি জানালে,তিনি সাথে সাথে পুলিশ পাঠান। এসময় সারের মালিক দাবি করে,সার সিন্ডিকেট হোতা অলোক কুন্ডু এসে নিজের সার দাবি করে বলেন,সার মাইজপাজা ও কালিয়া যাবে। মাইজপাড়া এক সড়ক আর অন্য সড়কে কালিয়া,কিভাবে যাচ্ছে,এমন প্রশ্নের জবাবের প্রায় এক ঘন্টা পর,কিছু মেমো নিয়ে আসেন তাতে অলোক কুন্ডুর কোন সার নেই। সার লোহাগড়ার ডিলার মিলন সাহার ৭৫ বস্তা এবং কালিয়ার সার ডিলার তপন দত্তর ৩৬৫ বস্তা সার। তখন অলোককুন্ডু দাবি করেন,সার আমার না, আমি ট্রাকের মালিক, ট্রাক ভাড়ার টাকা দিতে আসছিলেন,আমার কাছে।
সার সিন্ডিকেটের প্রধান অলোক কুন্ডু’র নামে বে নামে সার ডিলার নিয়োগ দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে সার তুলে অন্য জেলায় কালো বাজারে বিক্রী করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আটকের ওইদিন রাত ১০টার দিকে পুলিশ সুপার মোছাঃ সাদিরা খাতুনের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম কামরুজ্জামান,থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নির্দেশে ঘটনাস্থলে আসেন,সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদর ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেলিম আহম্মেদ। রাতে সারসহ ট্রাকটি আটক করে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়। নড়াইল বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানাগেছে,সার লোহাগড়ার ডিলার মিলন সাহার ৭৫ বস্তা সার উত্তলন করেছেন,অলোক কুন্ডুর গাড়ি চালক শহরের আলাদাতপুর এলাকার রমজান এবং কালিয়ার সার ডিলার তপন দত্তর ৩৬৫ বস্তা সার উত্তলন করেছেন, সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের পানতিতা গ্রামের অমৃত সিকদার,প্রতিমাসে বিএডিসি থেকে সার তোলার নিয়ম রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখে সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মাসের বরাদ্দ অনুমোদন করেন। অথচ ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯.৭৫ টন সার একদিনে ডেলিভারি হয়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পরেশন (বিএডিসি) নড়াইলের উপ-সহকারী পরিচালক (সার) সুবাস চন্দ্র সরকার এসব বিষয়ে উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের দোহায় দিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন,আমাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করার জন্য জেলা প্রশাসক স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি ৪-৫ সদস্যে হতে পারে এবং এক সপ্তাহর মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হতে পারে। স্যার জরুরী মিটিং এ খুলনায় রয়েছেন,সেখান থেকে ফিরে আসার পরে এসব চূড়ান্ত হবে। পুলিশ সুপার মোছাঃ সাদিরা খাতুন ৪৪০ বস্তা সার আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদ পাওয়ার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযেগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
