রাজধানীর  মিরপুরে সরকারি ইউনানী-আয়ুর্বেদিক কলেজে অবৈধ সনদে চাকরি করছেন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার দত্ত !

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী স্বাস্থ্য

রাজধানীর  মিরপুরের  সরকারি ইউনানী-আয়ুর্বেদিক কলেজেের অবৈধ  অধ্যক্ষ স্বপন কুমার দত্ত।


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের অধিনে ঢাকার মিরপুরস্থ সরকারি ইউনানী – আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে দেশীয় চিকিৎসা উন্নয়ন প্রকল্পে ১৯৯১ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রভাষক (আয়ুর্বেদিক) পদে যোগ্যতা চাওয়া হয়েছিল: “(ক) কোন অনুমোদিত কলেজ থেকে আয়ুর্বেদিক মেডিসিনে স্নাতক পাস, (খ) কোন অনুমোদিত কলেজ হতে আয়ুর্বেদিক ডিপ্লোমা এবং তৎসহ স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিসহ কমপক্ষে তিন বছরের শাস্ত্রীয় বিষয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, (গ) কোন অনুমোদিত কলেজ হতে আয়ুর্বেদিক ডিপ্লোমা এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের সনদ পত্রসহ শাস্ত্রীয় বিষয়ে তিন বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ”


বিজ্ঞাপন

অথচ স্বপন কুমার দত্ত প্রভাষক (আয়ুর্বেদিক) পদে জাল শিক্ষা সনদ ও অভিজ্ঞতার সনদে আবেদন করে সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে নিয়োগ প্রাপ্ত হন এবং ২৭ জুলাই ১৯৯২ সাল থেকে দীর্ঘ ৩১ বছর যাবত চাকুরী করছেন। তিনি বিদ্যমান নিয়ম নীতি ভংগ করে অস্থায়ী রাজস্ব খাতের ৯ম গ্রেডের জুনিয়র প্রভাষক হয়েও অনৈতিকভাবে ২০১৯ সালে উক্ত কলেজের স্থায়ী রাজস্ব খাতের ৪র্থ গ্রেডের অধ্যক্ষ পদটি অবৈধ ভাবে দখল করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে,অধ্যক্ষ স্বপন কুমার দত্ত কর্তৃক সংগ্রহকৃত জাল সনদ সমুহ যথাক্রমে,   (ক) ৪ বছর ছয় মাস মেয়াদী আয়ুর্বেদিক ডিপ্লোমা (খ) ৪ বছর ৬ মাস মেয়াদি হোমিওপ্যাথিক বোর্ড থেকে হোমিও ডিপ্লোমা (গ) সাংস্কৃতিক ও পালি শিক্ষা বোর্ড থেকে ৩ বছর মেয়াদি কাব্য তীর্থ (ঘ) এম কম (হিসাব বিঞ্জান)।
ভর্তির সেশন উল্লেখিত সনদ সমূহ অর্জনের জন্য তিনি একই সময় (১৯৮৪-৮৫ সেশনে) ভিন্ন ভিন্ন বোর্ড/ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বপন কুমার দত্ত একই সময়ে নিয়মিত ছাত্র হিসাবে উল্লেখিত চারটি কোর্সর ৭৫% হাজিরা দেখিয়েছেন যাহা বাস্তবে অসম্ভব। স্বপন কুমার দত্ত কর্তৃক অর্থ দিয়ে কেনা জাল আয়ুর্বেদিক ডিপ্লোমা সনদে সরকারি চাকুরী নেওয়া সম্পুর্ন অবৈধ।
নূর মজিদ আয়ুর্বেদিক কলেজ থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতার সনদটিও সঠিক নয়।

কারন তিনি আয়ুর্বেদিক ডিপ্লোমা সনদ প্রাপ্ত হলেন ২৯/১১/১৯৮৮ সালে। নিয়মানুযায়ী তিনি ৬ মাস ইন্টার্নি শেষ করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক (কবিরাজ) হিসাবে রেজিষ্ট্রেশন পেলেন জুন ১৯৮৯ সালে। ১৯৮৯ সালের পরে থেকে শিক্ষক বা চিকিৎসক হিসাবে অভিজ্ঞতার সনদ নেওয়া যায়।

কিন্তু স্বপন কুমার দত্ত শিক্ষক হিসেবে চিকিৎসক রেজিষ্ট্রেশন পাওয়ার পূর্বেই অবৈধ ৩ (তিন) বছরের অভিজ্ঞতার সনদ নিলেন ১/১২/১৯৮৮ থেকে ২৫/৭/১৯৯১ তারিখ পর্যন্ত।নিয়ম অনুযায়ী তার অভিজ্ঞতার সনদ নিতে পারে চিকিৎসক রেজিষ্ট্রেশন পাওয়ার পর অর্থাৎ জুন ১৯৮৯ সালের পর থেকে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তার আবেদনের পূর্বদিন পর্যন্ত শিক্ষক হিসাবে অভিজ্ঞতা হয় মাত্র দুই বছর। কিন্ত তিনি ৩ (তিন) বছরের অবৈধ শিক্ষক হিসাবে অভিজ্ঞতার সনদ জমা দিয়ে সরকারি চাকুরী নেন যা অবৈধ।

স্বপন কুমার দত্ত অবৈধ ভাবে চকুরীতে যোগদানের পর নিয়ম বহির্ভুত ভাবে পদের নাম পরিবর্তন করেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রকল্পে চাকুরীতে যোগদানকৃত পদ চাকুরী স্থায়ী না হওয়া পর্যন্ত পদের নাম পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু স্বপন কুমার চাকুরী স্থায়ী হওয়ার পুর্বেই অবৈধ ভাবে তিন বার পদের নাম পরিবর্তন করেন।

প্রকল্পে নিয়োগের সময় পদের নাম ছিল প্রভাষক (আয়ুর্বেদিক), প্রকল্প থেকে অস্থায়ী রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সময় পদের নাম পরিবর্তন করে প্রভাষক (আয়ুর্বেদিক) এর পরিবর্তে প্রভাষক ( গাইনোকলজী) করেন এবং চাকরি স্থায়ী করনের সময় পদের নাম পরিবর্তন করে প্রভাষক (গাইনোকলজী) এর পরিবর্তে প্রভাষক, মেডিসিন বিভাগ( আয়ুর্বেদ) করেন।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ।

স্বপন কুমার দত্ত অবৈধ আয়ুর্বেদিক ডিপ্লোমা এবং অবৈধ শিক্ষকতার অভিজ্ঞাতার সনদ দিয়ে চাকুরি নেবার পর আয়ুর্বেদিক ডিগ্রীধারী না হয়েও রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের সরকারি শর্ত ভংগ করে উচ্চতর স্কেলে বেতন নিয়ে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন।

সম্প্রতি স্বপন কুমার দত্ত প্রতিষ্ঠানের ১টি পাজেরো জীপ গাড়ি এবং ১ টি মিনিবাস উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বহিরাগত বেসরকারি অদক্ষ ২ জন ড্রাইভার এর মাধ্যমে ঢাকার বাহিরে কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ও তার নিজস্ব অনুগত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে যায় এবং ঢাকায় ফেরার পথে রাস্তায় মিনিবাসটি মারাত্মক দূর্ঘটনায় পতিত হয় এবং বাস দূর্ঘটনায় অনেক ছাত্র – ছাত্রী ও কর্মচারী মারাত্মক আহত হয় এবং মিনিবাসটি দূর্ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ফলে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়।

কলেজের সরকারি জীপ গাড়িটি পারিবারিক কাজে ব্যাবহার করেন এবং প্রতিদিন স্বপন কুমার দত্তের স্ত্রীকে মহাখালী স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভবন সংলগ্ন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ”সাইকের” কার্যালয়ে আনা নেওয়ার কাজে ব্যাবহার করেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এবং উক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইকের সিসি ক্যামেরার রেকর্ড পরীক্ষা করলে তার সত্যতা পাওয়া যাবে।

এছাড়াও তিনি সিনিয়রদের বাদ দিয়ে ২০১৯ সালে ”অর্থের জোরে” ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ দখল করে দীর্ঘ চার বছর ধরে ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করে সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজটি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল দাবি করছেন।

উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার দত্ত’র বক্তব্য নেয়ার জন্যে তার ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছে  এবং ক্ষুদ্র  বার্তা দিয়েও কোন প্রকার সাড়া পাওয়া যায়নি। যেকারনে তার কোন প্রকার  বক্তব্য প্রকাশ করা সম্ভব হল না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *