শ্যামল দাস টিটু : বাংলাদেশের প্রায় ৯০% মানুষ মনেপ্রাণে প্রকৃত গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনের শাসন এবং ব্যাক্তি স্বাধীনতা চায় এবং এগুলোই মনেপ্রাণে লালন করে। কিন্তু তার প্রতিফলন ঘটাতে পারে না আমাদের দেশের জটিল সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার কারণে।
অধিকাংশ মানুষ এটা চায় এর মূল কারণ কি? মূল কারণ হলো এই ন্যুনতম ৮০% মানুষের কাছে কে এমপি , কে মন্ত্রী , কে প্রধানমন্ত্রী তার গুরুত্ব অনেক কম। কারণ তারা সকলেই যে যার মতো করে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে , বা সংসার চালায়। তারা কারোর কাছে যায় না এবং গেলেও তেমন কোন সাহায্য সহায়তা পায় না। তারা শুধু চায় সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকুক এবং কেউ যেন তাদের উপর অত্যাচার ও জুলুম না করতে পারে । এটাই তাদের মূল চাওয়া।যেমন একটা উদাহরণ দেই এখানে। আমাদের নড়াইল – ১ আসনে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে হয়তো ভোটার সর্বোচ্চ ২.৫০ লক্ষ। আর পরিবার হয়তো ১ লক্ষ্যের উপরে।
এই ৫ লক্ষ মানুষের মধ্যে কয়জন মানুষের নড়াইল -১ আসনের এমপি সাহেবকে দরকার হয় , বা কতজন এমপি মহোদয়ের কাছে যায় ? মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্ব বাদই দিলাম এখানে।আমার জানামতে, প্রতি ইউনিয়ন থেকে বড়জোর ১০০/১৫০ জন মানুষ যায় , যার মধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক স্বার্থেই যায়। আর কিছু মানুষ যায় বড় কোন ঝামেলায় পড়লে , অথবা বিশেষ কোন দরকার হলে।এই হিসেব অনুযায়ী, ১৯টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা থেকে বড়জোর ২০০০/৩০০০ মানুষ যায় এমপি সাহেবের কাছে।
এদের মধ্যে সরাসরি দল করার কারণে এবং এমপি সাহেবের সাথে গ্রুপ করার সুবাদে হয়তো প্রতি ইউনিয়ন থেকে ২৫/৩০ জন লাভবান হচ্ছে বা হয়েছে। তাহলে বলা যায়, এই আসনে সর্বোচ্চ ৫০০ মানুষ উপকৃত হচ্ছে বা হয়েছে দল ক্ষমতায় থাকার কারণে। এই ৫০০ জনের কাছে দল ক্ষমতায় আসাটা বেশী জরুরী। আর জরুরী দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং মূল ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের জন্য। এই সংখ্যা হবে হয়তো সর্বোচ্চ ২০০০ জনের মতো।
তাহলে মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো সর্বোচ্চ ২৫০০ জনের মতো। আর এই ২৫০০ জনের পাছেল আছে হয়তো আর ১০০০০ জন।তাহলে সরাসরি এবং আধা সরাসরি মিলে মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১২,৫০০ জনের মতো।১২,৫০০ জন সমান মোট জনসংখ্যা হবে হয়তো ৫০,০০০ জনের মতো।অর্থাৎ ৫০০,০০০ – ৫০,০০০ = ৪,৫০,০০০ জন মানুষ সরাসরি রাজনৈতিক কোন সুবিধা গ্রহণ করে না , বা দরকারও হয় না। এরা এদের মত করে জীবন যাপন করে।পুরো এই বিশ্লেষণের পর বলা যায়, দেশের ১০% মানুষ ডাইরেক্টলি এবং ইনডাইরেক্টলি রাজনীতির সুবিধার সাথে সম্পৃক্ত।
অতএব এদেশের ৯০% মানুষের কাছে কে এমপি, কে মন্ত্রী, কে প্রধানমন্ত্রী, তার চেয়ে তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কার আমলে সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনের শাসন কতোটা মজবুত এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কতটা ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পেরেছে। এই ৯০% মানুষের মনের চাহিদা পূরণ করার মত রাজনৈতিক দর্শন যেদিন পুরোপুরিভাবে গড়ে উঠবে রাজনৈতিক দল এবং নেতাদের মধ্যে, সেদিন এদেশ সত্যিকারার্থে সোনার বাংলায় পরিনত হবে।
কারণ আমাদের দেশের বর্তমান কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ, এক্সপোর্ট প্রোসিড এবং ফরেন রেমিট্যান্স যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে। হ্যা তবে এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার যে উন্নতি সাধন করেছে এবং বাকি প্রকল্পগুলো যদি যথাসময়ে শেষ করতে পারে, তাহলে আমাদেরকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না বলে আশা করা যায়।