নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্যের শিক্ষাগত সনদপত্র দিয়ে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় যাবত বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকুরী, অতঃপর অর্থ আত্মসাত করে প্রতারক উধাও– পিবিআই এর তদন্তে রহস্য উদঘাটন ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা হতে আসামী মোঃ হেলাল উদ্দিন (৩৫) কে গতকাল বুধবার ৭ জুন রাত অনুমান ১০ টা ৫ মিনিটের সময় গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)।
গত ২৯/০৯/২০২১ সালে জনৈক মোহাম্মদ গোলাম হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তানজিম প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ অফিসার ইনচার্জ, মোহাম্মদপুর থানা বরাবর এই মর্মে এজাহার দায়ের করেন যে, আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (২৮), পিতা: মোঃ আমিন মিয়া, মাতা: মোসা: রোকেয়া বেগম, সাং: চরমোতাহার, পোস্ট: মুজিবনগর, থানা: চরফ্যাশন, জেলা: ভোলা, স্থায়ী সাং: বড়শিবা, ওয়ার্ড নং-৭, পোস্ট: বড়শিবা, থানা: গলাচিপা, জেলা: পটুয়াখালী তানজিম প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ কোম্পানীতে গত ০১/০৯/২০১৮ সাল থেকে ০৯/০৫/২০২১ সাল পর্যন্ত অফিসার (সেলস এন্ড বিপনন) পদে কর্মরত ছিলেন।
উক্ত আসামী বাদীর প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত প্লাস্টিক সামগ্রী বিভিন্ন দোকান, অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে বিক্রিত মালামালের বিপরীতে তাদের নিকট থেকে সর্বমোট ১৯,২১,৫০০ (উনিশ লক্ষ একুশ হাজার পাঁচশত) টাকা গ্রহণ করে নির্ধারিত অফিসে জমা না করে উক্ত অর্থ আত্মসাত করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে অত্র মামলার বাদী বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও উক্ত আসামীর সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয় বিধায় তার কোম্পানীর পণ্যের বিক্রিত মালামালের টাকা উদ্ধার করতে পারে নাই।
বাদীর উক্ত এজাহারের প্রেক্ষিতে অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদপুর থানা মামলা রুজু করে এসআই (নিঃ) মোঃ শফিউল আলম-২ এর উপর তদন্তভার অর্পণ করেন। এসআই/ মোঃ শফিউল আলম-২, মোহাম্মদপুর থানা অত্র মামলার তদন্ত শেষে অত্র মামলার ০১নং আসামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (২৮) এর নাম ঠিকানা সঠিক না পেয়ে তাকে অব্যাহতির আবেদন সহ অত্র মামলার অপর আসামী ২। মোঃ মহিউদ্দিন (৩৯) এর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। বাদী উক্ত তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন। আদালত বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে অত্র মামলাটি পূণরায় তদন্তের জন্য পিবিআই, ঢাকা মেট্রো(উত্তর), ঢাকা কে নির্দেশ প্রদান করেন।
অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম, পিবিআই এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক-নির্দেশনায় পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) এর বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, বিপিএম-সেবা এর নিবিড় তদারকীতে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মাহমুদুল হাসান উক্ত মামলার বিষয়ে তদন্ত করে জানতে পারেন, আসামী মোঃ হেলাল উদ্দিন (৩৫) পিতা- মোঃ নাসির আহমেদ সরকার, মাতা-মোসা: জামিনা খাতুন, সাং-বড়শিবা, পোঃ ছোটশিবা, থানা-গলাচিপা, জেলা-পটুয়াখালি তানজিম প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ কোম্পানীতে নিজের প্রকৃত নাম পরিচয় গোপন করে জনৈক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর শিক্ষাগত সনদপত্র, জন্ম সনদ এবং বায়োডাটায় আসামী মোঃ হেলাল উদ্দিন তার নিজের ছবি সংযুক্তির মাধ্যমে তানজিম প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ এর অফিসার (সেলস এন্ড বিপনন) পদে যোগদানের জন্য আবেদন করে এবং গত ০১/০৯/২০১৮ সালে সে উক্ত পদের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। পরে আসামী মোঃ হেলাল উদ্দিন চাকুরীতে যোগদানের পর হতে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর নাম ধারণ করেই কোম্পানীর একজন অফিসার (সেলস এন্ড বিপনন) পদে কাজ করে আসছিল।
চাকরী করাকালীন সময়ে আসামী মোঃ হেলাল উদ্দিন বাদীর প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত প্লাস্টিক সামগ্রী বিভিন্ন দোকান, অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে বিক্রিত মালামালের বিপরীতে তাদের কাছ থেকে সর্বমোট ১৯,২১,৫০০ (উনিশ লক্ষ একুশ হাজার পাঁচশত) টাকা গ্রহণ করে নির্ধারিত অফিসে জমা না করে উক্ত টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে উক্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই/মাহমুদুল হাসান সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা হতে উক্ত আসামী মোঃ হেলাল উদ্দিন (৩৫) কে গতকাল বুধবার ৭ জুন রাত অনুমান ১০ টা ৫ মিনিটের সময় গ্রেফতার করে।
পিবিআই এর তদন্তে প্রকাশ পায়, উক্ত আসামী মোঃ হেলাল উদ্দিন অপরের শিক্ষাগত সনদপত্র, জন্ম সনদ, ইউনিয়ন পরিষদের সনদপত্র এবং বায়োডাটায় নিজের ছবি সংযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকুরী করে আসছিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় উক্ত আসামীর প্রকৃত নাম-ঠিকানা যাচাইসহ বাদী কর্তৃক মূল আসামীকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যার কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়েছে তিনি প্রকৃতপক্ষে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম । আসামী মোঃ হেলাল উদ্দিন তার স্কুল জীবনের সহপাঠি ছিলো। তিনি বর্তমানে চর মোতাহার আলিম মাদ্রাসা, চর ফ্যাশন, ভোলায় ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদে চাকুরী করছেন।
তারা পাশাপাশি এলাকায় বসবাস করার সুবাদে কৌশলে মোঃ হেলাল উদ্দিন তার বন্ধু মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এর অজ্ঞাতে তার শিক্ষাগত সনদপত্র, জন্ম সনদ, ইউনিয়ন পরিষদের সনদপত্র ও বায়োডাটার ফটোকপি সংগ্রহ করে রাখে এবং উক্ত কাগজাদি দিয়ে প্রথমে সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ কোম্পানীতে এবং পরবর্তীতে তানজিম প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ কোম্পানী সহ বিভিন্ন কোম্পানীতে চাকুরী করে আসছিল। উক্ত আসামীর বিরুদ্ধে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চাকুরী করে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে টাকা আত্মসাতসহ অপরের রূপ ধারনের অভিযোগ সংক্রান্তে সত্যতা পাওয়া গিয়েছে।