বিশেষ প্রতিবেদক : নিজেদের অপরাধের অন্ত নেই। হত্যা, ধর্ষণ, মানি লন্ডারিংসহ নানা অপরাধে দণ্ডিত আসামি তাদের অনেকেই। একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে গোপনে দেশ ছেড়েছেন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন দেশে নিয়েছেন রাজনৈতিক আশ্রয়। পালিয়ে যাওয়া এসব অপরাধীই এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীতি-নৈতিকতার ছবক দিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফেসবুক, ইউটিউবে একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেকে সুশীল হিসেবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছেন নিয়মিত। ধর্মীয়, সামাজিক অনুভূতিতে আঘাত করছেন মাঝেমধ্যেই। সরকারপ্রধানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, আবার কখনো ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কিংবা কোনো দিবস বা আইন নিয়ে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছেন অহরহই। বিভিন্ন দেশে থাকা এসব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে না পারার জন্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীসহ অনেকেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ভয়ংকর অপরাধীর বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ নেই। একে অপরের ওপর দায় চাপিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছেন তারা। যদিও বিদেশে থাকা এসব অপরাধীর বর্তমান এবং অতীত কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তাদের কাছে রয়েছে। কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট দেশকেও আমরা তাদের বিষয়গুলো যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারছি না। এসব ব্যর্থতার কারণেই তাদের রোখা সম্ভব হচ্ছে না। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাল্পনিক, বানোয়াট গল্প সাজিয়ে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে যাচ্ছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ’৭৫-এর আগেও দেশে দেশে অনেক গুজব তৈরি করা হয়েছিল। মাঝেমধ্যে সে রকম আশঙ্কাও দেখতে পাই আমরা। এখন ভিন্ন দেশ থেকে এসব প্রচার করা হচ্ছে। বিদেশে বসে তাদের অনেকেই সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় এমন ভয়ংকর তৎপরতা চালাচ্ছে। এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বহির্বিশ্বে। তাই আমাদের কর্তৃপক্ষের উচিত সমন্বিতভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করা।
সাইবার অপরাধীদের যত কালো অধ্যায়
টিটো রহমান : পুরো নাম মোস্তাফিজুর রহমান টিটো। ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার আসামি টিটো দিনাজপুর পৌরসভার ইটগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কারিগর আবদুস সালাম পিন্টুর ঘনিষ্ঠজন বলে দাবি করেন নিজেই। দেশের বিভিন্ন এলাকায় হওয়া একাধিক মামলার আসামি হয়ে কানাডা পালিয়ে গিয়ে নিয়েছেন রাজনৈতিক আশ্রয়। একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন, থাকেন শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া একটি ফ্ল্যাটে, পাশাপাশি সরকারের রিফিউজি ভাতা পান নিয়মিত। জীবনে কখনো সাংবাদিকতার ধারেকাছেও ছিলেন না। তবে আগের পরিচয় আড়াল করতে টিটো নিজেকে কানাডার কথিত নাগরিক টেলিভিশনের ‘সিইও’ বলে পরিচয় দেন। প্রবাসে থেকে এই নাগরিক টিভি নামে ইউটিউব ও ফেসবুকভিত্তিক পেজ খুলে চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারবিরোধী জঘন্য সব কর্মকা । টার্গেট করে দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নানা গুজব, মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার চালান। একপর্যায়ে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে টাকাপয়সা দাবি করেন। রফাদফা না হলেই আপলোড হতে থাকে তাদের তৈরি করা একের পর এক কল্পিত নোংরা কন্টেন্ট।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কথিত সাংবাদিক টিটোর প্রধান উদ্দেশ্য দেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে বহির্বিশ্বে প্রমাণ করা। ২০১৮ সালে সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার মাস্টারমাইন্ড এ টিটো। তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তার কাছে চাঁদা চাওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
নাজমুস সাকিব : কানাডায় বসে কথিত ‘নাগরিক টিভি’ নামের ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলে দিনরাত সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিথ্যাচার করেন। দেশে থাকতে ছিলেন শিবিরের সক্রিয় কর্মী। বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ পান নাজমুস সাকিব। তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি যোগযোগ রাখা সাকিবের মূল টার্গেট সোশ্যাল মিডিয়ায় বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো। জানা গেছে, নিউইয়র্ক ও লন্ডনে জামায়াত নেতা, যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর রেখে যাওয়া অর্থ তাকে পাঠানো হয় প্রতি মাসে। এ টাকা দিয়ে নাজমুস সাকিব গং নাগরিক টিভি নামের একটি আইপি টিভি খুলে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়ম করে। ধর্ষণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন ধারায় নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। দেশ ছাড়ার আগে ২০১১ সালে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় পাঁচ বছর বয়সী একটি শিশুকে ধর্ষণ করেছিলেন নাজমুস সাকিব। ধর্ষণের শিকার সেই ছোট্ট শিশুটি কথা বলার শক্তি হারিয়ে এখন বাকপ্রতিবন্ধী। ২০১১ সালে ঘটনাটি তোলপাড় হয়েছিল দেশজুড়ে। সে সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করলেও তিনি গা ঢাকা দেন। পাড়ি জমান আমেরিকায়। ওই ঘটনায় রাজধানীর সবুজবাগ থানায় একটি মামলা করেছিল শিশুর পরিবার। তদন্তে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়েছিল।
মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে সম্প্রতি সবজুবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ‘মামলাটি অনেক পুরনা। আমি থানায় নতুন। তবে যতটুকু যানি ওই মামলার তদন্ত শেষে শিশুটিকে ধর্ষণে জড়িত অভিযুক্ত করে নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।’
সবুজবাগ এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, শিশুটির পরিবার যে বাড়িতে থাকত এখন আর সে বাড়িতে নেই। ধর্ষণের ঘটনার বছর তিনেক পর ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায় পরিবারটি। কারণ ধর্ষণের অপবাদ সইতে পারছিল না নিরপরাধ পরিবারটি। স্থানীয় বাসিন্দা মোবাশ্বের হোসেন জানান, ‘শিশুটির পরিবার লোকলজ্জার কারণে শেষ পর্যন্ত এলাকাই ছেড়ে দিল। কারণ নাজমুস সাকিবের এ ধর্ষণের ঘটনা সবাই জানে।’ বর্তমানে রামপুরা টিভি ভবনের পেছনের গলির আমির উদ্দিনের একটি টিনশেডের বাড়িতে থাকে পরিবারটি। দুই রুমের ঘরটিতে দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে পরিবারটি কোনোমতে টিকে রয়েছে। সম্প্রতি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন ধর্ষণের শিকার শিশুটির পিতা।
পাশের রুমে বসে থাকা মেয়েটির দিকে ইশারা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের সুখ কেড়ে নিয়েছে ধর্ষক নাজমুস সাকিব। আমার সুস্থ মেয়েটি ওই ঘটনার ধকল সইতে না পেরে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ওই ঘটনার পর কোনো কথা বলতে পারে না। মাসখানেক চিকিৎসার পর এখন কোনোমতো বেঁচে আছে। কিন্তু শুধু ঘরের এক কোনায় বসে কান্না করে। মেয়ের এমন কষ্ট দেখে বুকটা ফাইট্টা যায়।’ তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, নাজমুস সাকিব আমার মেয়ের জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। তার বিচার চাই।
সেদিন যা ঘটেছিল : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনার সময় রাজধানীর বাসাবোর সবুজবাগ এলাকার ২৮ নম্বর মায়াকাননের পেছনে তিনটি বাড়ির পর একটি টিনশেডের ঘরে পরিবারের সঙ্গে থাকত শিশুটি। তার বাবা সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। ঘটনার দিন চকলেটের লোভ দেখিয়ে ফুটফুটে ছোট্ট শিশুটিকে ২৮ মায়াকাননে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান মাদকাসক্ত নাজমুস সাকিব। এরপর ছাদে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের একপর্যায়ে শিশুটিকে নিচতলার গ্যারেজে রেখে পালিয়ে যান নাজমুস সাকিব। ওই সময় বাড়ির কেয়ারটেকার বাচ্চু মিয়া শিশুটির কান্নার শব্দ শুনে এগিয়ে যান। তিনি শিশুটির করুণ অবস্থা দেখতে পান। তখন তার চিৎকারে জড়ো হন এলাকাবাসী। পরে শিশুটি পুরো ঘটনা জানান সবাইকে।
এ ঘটনার পর নাজমুস সাকিবের বাবা জলিলুল আজমসহ শিশুটির বাবা মিলে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেন। শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। প্রায় ২৮ দিন সেখানে চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে গেলেও শিশুটি হয়ে পড়ে বাকপ্রতিবন্ধী। ধর্ষণের শিকার, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে শিশুটি। বিষয়টি দ্রুত ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নাজমুস সাকিবের মামা আবু দায়ান ও বাবা জলিলুল আজম মেয়েটির পরিবারকে টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শিশুটির বাবা টাকা না নিয়ে বিচার চান। নাজমুস সাকিবের প্রভাবশালী বাবা ও মামার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সবুজবাগ থানায় ধর্ষণের মামলা করেন।
শুধু এ শিশুই নয়, নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে আরও অনেক ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত নাজমুস সাকিব নিজের খালাতো বোন ‘কাজী রুবাইয়া’কেও ধর্ষণ করেন। এরপর রুবাইয়া গর্ভবতী হয়ে পড়লে পরিবারের চাপে তাকে বিয়ে করেন তিনি। নিজ এলাকাতেই একাধিক যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আছে নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে। খিলগাঁও, সবুজবাগ এবং মতিঝিল থানায় রয়েছে একাধিক মামলা এবং সাধারণ ডায়েরি।
নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ধর্ষণের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি থানায় নতুন এসেছি। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার কথা থানার রেকর্ডে আছে। আমি এখন বাইরে আছি, বিষয়টি তদন্তাধীন। পরে জানাতে পারব।
খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুকুল আলম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে (নাজমুস সাকিব) ধর্ষণের মামলার কথা শুনেছি। আমি থানায় নতুন। পুরনো মামলা। খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাজমুস সাকিবের বাসাবোর বাড়ির ভাড়াটিয়া কুমিল্লার দাউদকান্দির রেজাউল করিমের স্ত্রীকেও দলবেঁধে ধর্ষণ করেছিল নাজমুস সাকিব ও তার দল। ২০১০ সালের সেই ঘটনার পর এলাকা ছাড়েন ওই স্বামী-স্ত্রী। লোকলজ্জার ভয়ে সেদিন মামলা করেননি, নীরবে বাড়ি ছেড়েছিলেন তারা। সেই রেজাউল এখন মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, নাজমুস সাকিবের শাস্তি চাই। খোঁজ নিয়ে জেনেছি নাজমুস সাকিব এখন নাকি আমেরিকায় গিয়ে ইউটিউবে কীসের শো করে। তবে সেদিনের কথা এখন আর মনে করতে চাই না। তার যৌন নির্যাতনের কথা এখনো মনে হলে আমার স্ত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আমরা সেই কষ্ট বুকে নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি।
পিনাকী ভট্টাচার্য : রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা পিনাকী ভট্টাচার্য বগুড়া জিলা স্কুলের প্রয়াত শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্যামল ভট্টাচার্যের বড় ছেলে। একসময় আওয়ামী ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, নিয়েছেন নানান সুযোগ-সুবিধা। তবে ২০১৮ সাল থেকে হঠাৎ করে সুশীল সাজতে শুরু করা এই চিকিৎসক সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যু এবং দিবসকে ঘিরে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার পাশাপাশি ছড়াতে থাকেন একের পর এক গুজব। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে করেন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য।ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া এই ব্যক্তি ২০২০ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান। যাওয়ার আগে তিনি নিজেই গুম হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়ান।
পিনাকী ভট্টাচার্য ধর্মীয় উসকানি ছড়াতে ইউটিউবে তার নিজ চ্যানেলে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিধান নিয়ে কট্টর সমালোচনা করেন। গো-হত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিদ্রুপ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উদযাপন বর্জনের ডাক দেওয়ার মতো বিতর্কিত কাজ করা যেন তার ‘রুটিন ওয়ার্ক’। ২০০৮ সালে সরকার বৈদেশিক অর্থায়নে সারা দেশে কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছিল। সে সময় টেন্ডারের মাধ্যমে দেশের যে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওষুধ তৈরির কাজটি পায় সে প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার ছিলেন পিনাকী ভট্টাচার্য। পুরো প্রক্রিয়া দেখভালের দায়িত্ব ছিল তার। ক্যাপসুলে কালাজ্বরের অন্যতম উপাদান মিল্টেফস বা মিল্টেফসিন দেওয়ার কথা থাকলেও শুধু ময়দা দিয়ে ওষুধ তৈরি করা হয়, এ জালিয়াতির নেপথ্যে ছিলেন পিনাকী। সে সময় বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
পিনাকী ২০১৮ সালে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানের কঠোর সমালোচনা করে মাদক কারবারিদের সমর্থন জোগান। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে গুজব ছড়িয়ে স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের উসকানি দিয়ে তাদের জীবন হুমকির মুখে ফেলারও অন্যতম কুশীলব তিনি। বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে তলব করে। এরপরই স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে গিয়ে গুম হওয়ার নাটক সাজানোর চেষ্টা করেন। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি অবস্থায় গোপনে সীমান্ত পার হয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকক যান এবং সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে ফ্রান্সে পালিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। বর্তমানে ফ্রান্সে বসে তিনি ধর্ম, দেশের কৃষ্টি-কালচার, সরকার, সেনাবাহিনী, বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এমনকি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতের মতো বিষয়গুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছেন।
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজের লেখা ‘ভগবানের সহিত কথোপকথন’ সিরিজে সৃষ্টিকর্তাকে নিয়েও রসিকতা করেন পিনাকী। এ ছাড়া ব্লগার আসিফের ওপর হামলা ও অভিজিৎ রায়কে হত্যার পক্ষে কথিত যুক্তি তুলে ধরেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি বিভাগ গত বছরের ১৫ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় পিনাকী ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। এদিকে, ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, বর্তমানে ঢাকায় দুই থেকে আড়াই হাজার সাইবার আইনের মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে ৫ থেকে ৭ শতাংশ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্র, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিষোদ্গার এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানো। গত তিন মাসে ১০০টি সাইবার মামলার সাজা হয়েছে। এবং ২০০টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। যা এ যাবৎকালের রেকর্ড। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন এসব মামলার সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর হওয়ায় আদালত আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো আদেশ দেননি। তবে বিষয়টিকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক মনজুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশ সদর দফতর সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত মামলারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমাদের কাজ চলমান রয়েছে।