নিজস্ব প্রতিবেদক : ইরাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বাংলাদেশী এক যুবককে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা জেলা। তাদেরকে বাংলাদেশের বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ভিকটিম ইরাক প্রবাসী মোসলেম মোল্লা নবাবগঞ্জ থানার দড়িকান্দা গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে মোসলেম মোল্লা (৩০)। সে ২০১৬ সালে জীবিকার তাগিদে কাজের উদ্দশ্যে ইরাক যায়। ইরাকে অবস্থানকালে আসামী মোঃ সেলিম মিয়া, পিতা-মোঃ দিলু মিয়া, সাং-বিরাসার, থানা+জেলা-বি-বাড়িয়া, এবং শামীম, পিতা-অজ্ঞাতদ্বয়সহ আরো কয়েকজন অজ্ঞাতনামা আসামী অভিযোগকারীর ইরাক প্রবাসী ছেলে মোসলেম মোল্লাকে কাজের কথা বলে ইরাকে তার বর্তমান কর্মস্থল থেকে অন্যত্র অপহরন করে নিয়ে গিয়ে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের ইমো অ্যাপের মাধ্যমে কল দিয়ে সাত লক্ষ টাকা মুক্তিপন হিসেবে দাবি করে অন্যথায় তার ছেলেকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়।
ভিকটিমের মাতা খতেজা বেগম তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্য আসামীগন কর্তৃক ইমো অ্যাপের মাধ্যমে প্রদত্ত নবাবগঞ্জ থানাধীন পাড়াগ্রাম বাজার হতে ১২ (বার) টি বিকাশ নাম্বারে ২৬ (ছাব্বিশ) বারে গত ২৮/০১/২১ খ্রিঃ তারিখ, ৩১/০১/২১ এবং ০২/০২/২১, মোট ছয় লক্ষ টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে আসামীগন ভিকটিমকে মুক্তি না দিয়ে পুনঃরায় তার মায়ের নিকট তিন লক্ষ টাকা দাবি করে।
এই ঘটনায় ভিকটিমের মাতা খতেজা বেগম বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানার মামলা নং ০৪, তারিখঃ ০১/০৩/২০২১ , ধারা- ৩৮৫ পেনাল কোড দায়ের করলে নবাবগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে পুলিশ হেঃ কোঃ এর নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় এবং পিবিআই ঢাকা জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার এর সার্বিক সহযোগিতায় এসআই (নিঃ) একেএম সামসুল আলম এর নেতৃত্বে পিবিআই ঢাকার চৌকস টিম গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৬ অক্টোবর ২০২১ , ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২ , এবং ১৪ আগষ্ট ও ২৩ আগষ্ট বাংলাদেশের বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনা থেকে অভিযান পরিচালনা করে।
উক্ত অভিযান পরিচালনা কালে, আলী হোসেন (৪৯) পিতা-মৃত আঃ জব্বার ব্যপারী, সাং-দক্ষিন নন্দনপট্টি, থানা-গৌরনদী, জেলা-বরিশাল, মোঃ শামীম(২৫), পিতা-সুলতান চৌকিদা, সাং-পেটুয়াজুরি উত্তরপাড়া, থানা-বিজয়নগর, জেলা-ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া, শিরিন সুলতানা (৩৫), স্বামী- আনোয়ার হোসেন, সাং-প্রহলাদপুর, বাগমার বাড়ি, থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুর, মোহাম্মদ ঘরামী (৫১), পিতা-মৃত হেলাল উদ্দিন ঘরামী, সাং-নন্দনপট্টি, থানা-গৌরনদী, জেলা-বরিশাল, রবিউল ঘরামী(২৪), পিতা- ইয়াকুব ঘরামী, সাং-নন্দনপট্টি, রাজাপুর বাজার, থানা-গৌরনদী, জেলা-বরিশাল, শাহিদা বেগম (৫২), স্বামী- মোঃ নূর ইসলাম, সাং-বাগবাড়ি পঞ্চসার, থানা-মুন্সীগঞ্জ সদর, জেলা-মুন্সীগঞ্জ, সাহনাজ আক্তার লিপি (৩৮), স্বামী- দাদন মিয়া, সাং-কুড়েরপাড় গোপচর, থানা-নারায়নগঞ্জ সদর, জেলা-নারায়নগঞ্জ এবং মোঃ আকবর সরদার (৫৫), পিতা মৃত-আছালত সরদার,সাং-নিত্যান্দপুর, থানা-মোহাম্মদপুর, জেলা-মাগুরা গ্রেফতার করেন।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ইরাকে অবস্থান কালে ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসের ২৩ তারিখ সেলিম মিয়া নামের একজনের সাথে ভিকটিমের পরিচয় হয়। সে ভিকটিমকে ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে আসামী আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর, সাব্বির দের হাতে তুলে দেয়।
ভিকটিম মোসলেম কে নিয়ে আসামীরা একটি আবদ্ধ রুমে আটক করে ভিকটিমের সাথে থাকা ২০০০ ইউএস ডলার বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২ লক্ষ টাকা ও একটি ১,৫০,০০০ টাকা মূল্যের আইফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভিকটিমকে নির্যাতন করতে থাকে।
তিন দিন ধরে নির্মম, বর্বর নির্যাতনের পর সেই নির্যাতনের দৃশ্য অ্যান্ডরয়েড মোবাইল ফোনের ইমো অ্যাপের মাধ্যমে লাইভ ভিডিও কলে ভিকটিমের মা খতেজা বেগমকে দেখায় এবং মোট ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে।
ভিকটিমের মা খতেজা বেগম ছেলের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আসামীদের পাঠানো ১২ টি বিকাশ নাম্বারে ২৬ টি ট্রাঞ্জেকশনের মাধ্যমে মোট ছয় লক্ষ টাকা প্রদান করে। আসামী আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর, সাব্বিরগন ইরাকে অবস্থান করলেও বাংলাদশে তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মুক্তিপণের টাকা বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকান ও নিজেদের পারসোনাল বিকাশ নাম্বার থেকে ক্যাশ আউট করে নেয়। শাহনেওয়াজ অপহরণ চক্রের দলনেতা বলে গ্রেফতারকৃতরা জানান।
গ্রেফতারকৃত ৮ জন আসামীকে আদালতে সোপর্দ করা হলে ৬ জন ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।
উল্লেখিত আসামীদের ফৌঃকাঃবিঃ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে প্রকাশিত ইরাকে অবস্থানকারী অত্র মামলার ঘটনার সহিত জড়িত আসামী, আনোয়ার, (গাজীপুর), মনির, (বরিশাল), রুহুল আমিন,(বরিশাল), সাব্বির (মুন্সীগঞ্জ), শাহনেওয়াজ (খুলনা ডুমুরিয়া), হাসিবুর (মাগুরা), এবং সোহাগ (নারায়ণগঞ্জ) সনাক্ত করা হয়।