বিশেষ প্রতিবেদন : সিলেটে শুরু হয়েছে চারদিনব্যাপী ‘১১তম বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ ডায়লগ’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন মাত্রায় নিয়ে যেতে উভয় দেশকে একযোগে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন দুই দেশের বক্তারা। এই সংলাপ উভয় দেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদারে ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন দুই দেশের অতিথিরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর, বিকাল ৪টায় নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে আয়োজিত এই সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ভারতের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ভিনসেন্ট পালা, সাবেক সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আরেফিন।
‘একটি ব্যাপক ও পারস্পারিক উপকারী অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন পারস্পারিক সম্পর্কযুক্ত। তাই পারস্পারিক ভাগ্য উন্নয়নে উভয় দেশকে একসাথে কাজ করতে হবে। তিনি জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অংশ নেওয়ার সুযোগ এবং পি-২০ পার্লামেন্টারি স্পিকার্স সামিট আয়োজনের জন্য ভারতের প্রশংসা করেন। স্পিকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দুই দেশের সংসদ এবং নারী আইনপ্রণেতাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি ও তথ্য-প্রযুক্তি খাতে পারস্পারিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন।
সভাপতির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসম্পূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এখন ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের জিডিপি এখন ৪৬০ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক যাচ্ছে ভারতে। যা ভারতের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন তার বক্তব্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, উন্নত যোগাযোগ, জ্বালানি খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, পানি বণ্টন সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ আরও জোরদার করার তাগিদ দেন।
সংলাপে ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত দুই দেশের চমৎকার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিদ্যমান পারস্পারিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দুই পক্ষের মধ্যে নানা উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, সীমান্ত পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি না দিয়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
ভারতের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ভিনসেন্ট পালা বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক শুধু দুই দেশের সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ সম্পর্ক দুই দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের মধ্যকার আন্তরিকতা পর্যন্ত ব্যাপৃত।
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও প্রতিরক্ষা জোরদারের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশকে খুব কাছের বন্ধু মনে করে। যার প্রমাণ জি-২০ সম্মেলনে ভারত বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় এবং সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন।
শুক্রবার সংলাপের দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আয়োজিত এই সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে ৬ জন মন্ত্রী, ২০ জন সংসদ সদস্য জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। আর সংলাপে অংশ নিতে ভারত থেকে এসেছেন ১৪০ জনের প্রতিনিধি দল।