শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স: দুদক

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি দমন কমিশন শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। রোববার মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ‘দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবা : দুর্নীতির অভিযোগের প্রকৃতি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন একটি শক্তিশালী আইন। তবে এই আইনটি সম্পর্কে হয়তো সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ সঠিকভাবে অবহিত নন। এই আইনটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে দুর্নীতি করার দুঃসাহস কেউ দেখাবে না। দুর্নীতি ও দারিদ্র মানবসভ্যতার শুরু থেকেই বিদ্যমান ছিল। দারিদ্রের সাথে দুর্নীতিরও সর্ম্পক রয়েছে। দারিদ্র এবং দুর্নীতিকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হয়তো সম্ভব নয়। তবে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, সরকারি পরিষেবা প্রদানে দুর্নীতি, হয়রানি এবং দীর্ঘসূত্রিতার নানা অভিযোগ কমিশনে আসে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি ধারণা প্রদানের জন্য এজাতীয় সভা করা হচ্ছে। যাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহ নিজ থেকেই একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে জনমনে উদ্ভূত অভিযোগসমূহ নিরসণের একটি প্রক্রিয়া চিহ্নিত করতে পারে এবং সে মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

‘বিগত ২ বছরে কমিশনের হটলাইনসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রায় ৪০ লাখ অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে এসেছে। এতো অভিযোগ কিসের ইঙ্গিত বহন করে? আমাদের মনে হয়, সরকারি পরিষেবা প্রদানে কোথাও না কোথাও সরকারি কর্মকর্তাদের গাফিলতি বা অপারগতা বা অক্ষমতা রয়েছে। এট সহ্য করা হবে না।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা সবাই জনগণের করের অর্থে বেতন পাই, তাদের সেবা প্রদান করা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্বও। এটা আমরা সবাই মনে রাখবো।

উন্মুক্ত আলোচনার জন্য জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, নিঃসংকোচ চিত্তে আপনারা কথা বলবেন। এরপর জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্যের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সকলে আইন মেনে চললে কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ নেই। কেননা আইন তৈরি করা হয় মানার জন্য, প্রয়োগের জন্য নয়। নৈতিকতাবিহীন উন্নয়ন কখনই টেকসই হতে পারে না। আমরা উন্নয়ন চাই, দারিদ্র বিমোচন চাই, তবে তা হতে দুর্নীতিমুক্ত।

তিনি বলেন, দুর্নীতির অনেক কারণ রয়েছে, তবে সরকারি কর্মকর্তাদের চেয়ারপ্রীতিও দুর্নীতির অন্যতম কারণ। সরকারি কর্মকর্তাদের মনে রাখতে হবে, দুর্নীতি একটি ফৌজধারী অপরাধ এবং ফৌজধারী অপরাধ কখনই তামাদি হয় না। দেশটি আমার এই কথা আমাদের সকলের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।

দুদক চেয়ারম্যান একজন কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, শিশু ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত যুগোপযোগী ও সময়ের দাবি, সরকার বিষয়টি পর্যালোচনা করতে পারে।

তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা নির্ভয়ে সততার সাথে কাজ করবেন। কেউ আপনাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করলে দুদক সেগুলো খতিয়ে দেখবে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে সরকারি কর্মকর্তার মিথ্যা অভিযোগ প্রদানের বিষয়ে শাস্তির বিধান রয়েছে এবং ইতোমধ্যে মিথ্যা অভিযোগ প্রদানের বিষয়ে কমিশন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করছে।

আলোচনা সভা শেষে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত সততা স্টোর উদ্বোধন করেন।

এসময় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ভয় নয় বরং ভালবাসা দিয়ে জনগণের মন জয় করতে হবে। পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাদের তিনি নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করতে বলেন। পুলিশের দু/একজন কর্মকর্তাদের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীর বদনাম হতে পারে না। পুলিশ জনগণের মঙ্গলের জন্য অনেক ভাল করছে যার অনেক দৃষ্টান্তও রয়েছে।

স্থানীয় জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন এর সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা শিশু কর্মকর্তা প্রমুখ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *