রাজশাহীতে সাংবাদিকের উপর হামলাকারী বায়ো হার্বস ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) কর্তৃপক্ষ কি ঔষধ প্রশাসন এর আওতা মুক্ত ?

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজশাহী সারাদেশ স্বাস্থ্য

আমিনুর রহমান বাদশা : জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও অন-অনুমোদিত ভেজাল ঔষধ ধধংসসহ রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানায় মামলা হওয়ার পরেও স্বভাব বদলায়নি রাজশাহীর বায়ে হার্বস ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) কর্তৃপক্ষের। বরং পূর্বের তুলনায় নব্য উদ্দ্যামে চালিয়ে যাচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের বিবেচিত হওয়া ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাত।


বিজ্ঞাপন

কোম্পানির মালিক শহীদ আলী যেন ধরাকে সরাজ্ঞ্যান পরযন্ত করছেন না তিনি বাংলাদেশ জাতীয়  আয়ুর্বেদিক ফর্মুলারি কে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব ফরমুলায় ভিটামিন, গ্যাস্টিক, আলসার, কাশির, যৌন উত্তেজক ঔষধ সহ বিভিন্ন প্রকার কসমেটিক সামগ্রী  তৈরি ও বাজারজাত করছেন। এখানে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ যেন তার কাছে কোন বিষয় ই না। তিনি চলেন তার নিজস্ব  স্টাইলে সম্পুর্ন নিজের খেয়াল খুশিতে।


বিজ্ঞাপন

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান ও রাজশাহী জেলার দায়িত্বরত কর্মকর্তা যেন শহীদ আলীর জিগিরী দোস্ত। তার বর্তমান  কার্যক্রমে এটাই প্রমান করে।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, নগরীর টুলটুলি পাড়ায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ছোট একটি রাস্তার পাশে বায়োহার্বস আয়ুর্বেদিকের কারখানা। প্রতিদিন কোম্পানির ৫/৭টি গাড়ি রাস্তার উপরে রেখে তারা মালামাল উঠা-নামানোর কাজ করে।

এতে স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধা হয়।এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় বায়ো হার্বস ল্যাবরেটরীজে (আয়ু) এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সাংবাদিকদের  উপর চড়াও হয় এবং তাদের গাড়ি ভাংচুর সহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত  ও করে। এ ঘটনায় সাংবাদিক তানজিমুল হক বাদি হয়ে রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করেন।

রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, এ ঘটনায় সাংবাদিক তানজিমুল হক বাদী হয়ে কাশিয়াডাঙ্গা থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় ১৪ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।

পরে পুলিশ কারখানায় অভিযান চালিয়ে চার কর্মকর্তা-কর্মচারিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, হিমেল (২৭), তুষার (৩৪), নাসির উদ্দিন (৪৫) ও আনোয়ার হোসেন (২৮)। তারা সবাই বায়োহার্বস আয়ুর্বেদিক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারি।

একই দিনে অর্থাৎ ২ অক্টোবর ২০২২ তারিখে  একজন ভোক্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বায়েহার্বস আয়ুর্বেদিক ঔষধ কোম্পানির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় তারা প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মের অভিযোগে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও করেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী জেলার সহকারি পরিচালক মাসুম আলী আজকের দেশ ডটকম কে বলেন, এখানে চারটি ওষুধ উৎপাদনের অনুমোদনের মেয়াদ মার্চ ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল। এর পর সেটি নবায়ন করেনি। তবে তারা আবেদন করেছেন, আবেদন করে ই ওই ৪ টি ঔষধের উৎপাদ ও বাজারজাত করছেন এখনো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনের চিঠি ইস্যু হয় নাই ।

কিন্তু অনুমোদন না থাকলেও তারা ওষুধের পাশাপাশি হেয়ার অয়েল সহ নানারকম কসমেটিক সামগ্রীর অবৈধ উৎপাদন করে আসছে। এছাড়াও সেখানে ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন ক্যামিস্ট পাওয়া যায়নি। একজনকে নিয়োগ দেখানো হলেও সে ঢাকায় থাকে। কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ওষুধ তৈরী করা হচ্ছিল। তিনি আরও বলেন, কারখানার ২ লাখ টাকার জরিমানা করা হয়েছে।তারা সাথে সাথে সে অর্থ পরিষদ করেছে। এছাড়াও ওই সময়ে  অনুমোদন হীন উৎপাদিত বেশ কিছু ওষুধ ধংস করা হয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি সুত্রের দাবি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রজ্ঞ্যাপন এর স্মারক নং-ডিজিডিএ /২৯-০২/২৪১২। তারিখ ০৩/০২/২০২২ ইং অনুমোদিত বানিজ্যিক নাম ব্যাতিত অন-অনুমোদিত বানিজ্যিক নামে ঔষধ উৎপাদ ও বাজারজাত করায় মেসার্স বায়ো হার্বস আয়ুর্বেদিক হড়োগ্রাম পূর্বপাড়া, রাজপাড়া রাজশাহী কর্তৃক উৎপাদিত ও বাজারজাত কৃত অশ্বগন্ধা ( ডিএআর নাম্বার-আয়ু-১২৯-এ-০৪৫) এবং আমলকী রসায়ন ( ডিএআর নাম্বার- আয়ু-১২৯-এ-০৩১) নামীয় পদ দুটির রেজিষ্ট্রেশন সাময়িক বাতিল করা।যার স্মারক নং-ডিজিডিএ /আয়ু-১২৯/৮৪/১৯৫৮ তারিখ ৩০/০১/২০২২।
উক্ত প্রজ্ঞ্যাপনে সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষর করেন ০৩/০২/২০২২।

