পিংকি জাহানারা : খুলনা মহানগরী খালিশপুর থানা আওয়ামীলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক কে এম কবির এর ওপর প্রতিবেশী কর্তৃক কঠোর নির্যাতন ও জীবনের হুমকি প্রদানের প্রতিবাদে রবিবার ৩০ এপ্রিল, বেলা ১১ টায় খুলনা প্রেসক্লাব হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা কে এম কবির জানান,, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিক সম্মেলন করতে হচ্ছে এটা আমার দূর্ভাগ্য।
আমি দীর্ঘ ৪ (চার) মাস চোখের করনিয়া সমস্যায় ঢাকাতে অধ্যাপক (ডাঃ) সামছুল হক এর চিকিৎসাধীন আছি। বিপদের চরম শিখরে নিমজ্জিত হয়ে আপনাদের সাহায্য কামনা করে সাংবাদিক সম্মেলন করছি।আমার প্রতিবেশী রেলওয়ের জায়গায় বসবাসকারী মোজাম্মেল হক আকস্মিক ভাবে গত ০৬/১১/২০১৮ সালে সিটি কর্পোরেশন থেকে বরাদ্দ নেওয়া আমার ১৫৮/১ এর দোকান ঘরের উত্তর পাশের দেওয়ালের সাথে দেওয়াল গেঁথে স্কেচ ম্যাপে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত গলি পথের পশ্চিম দিকে লোহার গেট লাগিয়ে গলিপথ দখলে নেওয়ার দুরভীসন্ধি চালালে আমি অভিযোগ করলে সিটি কর্পোরেশনের ষ্টেট অফিসার মহোদয় সরজমিনে হাজির হয়ে লোহার গেট ভেঙ্গে দিয়ে দেওয়াল খুলে নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে মোজাম্মেল হক দেওয়াল খুলে নেয়।
আমি ঢাকাতে চিকিৎসাধীন থাকায় বেপরোয়া ধুর্ত মোজাম্মেল হক ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পর্দা টানিয়ে গোপনে কাজ শুরু করলে আমি ঢাকা থেকে ৯৯৯ জরুরী পুলিশ প্রশাসনকে জানালে গত ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ বিকাল বেলা অবৈধ কাজ বন্ধ করে দেন। এবং পরের দিন গত ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, সকাল বেলা সিটি কর্পোরেশনের ষ্টেট অফিসার মহোদয় অফিস সহকারী মোঃ আবু সাইদকে ঘটনাস্থলে পাঠাইয়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
কিছুদিন পর মোজাম্মেল হক বর্ণিত জায়গায় তার পুরনো মুরগীর ফার্মের পরিত্যক্ত কাঠামোতে বসতবাড়ী করার জন্য সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত গলিপথ বন্ধ করে আমার বসতবাড়ীর দেওয়াল থেকে ১০ ইঞ্চিও ফাঁকা না রেখে ৪টি জানালার আলো বাতাস বন্ধ করে বাড়ী নির্মাণের পিলার বসালে আমার পুত্র বধু গত ৯ এপ্রিল খালিশপুর থানায় অভিযোগ করে, অভিযোগ নং-৪১৭। এবং গত ১২ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট খুলনা আদালতে মামলা করে। উল্লেখ্য, আমার ২টি ছেলে চাকুরীর সুবাদে খুলনার বাহিরে থাকে এবং আমরা স্বামী-স্ত্রী চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থানরত।
আদালতের আদেশক্রমে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের নির্দেশ মোতাবেক সচিব তাৎক্ষনিকভাবে আন্তরিক সহযোগিতায় গত ১৩ এপ্রিল আনুমানিক বেলা সাড়ে ৩ টায় সিটি কর্পোরেশনের ইমতিয়াজ আহম্মদ ও আবু সাইদকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে অবৈধ কাজ বন্ধ করে দেন।
একদিন কাজ বন্ধ রাখার পর পুনরায় কাজ শুরু করলে আমার পুত্র বধু সিটি কর্পোরেশনের সচিব মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেন। সচিব আমার পুত্র বধুকে ষ্টেট অফিসারের কাছে পাঠালে তিনি আবারও কাজ বন্ধ করান এবং ঈদের পরে সকলে বসে সমাধান করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। ২/৩ দিন কাজ বন্ধ রাখার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর ছুটির মধ্যে পুনরায় কাজ শুরু করলে আমরা খালিশপুর থানায় যোগাযোগ করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত এস আই আব্দুল মান্নান সাহেব বলেন আমাদের কিছু বলার নাই,আপনারা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম খান খোকন-এর সাথে যোগাযোগ করেন।
ঈদের ছুটির মধ্যে সকল আইন-কানুন বিধি-বিধান অমান্য করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে জোরপূর্বক সিটি কর্পোরেশনের গলিপথ বন্ধ করে আমার ১৫৮/১ এর দোকানের পূর্ব পাশের দেওয়াল ঘেঁষে দেওয়াল দিয়ে ও আমার বসতবাড়ীর ৪টি জানালার আলো বাতাস বন্ধ করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ের পিছনে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দিবা রাত্র কাজ করে।
প্রসংগত বিশেষভাবে উল্লেখ্য, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস্ প্রাতিষ্ঠানিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়টি ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমি সাবেক কমান্ডার হিসাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয় বরাবর গত ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে আবেদন করলে তিনি খুলনা জেলা প্রশাসক এর কাছে আবেদনটি পাঠালে জেলা প্রশাসক সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিঘলিয়া খুলনাকে সরজমিনে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর দাখিলকৃত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়টির পিছনে প্রায় ৬.০০x২৭.০০ ফুট সিটি কর্পোরেশনের জায়গা। রেলওয়ের জায়গায় বসবাসকারী মোজাম্মেল হক এর অবৈধ দখলের ফলে কার্যালয়টির পিছনের দেওয়াল মেরামত করা যাচ্ছেনা বিধায় কার্যালয়টির খুব ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মহোদয় মোজাম্মেল হককে অফিসে ডেকে নিয়ে গলিপথ বন্ধ করে মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের ক্ষতি করে কাজ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আরও উল্লেখ থাকে যে, ইতোপূর্বে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়টি ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কেসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে দুর্বৃত্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের বারান্দায় রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বড় বড় দুইটি সাইনবোর্ড ও কার্যালয়ের সম্মুখ হতে টিউবওয়েলের মাথা রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে আমরা গত ০৪/০১/২০২০ সালে
খালিশপুর থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের জায়গা সিটি কর্পোরেশন থেকে কার্যালয়ের নামে বরাদ্দ নিয়ে খাজনা-ভ্যাট দেওয়া হয়েছে। কার্যালয়ের পিছনের দেওয়াল রক্ষা ও যাতায়াতের সুবিধার্থে সিটি কর্পোরেশনের উপরে বর্নিত জায়গাটুকু মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ের নামে বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সাংসদ শ্রম কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর জোর সুপারিশ নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মেয়র এর বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
মোজ্জামেল হক ২০০১ সালে ৪ দলীয় ঐক্য জোট সরকারের ছত্রছায়ায় ২০০৫ সালে রেলওয়ের জায়গায় মুরগীর ফার্ম করলে মুরগী ফার্মের দুর্গন্ধে আমি সহ এলাকাবাসী মারত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বিআইডিসি রোডের বণিক সমিতির সভাপতির
মাধ্যমে আবেদন করলে খুলনা সিটি কর্পোরেশন গত ২১/০৬/২০০৫ সালে ৭ দিনের নোটিশে মুরগীর ফার্ম অন্যত্র স্থানান্তর করেছিলেন।
দীর্ঘ ১৮ বছর পর সেই পরিত্যক্ত মুরগীর ফার্মের কাঠামোতে বসতবাড়ী নির্মাণ করে আক্রোশমূলকভাবে আমার জানালা বন্ধ করে এই বৃদ্ধ বয়সে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে আমি সহ আমার পরিবারের উপর অমানবিক অত্যাচার চালাচ্ছে। মোজাম্মেল দূর্ধর্ষ, হিংস্র প্রকৃতির মানুষ।
আমি মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়টি ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা করার আবেদন করায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার বেলা ১ টায় আকস্মিকভাবে মোজাম্মেল হক তার স্ত্রী, বড় মেয়ে ও ছেলে ঝুঁড়ি, কোদাল ও বস্তা নিয়ে মারমুখি হয়ে আমার বসতঘর ও আমার দোকান ঘরের মাঝখানে সরকারী গলিপথের মাটি কেটে নেয় আর বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে জীবন নাশের হুমকি দিতে থাকে। আমি বিস্তারিত উল্লেখ করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ খুলনা জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর মান ইজ্জত রক্ষা ও জীবন বাঁচানোর নিরাপত্তা চেয়ে একটি আবেদন করি।
আমি ১৯৭৬ সালে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে চাকুরীর সুবাদে মিল কমিটিতে শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মিল কমিটির কমান্ডার,১৯৯৬সালে খুলনা শিল্পাঞ্চল ইউনিট কমান্ডে সহকারী কমান্ডার (সমবায়), ১৯৯৮ সালে ইউনিট কমান্ডের সদস্য সচিব, ২০০৬ সালে খালিশপুর থানা আওয়ামীলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক,২০১০ সালে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১ খুলনা শিল্পাঞ্চলের সমন্বয়কারী, ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ এর খুলনা মহানগরী কমিটির আহবায়ক হিসাবে দীর্ঘ ৪৭ বছর দায়িত্ব পালন করে তৎকালীন সময় এই জামাত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে খুলনাস্থ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে থেকে কাজ করেছি।
এমতাবস্থায়, আমার প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ তথা সরকারের নিকট আমার আকুল আবেদন বর্ণিত বিষয় সরজমিনে তদন্ত পুর্বক উহার সত্যতা ও বাস্তবতা নিরুপণ পুর্বক ন্যায় বিচারের মাধ্যমে বিপদমুক্ত করার প্রয়োজনীয় জরুরী ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা কে এম কবির।
Post Views: 251