উক্ত কোম্পানি বায়ো তুলশী ও ভুই তুলশী  নামের একই ডিএআর নাম্বার ব্যাবহার করে একই কফ সিরাপে দুইটি বানিজ্যিক নাম ব্যাবহার করছে, যা ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ পরিপন্থী।

মাইসেক (চিরতা) ২৫০ মি,গ্রা, ১০০ টি ক্যাপসুলের ১ বক্স ক্যাপসুল মাত্র ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যার গেটাপ অনেকটা সেকলো-২০ মতো মাইসেক এর জেনারিক নাম চিরতা লিখলেও মাইসেক তৈরি কালে ওমিপ্রাজল এর কাচামাল ব্যাবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।


কাব ( কালমেঘ) নামে গ্যাস্টিক ও আলসারের ট্যাবলেট এর মধ্যে ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক নিষিদ্ধ রেনিটিডিন এর কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়েছে বলে ঔষধ শিল্পের সাথে জড়িত একটি সুত্রের দাবি । যার মুল্য নির্ধারণ করা আছে (১৫ গুন ৭ টি ট্যাবলেট) ১০৫ টি ২১০ টাকা কিন্তু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ টাকায়।কাব এর গেটাপ মেকাপ অনেকটা রেনিটিডিন এর মতো।

বায়োটিন প্লাস (দশমুলারিস্ট) ৪৫০ মিলি সিরাপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫ টাকায়। অলভিটা ( ফলারিস্ট) ৪৫০ মিলি সিরাপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫ টাকায়। কফ আউট ও বায়ো তুলশী বিক্রি হচ্ছে ১০০ মিলি সিরাপ ১২ থেকে ১৩ টাকার মধ্যে। লাইকোরিয়া (লিকোরিয়া) ৪৫০ মিলি সিরাপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫ টাকায়। এলার- জি নিল (নীমবাদ্য চুর্ণ) ক্যাপসুলে কেমিক্যাল ব্যাবহার করা হয়েছে। বায়োকুলি ( চন্দ্রনাসব) ৪৫০ মিলি সিরাপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪৫ টাকায়। আমালাকি রসায়ন ( আমলকি রসায়ন) ৪৫০ মিলি সিরাপ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

হাইলিভ ( কালোমেঘাসব) ৪এ০ মিলি সিরাপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ টাকায়। বায়ো -ক্যাল-ডিএস, প্লে-মি ও ট্রাই নামক ঔষধ সামগ্রীর বানিজ্যিক নাম, মোড়ক সামগ্রীর খসড়া অনুমোদন ও চুড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে ও রয়েছে যথেষ্ট সংশয়।  ঔষধের উৎপাদন লাইসেন্স নবায়ন, ঔষধের পদ নবায়ন, যেহেতু ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল তৈরি করা হয় সে ক্ষেত্রে মিক্স ড্রয়ার মেশিন, এসি থাকা বাধ্যতামূলক, টিএলসি মেশিন আছে কিনা ওই কোম্পানির এসব খতিয়ে দেখা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে কারণ এর সাথে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় জড়িত আছে ওতোপ্রোতো ভাবেই।

৪৪০ ভোল্ট এর বিদ্যুৎ লাইন নেওয়া বাধ্যতামূলক কারণ ক্যাপসুল ও ট্যাবলেট উতপাদন করতে হলে এসি থাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়া ফিনিশ প্রডাক্ট রুম, হার্বস রুম বা গোডাউন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল রুম, কতজন কেমিস্ট বা কবিরাজ ও হেকিম কর্মরত আছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক টেস্টিং ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে ঔষধ সামগ্রীর উৎপাদন হয় কি না এসব বিষয় নিয়ে যথেষ্ট  সংশয় রয়েছে।

তাই বায়ো হার্বস ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর ঔষধ তৈরির কারখানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তিনের অধিক কর্মকর্তার সমন্বয়ে নিরপেক্ষ  তদন্ত টিম গঠন করে আকস্মিক পরিদর্শন  করার দরকার বলে দাবি করেন সচেতন মহল।

২ অক্টোবর ২০২২ তারিখে এবিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক ও রাজশাহীর অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাঈম গোলদারের বক্তব্য জানতে চাইলে ওই সময় তিনি দেশের বাইরে থাকায় তিনি কোন প্রকার বক্তব্য দিতে অশ্বিকৃতি যানান।

বর্তমানে রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত আছেন পরিচালক (চ :দা) সফিকুল ইসলাম। বায়ো হার্বস ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধের উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিষয় টা তাকে অবগত করা হলে তিনি বিষয় টা দেখবেন বলে জানান। এসব বিষয়ে বায়ো হার্বস ল্যাবরেটরীজ (আয়ু) এর মালিক শহীদ আলীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি জানান, সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে তিনিও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পাল্ট মামলা করেছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আরও জানান তিনি ও নাকি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যলয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

মামলার বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যলয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মাসুম আলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আজকের দেশ ডটকম কে জানান, মামলা হলেতো তারা আদালতের নোটিশ পেতেন। মামলার বিষয় টা তিনি অবগত নন বলেও তিনি আরও জানান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *